ওয়েব ডেস্ক

০৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০১:৩২

তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পীদের প্রথম গানের ব্যান্ড ‘সিক্স প্যাক’

ভারতে শুধুমাত্র তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত বা হিজড়াদের নিয়ে তৈরি দেশের প্রথম মিউজিক ব্যান্ড ‘সিক্স প্যাক’ আবির্ভাবেই সারা দেশ জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে।

ছ`জন হিজড়া শিল্পীর এই ব্যান্ড ফ্যারেল উইলিয়ামসের বিখ্যাত ‘হ্যাপি’ গানটি তাদের নিজস্ব ভঙ্গীতে গেয়েছেন। আর ইউটিউবে রিলিজ করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে সেই মিউজিক ভিডিও দেখেছেন লক্ষ লক্ষ দর্শক।

বলিউডের সঙ্গীতশিল্পী সোনু নিগম বা নায়িকা অনুষ্কা শর্মাও গলা মিলিয়েছেন এই ব্যান্ডের সঙ্গে। আর এর প্রয়োজকরা আশা করছেন ভারতে হিজড়াদের যে দৃষ্টিতে দেখা হয় তা অনেকটাই পাল্টাতে পারবে এই অভিনব ব্যান্ড সিক্স প্যাক।

ভারতে হিজড়াদের বেশির ভাগ লোকই উপেক্ষা করেন, কেউ কেউ সয়ে নেন – এবং ভুল বোঝেন প্রায় সবাই।

বলিউড হার্টথ্রব অনুষ্কা শর্মার তাই বলতে দ্বিধা নেই, এদেশে হিজড়ারা যেন এক ‘নির্বাসিত সম্প্রদায়’।

ট্রাফিক লাইটে দাঁড়িয়ে গাড়ির কাঁচে ঠকঠক করে যে হিজড়ারা অল্প কিছু পয়সা বা সামান্য অনুকম্পা চেয়ে থাকেন, সেই সমাজেরই ছ`জন সদস্য কিন্তু নিজেদের খুশি আর আনন্দ আবিষ্কার করে নিয়েছেন নতুন এক মিউজিক ব্যান্ডের মাধ্যমে।

ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট ফিদা খান আর তার পাঁচ সঙ্গী মিলে ফ্যারেল উইলিয়ামসের হ্যাপিকেই নতুন আঙ্গিকে গেয়েছেন – যার নাম ‘হাম হ্যায় হ্যাপি’।

এই সিক্স প্যাক ব্যান্ডের প্রযোজক ভারতের সবচেয়ে নামী চলচ্চিত্র নির্মাতা সংস্থা ইয়াশরাজ ফিল্মসেরই একটি শাখা।

দেড়শরও বেশি হিজড়ার অডিশন নিয়ে তারা বেছে নিয়েছেন সেরা ছ`জন শিল্পীকে – আর সেই আশা জগতাপ, ভাবিকা পাটিল, চাদনি সুবর্ণকার, ফিদা খান এবং কোমল ও রাবিনা জগতাপরা মিলেই তৈরি করেছেন দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মিউজিক ব্যান্ড।

সিক্স প্যাকের গানের একটা বিশেষত্ব হল, হিজড়াদের ট্রেডমার্ক তালিকে খুব কৌশলে এই গানের ভেতর ঢালাওভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রযোজক আশিস পাটেল বলছিলেন, ``এই ‘আও বাজাও তালি’-টাই এই গানের নিজস্ব সিগনেচার।

হিজড়াদের তালিটা কিন্তু সাধারণ তালির চেয়ে আলাদা, সেখানে একটা হাতের আঙুলগুলো চাপড় মারে অন্য হাতের চেটোয়।``

তাঁর আরও আশা, ``গ্যাংনাম স্টাইল জনপ্রিয় হতে পারলে এই তালিও নিশ্চয় সাড়া ফেলতে পারবে। আর যখন এই গান মানুষের আইপডে বা প্লেলিস্টে ঢুকবে তখন আমা করা যায় হিজড়াদের জীবনও একটু বেশি সহনীয় হবে।``

এই মিউজিক ভিডিওতে হিজড়াদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন বলিউডের লিজেন্ড সোনু নিগমও, যার নিজের কথাতেই খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি এদের জন্য কিছু করার কথা ভাবতেন।

সোনু বলছেন, ``ছোটবেলায় আমি ভাবতাম যদি এমন কোনও গ্রহে আমার জন্ম হত যেখানে আমার মতো লোকরাই সংখ্যায় কম। আর অন্যরকম মানুষরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাহলে কী হত?``

``যেটা আমার দোষই নয়, তার জন্য যদি আমার বাবা-মা-পরিবার-সমাজ সবাই আমাকে ছোট নজরে দেখত তাহলে আমার ভেতর কী চলত? এই কারণেই আমার প্রশ্ন, হিজড়াদের কেন শুধু রাস্তাঘাটে বা বাচ্চা জন্মানোর পরই দেখা যাবে – অন্য সব স্বাভাবিক জায়গায় কেন নয়?``

সিক্স প্যাকের সদস্যরা অবশ্য সামাজিক পুনর্বাসনের চেয়ে আপাতত তাদের হঠাৎ-পাওয়া খ্যাতি উপভোগ করতেই ব্যস্ত।

লিড ভোকালিস্ট ফিদা খান যেমন বলছেন, সোনু নিগমের সঙ্গে এক মঞ্চে গাইব কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি – এই খুশিটাই এখন তাদের মন ভরিয়ে রেখেছে।

পাশ থেকে কোমল জগতাপ অবশ্য যোগ করেন, ``আপনার সঙ্গে একই পাড়ায় বা মহল্লায় থাকেন যে হিজড়ারা তাদের সমাজের মধ্যেই নিখোঁজ করে রাখাটা কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়।``

ছ`জন হিজড়া মিলে যখন তাই একসঙ্গে গেয়ে ওঠেন হাম হ্যায় হ্যাপি, গোটা সমাজেরই তাই কিন্তু সেটা ‘লাইক’ করার একটা দায় এসে যায়, মনে করিয়ে দিচ্ছেন এই নতুন ধারার ব্যান্ড-শিল্পীরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত