নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ মার্চ, ২০১৫ ১৮:৪৭

অনেক জল ঘোলা করে অবশেষে সমঝোতায় শাবি ছাত্রলীগ

যত নেতা তত গ্রুপ- শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সম্পর্কে এমন একটা কথা প্রচলিত আছে। নেতারাও অনেক সময় ঠিকঠাক বলতে পারেন না বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গ্রুপ আসলে কতটি? ৮/১০ টির মতো গ্রুপের কথা বলে থাকেন অনেকে। এইসব গ্রুপ-উপগ্রুপগুলোর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই লেগে থাকতো সংঘাত-সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা।

শাবি ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে প্রাণ হারাতে হয়েছে নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাতলীগ কর্মীরা। গত কয়েকবছরে ছাত্রলীগের সংঘাত-হামলায় কতো নেতাকর্মী যে পঙ্গু হয়েছেন তার ইয়াত্তা নেই।

এমন আত্মঘাতি, শৃঙ্খলাহীন, সংঘাতপ্রবণ শাবি ছাত্রলীগেই অবশেষে বইতে শুরু করেছে সমোঝোতার বাতাস। অনেক জল ঘোলা করে অবশেষে সমাঝোতায় ঐকমত হয়েছেন শাবি ছাত্রলীগের নেতারা।

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শাবি উপাচার্যের উদ্যেগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিবাদমান গ্রুপের সাথে এক বৈঠকে সমোঝোতায় সম্মত হন বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কনফারেন্স কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় একে অপরকে মিষ্টিও খাইয়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশী সংঘাতে জড়ানো সন্দিপন ও উত্তম গ্রুপের নেতারাও এসময় একে অপরের মুখে মিষ্টি তুলে দেন।

২০১৩ সালের ৮ মে শাবি ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পর সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সমঝোতায় এই প্রথমবারের মতো সম্মত হয়েছে সব গ্রুপ। তবে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত আরেক পক্ষ রেদুয়ান-মিসবাহ ও রানা’র অনুসারীরা পৃথকভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৮ মে ছাত্রলীগের সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হলেও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি কমিটির নেতারা। আবাসিক হলগুলোর দখলে ছিল পদবঞ্চিত উত্তম কুমার দাশ, কাঙ্খিত পদ না পাওয়া শাবি ছাত্রলীগে সহ সভাপতি অঞ্জন রায় অনুসারি ছাত্রলীগ কর্মীদের। এনিয়ে বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মদিবস উপলক্ষে মিনি অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের তিনটি পক্ষ একসাথে অংশ নেয়।

পরে ভিসির কনফারেন্স কক্ষে ভিসি প্রফেসর আমিনুল হক ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ, সহ-সভাপতি আবু সাইদ আকন্দ, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান ও যুগ্ম-সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ এবং পদবঞ্চিত উত্তম কুমার দাশ, শাবি ছাত্রলীগে সহ সভাপতি অঞ্জন রায়ের সাথে মিটিং করে একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে সমঝোতায় আসেন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. কবির হোসেন, সাধারন সম্পাদক মো. আব্দল গণি, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মো আনোয়ারুল ইসলাম দিপু, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এমদাদুল হক, হল প্রভোস্ট মো. ফারুক উদ্দিন ও সঞ্জয় কৃষ্ণ বিশ্বাস।

এনিয়ে সিলেটের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরসহ আগামী ২৫ মার্চ আবারো আলোচনায় বসা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় জানান, আমাদের অভ্যন্তরীন সমস্যা কাটাতে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি তিনি ২০ নভেম্বরের ঘটনায় সুমন দাশ হত্যার খুনিদের বিচারের দাবি জানান।

শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ জানান, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে সুসংগঠিত করতে আমরা একসাথে কাজ করার অঙ্গিকার করেছি। যারা এতো দিন ভুল বুঝেছিল আশা করি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তাদেরকে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

শাবি ভিসি প্রফেসর আমিনুল হক ভুঁইয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে তাদেরকে সহনশীল হয়ে পড়াশুনায় মনেযোগী হওয়ার আহবান জানান। ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে বিবাদ ভুলে এক হওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো তদন্ত সাপেক্ষে বিচার কাজ চলবে বলে তিনি জানান।

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত