রাবি প্রতিনিধি

২১ নভেম্বর, ২০১৬ ১৬:০৭

রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন: সিলেকশন নয়, ইলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের আহ্বান

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার অনুষ্ঠিতব্য ২৫তম সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘদিন পর এ কাউন্সিলকে ঘিরে তাদের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। অনেক নেতাকর্মীকে সকাল-বিকেল দেখা যাচ্ছে মোটর সাইকেলে মহড়া দিতে। এরই মধ্যে কেউ কেউ ক্যাম্পাসে জনসংযোগ চালাচ্ছেন।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, আগামী ৭ ও ৮ ডিসেম্বর যথাক্রমে রাবি ও রুয়েট সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার রুয়েট বন্ধ থাকায় রুয়েট সম্মেলন হবে ৭ ডিসেম্বর। পরদিন ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে রাবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রসঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, রাবি ছাত্রলীগের মতো এত বড়ো একটি ইউনিটে শুধু সিলেকশনের (বাছাইয়ের) মধ্য দিয়ে নেতা নির্বাচন করা সমীচীন নয়। কারণ এ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই মহানগর আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা, স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব করা আর তদবিরই বিবেচনা করা হয় কারা আগামীর নেতৃত্বে আসবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপেক্ষিত করার এই নিয়ম সবাইকে অনেকটা হতাশ করে। পরবর্তীতে হয়তো মারামারি, হাঙ্গামা, ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই সিলেকশন পদ্ধতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাবি ছাত্রলীগের কয়েকজন তৃণমূল নেতাকর্মী বলেন, নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত বিবেচনা করা হলে যোগ্য নেতৃত্ব আশা করা যায়। কারণ একমাত্র ইলেকশনের মধ্য দিয়ে প্রকৃত নেতার পরিচয় মেলে। সিলেকশন কখনও সঠিক সমাধান হতে পারে না। আমাদের গণতন্ত্রীয় পদ্ধতিকে সক্রিয় ও মজবুত করতে পারে একমাত্র ইলেকশন পদ্ধতি যা আমাদের চেতনাকে শক্তিশালী করে তুলতে সক্ষম।

জানা যায়, রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব অনেকটাই নির্ধারণ হয় রাতের আঁধারে। এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের তদবির। তাই পদ প্রত্যাশীরা যোগাযোগ শুরু করেছে মহানগর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। আবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাকর্মী। বলা বাহুল্য যে যত বেশি তেল ঢালতে পারবে সেই আগামীর নেতৃত্বে আসবে। সৎ, যোগ্য, সাহসী তৃণমূলের নেতাকর্মীরা থাকবে উপেক্ষিত।

ছাত্রলীগ সূত্রে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে সভাপতি পদে সম্ভাব্য তালিকায় আছেন রাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব। বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহনুর শাকিল ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া ও সদস্য মিনারুল ইসলাম। এছাড়াও বর্তমান কমিটির আরেক সহ-সভাপতি মেহেদী হাসানও এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানা গেছে।

সম্মেলনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বলেন, ‘আসলে এটাই উচিৎ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা। আমাদের গঠনতন্ত্র বলে প্রত্যেকটা কাউন্সিলে, হল কমিটিতে ২৫ জন সদস্য থাকবে। তাদের ভোটের মাধ্যমে এ নির্বাচন হওয়ার কথা কিন্তু মহানগরীয় কিছু কারণে তা করা সম্ভব হয় না। মহানগর নেতারা চান তাদের অনুসারী নেতারা নেতৃত্বে আসুক।

রাবি ছাত্রলীগের ইতিহাসে ইলেকশনের মাধ্যমে নেতৃত্ব আজ অবধি আসেনি তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেওয়ায় আমি বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতা কর্মীদের কাছে উত্থাপন করব। আমি আশা করি তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।’

এছাড়াও সম্মেলনের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের হাতেই রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্ব আসবে এবং এমন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে না যারা পরবর্তীতে সমালোচিত হয়। সেই সাথে নতুন নেতৃত্ব আগামীতে রাকসুকে সচল করবে, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধিত্ব বাছাই করে নিতে পারে এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্মেলন প্রসঙ্গে গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব এমন অনেকেই আছেন যারা হঠাৎ করেই ছাত্রলীগে এসে নেতা হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ত্যাগী ও সাহসী নেতা যারা দলের দুঃসময়েও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন নেতৃত্ব রাবি ছাত্রলীগে নির্বাচিত করবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এমন আশাবাদও প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শাহনুর শাকিল বলেন, বর্তমান সরকার একটি রোডম্যাপকে সামনে রেখে দেশ পরিচালনা করছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্রলীগকে পরিচালনা করতে পারবে এমন নেতৃত্ব আশা করেন তিনি।
 
একই পদে লড়াই করার জন্য বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মামুন-অর-রশিদ ও তন্ময়ানন্দ অভির নামও শোনা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরকে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
 
এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যও বসে নেই পদপ্রত্যাশীরা। ক্যাম্পাসে নিয়মিত মহড়া, মহানগর আওয়ামী লীগ কিংবা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন অনেকেই।

ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, রাবির এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ইতিমধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন অনেক পদপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সদস্য সাকিবুল হাসান বাকী, ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক টগর এম. সালেহ, ক্রীড়া সম্পাদক লিংকন, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সজল, মতিহার হল শাখা সভাপতি শরীফ কাউয়ুমের নাম উল্লেখ্যযোগ্য বলে জানা গেছে।

পদ প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাকিবুল হাসান বাকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে যারা ত্যাগ স্বীকার করবে, সেই সঙ্গে রাবি শাখা ছাত্রলীগের মাধ্যমে যারা শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করবে তারাই নেতৃত্বে আসবে বলে আমি মনে করছি।’

আরেক সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী টগর এম. সালেহ, যারা রাবি ছাত্রলীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে তারাই নেতৃত্বে আসবে এমনটাই আশাবাদ করছেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালের ২০ জুলাই মিজানুর রহমান রানাকে সভাপতি ও এসএম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে রাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে বর্তমানে মেয়াদ উত্তীর্ণ রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটো পদই চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনায় তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওই দিনই খালিদ হাসান বিপ্লবকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।

দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্তের ভারে রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্ব থাকার পর চলতি মাসের ১৩ তারিখে এই সম্মেলনের দিন তারিখ ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৫০ এর অধিক নেতাকর্মী লড়বেন বলে জানা যায়। প্রার্থীদের নাম আগামী ২৫ নভেম্বরের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত