নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ জুলাই, ২০১৭ ০১:৪০

পাঁচ বছরেও জানা যায়নি কারা পুড়িয়েছিলো এমসি কলেজ ছাত্রবাস

সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাস পুড়ানোর পাঁচ বছর পেরিয়েছে। তবে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি এই ঘটনার তদন্তকাজ। এখনো জানা যায়নি কারা পুড়িয়েছিলো ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের ছাত্রাবাস।

যদিও প্রথম থেকেই অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। অগ্নিসংযোগে ছবিতেও ছাত্রলীগ নেতাদের দেখা যায়।

এই ঘটনার তদন্তকাজ শেষ হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার আবার আক্রান্ত হয় কলেজটির ছাত্রবাস। এদিন ভাংচুর করা হয় ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি ব্লক। এবারও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ।


২০১২ সালের ৮ জুলাই রাতে ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষের পর অগ্নিসংযোগ করা হয় এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে। আদালতের নির্দেশে প্রথমে এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’কে। এরপর সিআইডি  ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু আদালত এ প্রতিবেদন গ্রহণ না করে আবারও তদন্তের নির্দেশ দেন।

এরপর পূনরায় তদন্ত করে সিআইডি ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট ফের আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনও আদালত গ্রহণ না করে না করে পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দু’বার ও বিশেষায়িত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে অপরাধী শনাক্ত না হওয়ায় আলোচিত এ মামলার ভবিষৎ নিয়ে দেখা দেয় সংশয় ।

সর্বশেষ পিবিআই তদন্তে ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের দাখিলকৃত অভিযোগপত্র আদালত অগ্রাহ্য করে আলোচিত এ মামলার জট খুলতে এ বছরের ৩১ মে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সারাবন তহুরা।

বর্তমানে এমসি কলেজ ছাত্রবাস পোড়ানোর মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি স্বাক্ষ্য নিচ্ছে। আগামী দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এমসি কলেজের ছাত্রবাস পোড়োনো মামলার প্রতিবেদনও দাখিল করবে বলে জানা গেছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে এ বছরের ২০ জুন হোস্টেল পোড়ানো মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারওয়ার জাহান আদালতে স্বাক্ষ্য দেন।

মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামীদেরকে শনাক্ত করার জন্য আদালতের আদেশেরে প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর পিবিআই হেড কোয়ার্টারের আদেশে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেন পিবিআই সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারওয়ার জাহান। তদন্ত করে ৪মাসের মাথায় আদালতে পিবিআইও অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তা আদালত আমলে নেননি।

সিলেট পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সারওয়ার জাহান জানিয়েছেন- মামলার বাদীও কারা আগুন দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। সংশিষ্ট সবার বক্তব্য নেয়া হয়েছে কিন্তু কোনো বক্তব্যে কারও নাম উঠে আসেনি। মামলাটি কোন স্বাক্ষি কারও নাম বলতে পারেনি। বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কয়েক দফা। কিন্তু বাদীও কারা আগুন দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ১২ এপ্রিল সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রবাস পোড়ানো মামলার সর্বশেষ তদন্ত সংস্থা পিবিআই সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারওয়ার জাহান সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সারাবন তহুরা আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র নং-(১৫) দাখিল করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন-অত্র মামলার তদন্ত ও স্বাক্ষ্য প্রমাণ এবং ঘটনার সময়ে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত স্থিরচিত্রগুলোতে থাকা এই মামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে সন্দিগদ্ধ আসামী দেবাংশু দাস মিঠু, পংকজ পুরকায়স্থ, আবু সরকার, জাহাঙ্গির আলম, মৃদুল কান্তি সরকার, কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আলমগীর, বাবলা, আতিক, রুবেল, জ্যোতিময় দাস সৌরভ ঘটনার সময়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করিয়া ক্ষতি সাধন করেছে কিনা তাহা তদন্তে এবং ভিডিও ফুটেজের স্থিরচিত্র পর্যবেক্ষণ করে উক্ত আসামীদে কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এমনকি মামলা তদন্তকালে মূল অগ্নিসংযোগকারী শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সন্দিগ্ধ আসামীদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য প্রমাণে অপরাধ সংঘটনের সুস্পষ্ট স্বাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয় দাখিলকৃত সম্পূরক অভিযোগ পত্রে।

জানা যায়, ২০১২ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের পর পুড়িয়ে দেয়া হয় শত বছরের পুরনো এমসি কলেজের ছাত্রবাস । পুড়ে যায় হোস্টেলের ১ম, ২য় ও ৪র্থ ব্লক। এ ঘটনায় হোস্টেলের হল সুপার বশির আহমদ বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ২০১২ সালের ১৩ জুলাই মামলা দায়ের করেন। এ মামলা প্রথমে তদন্ত করেন এসএমপির শাহপরান থানার ওসি এনামুল মনোয়ার।

পরে যৌথভাবে তদারকি করেন এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আমিনুল ইসলাম এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার শংকর কুমার দাস। এরপর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান এসএমপির শাহপরান থানার পরবর্তী ওসি মো. লিয়াকত আলী। তদন্ত চলাকালে আরও দুটি মামলা হয় আদালতে। এ দুটি মামলাও হোস্টেল সুপার বশির আহমদের দায়ের করা মামলার সঙ্গে নথিভুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর হয়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার এমসি কলেজের ছাত্রাবাস ভাংচুরের পর ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ শাহপরান থানায় একটি জিডিও করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত