রাবি প্রতিনিধি

২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ২৩:১১

রাবির ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মেস মালিকদের রমরমা ব্যবসা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেস মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, মেসে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক রাতের জন্য ২০০ থেকে ২৫০, কখনো তার চেয়েও বেশি টাকা নিচ্ছে মেস মালিকরা।

এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন, মেসের সদস্যসহ পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা। কারণ নিজের নিকট আত্মীয় আসলেও তার জন্য মালিককে প্রতি রাতের জন্য দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত বিভিন্ন অংকের এই টাকা। এজন্য মেসের অনেক শিক্ষার্থীই গ্রাম বা এলাকা থেকে আসা ভর্তিচ্ছুদের নিজের কাছে রাখতে অনীহা প্রকাশ করছে।

এমন ভুক্তভোগী বিনোদপুর দারুসসালাম মেসের সদস্য হিরা বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে মেস মালিক গেস্টদের প্রতি রাত থাকার জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে। পরে সেই নোটিশ কেউ ছিঁড়ে ফেললে মালিক প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ১০০ টাকা করে নির্ধারণ করে। আমার কাছে এখন তিনজন পরীক্ষার্থী আছেন। দুই দিনে ইতোমধ্যে আমাকে ৬০০ টাকা মালিককে দিতে হয়েছে। সামনে আরো অনেকেই আসবে। তারা কয়েকটা ইউনিটে পরীক্ষা দিবে। সেজন্য একেকজনকে থাকতে হবে কয়েকদিন করে। কিন্তু এই গেস্টদের কাছে তো আর টাকা চাওয়া যায় না। এতো টাকা আমার পক্ষে কীভাবে বহন করা সম্ভব?’

‘‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করায় মেস মালিক আমাকে চলে যেতে বলেছেন। খারাপ ব্যবহার করেছেন। আসলে এইভাবে টাকা নেওয়া অমানবিক। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন মেস মালিকরা।’’

দারুসসালাম মেসের মালিক শারমিন বলেন, ‘মেস মালিক সমিতি থেকে আমাদের প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিতে বলেছে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ৭৫ টাকা করেছি। আর হিরা মেসে থাকতে চাচ্ছে না। তাহলে তাকে তো আর জোর করে রাখা যায় না।’

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার ম-ল ম্যানসন মেসে থাকেন লিটন বর্মন। তিনি বলেন, ‘এই মেসে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ২০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এলাকা থেকে ছোটো ভাইয়েরা আসতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের রাখতে পারব না বলে দিতে বাধ্য হচ্ছি। এরই মধ্যে আমার কাছে আসা দুইজন শিক্ষার্থীকে হলে পাঠিয়ে দিয়েছি। আসলে খুব লজ্জাজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছি।’

রাজশাহী মহানগর ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুস্তফা কামাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘রাবি ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক সমস্যার বিষয় (বাসস্থান, খাবার, যাতায়াত, বাথরুম) বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, মেসে আগত প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে মেস মালিকদের অমানবিক কষ্ট কিছুটা লাঘব করার জন্য নির্দ্বিধায় ২৫০ টাকা করে দিতে বাধ্য থাকিবে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলে, কোন ছাত্র যদি মেস মালিকের সাথে অসদাচরণ করে, তাহলে রাজশাহী মহানগর ছাত্র কল্যাণ সমিতি কোন ভাবেই দায়ি থাকিবে না।’

রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ভর্তি পরীক্ষার সময়ে মেসে অবস্থান করার জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা করে মেস মালিককে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসলে মেস মালিকের পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নানা ধরনের খরচ বেড়ে যায়। এসব কথা বিবেচনা করে আমরা এই ফি নির্ধারণ করেছি। তারপরও আমরা মালিকদের মুখে মুখে বলে দিয়েছি যেন এত টাকা না নেয়। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে কি না, সেটা নিয়েও ভাবছি।’

‘‘আমাদের সমিতির বাইরেও অনেক মেস আছে তারাও নিজেদের ইচ্ছা মতো ভাড়া নিচ্ছে।’’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত