নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ জুন, ২০১৬ ০০:৪২

অবশেষে চালু হচ্ছে এমসি কলেজের সেই ছাত্রাবাস

২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের জের ধরে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাস। এতে তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭০টি কক্ষ। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর প্রচেষ্টায় নাশকতার কিছুদিনের মধ্যেই পুরোনো আদলে পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় ছাত্রাবাসের।

পুনর্নির্মাণের পর ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রাবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়। তবে উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এতোদিন ছাত্রাবাসে তোলা হয়নি শিক্ষার্থী।

তবে অতি সম্প্রতি ছাত্রাবাসটি আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছ থেকে গত শনিবার ছাত্রাবাসটি গ্রহণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এখন ছাত্রাবাসে আবাসিক শিক্ষার্থী নিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ।

পুণর্নির্মানের পর প্রায় ২০ মাস ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় এই ছাত্রাবাসাটি এখন হয়ে ওঠেছে অনেকটা 'পোকামাকড়ের ঘরবসতি'। বারান্দায় গরু, ছাগলের অবাধ বিচরণ। কক্ষগুলোর দরজায় তালা। কিন্তু কিছু জানালা খোলা, কোনোটির কাচ ভাঙা।  আসবাবপত্রগুলো সবই নতুন, ব্যবহার না হওয়ায় সেখানে মাকড়সার জাল বিস্তার করেছে।

কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ জানিয়েছেন, শিগগরই  ছাত্রাবাসে আবাসিক শিক্ষার্থী নিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। আর ঈদের পরপরই ছাত্রাবাস চালু করা হবে।

সিলেট নগরের টিলাগড়ে টিলাঘেরা এলাকায় এমসি কলেজের অবস্থান। শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশ চন্দ্র রায়ের পিতামহ মুরারিচাঁদের (এমসি) নামানুসারে ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এমসি কলেজ। ১৯২১ সালে কলেজের পাশে নির্মিত হয় ছাত্রাবাস। ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যশৈলীর ‘সেমিপাকা আসাম’ কাঠামোয় টিন, কাঠ আর আধা পাকা দেয়ালে নির্মিত ছাত্রাবাস ভবনগুলো ছিল দর্শনীয়। ২০১২ সালের ৮ জুলাই রাতে ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে আগুনে পোড়ানো হয় ছাত্রাবাসের তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ।

এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। চার দিন পর ১২ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি ছাত্র থাকাকালে ১৯৬২ সালে ওই ছাত্রাবাসের প্রথম ব্লকের একটি কক্ষে থাকতেন। পরিদর্শনের সময় তিনি ওই কক্ষে ছুটে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের পক্ষ থেকে তখন দাবি উঠেছিল আগের কাঠামোয় পুনর্নির্মাণের।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে আগুনে পোড়া তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়। ১৪ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রাবাস উদ্বোধন করেছিলেন।

শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রাবাসের সব কটি কক্ষ বন্ধ থাকায় ভেতরে আসবাবপত্রে মাকড়সার জাল বিস্তার করেছে। কক্ষগুলোর দরজা ও জানালার অন্তত ১৩টি স্থানে ছিল ঢিল ছোড়ার চিহ্ন। রাতে মাদকসেবীদের আনাগোনা চলে সেখানে।

অব্যবহৃত থাকায় এমন অবস্থা হয়েছিল জানিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ বলেন, ছাত্রাবাসটি উদ্বোধন করা হলেও বসবাসের উপযোগী করার কিছু কাজ বাকি ছিল। ঈদের পরপরই নীতিমালা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষ করে আবাসিক শিক্ষার্থী নেওয়া হবে। ছাত্রাবাসের ছয়টি ব্লকে মোট ২৪৪ জন ছাত্রকে আবাসনের সুযোগ দেওয়া হবে।

প্রায় ২০ মাস অব্যবহৃত পড়ে থাকার কারণ সম্পর্কে ছাত্রাবাস নির্মাণ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম বলেন, গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রাবাসটি চালু করতে পারছিল না কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি গ্যাস বিল পরিশোধ করায় এটি চালু হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত