ফয়সল আহমদ রুহেল

১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০৪:২৪

সফল শিক্ষক ও সংগঠক মোহাম্মদ আব্দুর রব

মোহাম্মদ আব্দুর রব

মোহাম্মদ আব্দুর রব; সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। শিক্ষাজীবন শেষে যোগ দেন বিমানবাহিনীতে, এরপর আসেন শিক্ষকতা পেশায়। শিক্ষকতার পাশাপাশি কাজ করেছেন সংগঠক হিসেবে। দায়িত্ব পালন করেছেন বিবিধ প্রতিষ্ঠানে।

জন্ম
মোহাম্মদ আব্দুর রব ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানাধীন ১১নং লাউতা ইউনিয়নের কালাইউরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো. ফরমুজ আলী ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। মাতা ছুরতুন নেছা, গৃহিণী। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ ।

শৈশব
তিনি ১৯৫৯ সালে কালাইউরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করলেও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আরও এক বছর পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিদ্যালয়ে তিনি একমাত্র বৃত্তি পরীক্ষার্থী হওয়ায় ও পরীক্ষা কেন্দ্র প্রায় চল্লিশ মাইল দূরে সিলেট শহরে হওয়ায়, তৎকালীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থিক কারণে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি।

তখনকার সময়ে ওই অঞ্চলে মাদ্রাসাভিত্তিক জলসা (ধর্মীয় আলোচনা সভা) দৌলতপুর, সুজাউল, কোনাগ্রাম, চন্দগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হতো। তিনি ওই সমস্ত স্থানে আগ্রহ নিয়ে যেতেন এবং বিখ্যাত আলেমদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। এই ইচ্ছা থেকেই পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর মাদ্রাসায় পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পিতা তাকে পাশের গ্রাম দৌলতপুর মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিলেন। বছরখানেক যেতে না যেতে মাদ্রাসার হুজুর ও গ্রামবাসী মুরব্বিয়ানদের মধ্যে কী যে ঘটলো তিনি বুঝতে পারেননি। মাদ্রাসা থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য মাদ্রাসায় চলে গেল। শিক্ষার্থীশূন্য মাদ্রাসায় যেতে ভাল লাগতো না তাঁর। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো তিনিও কিছুটা দূরবর্তী সুজাউল মাদ্রাসায় যাতায়াত করে বুঝতে পারলেন এখানেও হুজুর ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলাদলি আছে। কাজেই সেখানে যাওয়াও বন্ধ করে দেন। সারাদিন কাজ কর্ম নেই। বন্ধু বান্ধবরা স্কুলে পড়ে, যারা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে তারা মাঠে কৃষি কাজে ব্যস্ত। বিকেলবেলা যখন বন্ধুবান্ধবরা মাঠে খেলতে আসে তখনই কিছুটা স্বস্তিবোধ হয়। পাঁচ/ছয় মাস এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর পার্শ্বের পকুয়া গ্রামের ছখাওয়াত আলীর পরামর্শে তাঁকে দেউলগ্রাম মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হলো। বাড়ি থেকে ৭/৮ মাইল দূরে দেউলগ্রাম মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর ওই গ্রামের একটি বাড়িতে থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা হলো। নূতন জায়গায় নূতন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে পড়াশোনার মনোযোগী হলেন। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্যে খেলাধুলা নিষিদ্ধ থাকায় তাঁর খারাপ লাগতো। ৭/৮ মাস যেতে না যেতে এখানেও বিবাদের সূত্রপাত হলো এবং কিছু দিনের মধ্যে দুইটি মাদ্রাসার সৃষ্টি হয়। একটি পুরাতন মাদ্রাসা দেউলগ্রাম, অন্যটি পাশের গ্রামে আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ পছন্দমতো মাদ্রাসায় চলে গেল। তিনি শিক্ষা গ্রহণের প্রতি বিরূপ মনোভাব নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। তাঁর পিতা বললেন, পড়াশোনা যখন করবেই না তখন কাজ কর্ম করার চেষ্টা কর।

আব্দুর রবের ফুফাত ভাই বশির উদ্দিন ও তাঁর বন্ধু জমির হোসেনের সাথে রাজমিস্ত্রির কর্মী হিসেবে যোগ দিলেন। তবে একটি শর্ত দিলেন যে, তাঁরা যত ভোরে বলবেন তিনি কাজে যাবেন, তবে বিকেলে তাঁকে ফুটবল খেলার সুযোগ দিতে হবে। তারা ওই শর্তে রাজি হওয়ায় তিনি উৎসাহের সঙ্গে কাজ করতে লাগলেন। ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিয়ানীবাজারের প্রথম দোতলা দালান উত্তর বাজারের ‘আলী ফার্মেসি’র দ্বিতীয় তলার কাজ করছেন, একদিন দুপুরের সময় রাজমিস্ত্রি জমির হোসেন অন্য শ্রমিককে বললেন বালু ও সিমেন্ট মেশাতে। ওইদিন বিকালে আব্দুর রব একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা খেলতে যাবেন। বালু ও সিমেন্টের পরিমাণ দেখে তিনি বললেন, চাচা- আমি তো কিছুক্ষণ পর চলে যাব। আপনারা এত বালু সিমেন্টের কাজ করতে পারবেন না। তারা বললেন, পারব। ঠিক সময় মত তিনি চলে যেতে চাইলে তারা বললেন, আমরা তো বেশি মাল তৈরি করে ফেলেছি। আজ খেলতে যাওয়া যাবে না। তিনি রাগ করে বললেন, আমি আর আপনাদের সাথে কাজ করব না। এই কথা বলে তিনি চলে আসেন। তিনি সব সময় সিদ্ধান্তে অটল থাকেন বিধায় এই ঘটনা বাড়ির সবাই জানার পর কেউই কিছু বলেননি। কিন্তু সবাই তার উপর অসন্তুষ্ট।

তাঁর বড় ভাই মো. আব্দুস শহীদ সিলেট এমসি কলেজে পড়তেন। তিনি বললেন, এই সব কিছু বাদ দিয়ে স্কুলের পড়া শুরু কর। কিন্তু এরই মধ্যে জীবনের পাঁচটি বছর চলে গেছে। বড় ভাই আব্দুস শহীদ তাঁকে গ্রামের মো. মনির উদ্দিন বিকম স্যারের কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘চাচা আমার ছোট ভাই স্কুলে পড়তে চায়। আপনি ওকে পরীক্ষা করে দেখেন তো ওই কোন ক্লাসে পড়তে পারবে। স্যার আব্দুর রবকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও আনুষঙ্গিক আরও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে বললেন যে, ও যদি দুই/তিন মাস আমার কাছে বীজগণিত ও ইংরেজি পড়ে তবে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে পারবে। আমি তাকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত আমার কাছে পড়েছে বলে একটি প্রত্যয়নপত্র দেব যার মাধ্যমে সে যে কোন উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে।

মো. মনির উদ্দিন বিকম স্যারের প্রত্যয়নপত্র দ্বারা ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তিনি জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ওই বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য সিলেট এমসি কলেজে আবেদন করেন। ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ভাল নম্বর থাকায় এবং ভাল ফুটবল প্লেয়ার হওয়ার জন্য এমসি কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। ছাত্রাবাসে থাকারও সুযোগ পান। ফিসের টাকার জন্য বাড়ি যাওয়ার সময় স্থানীয় নবপ্রতিষ্ঠিত বিয়ানীবাজার কলেজে ভর্তি হওয়া আব্দুর রবের সতীর্থরা এক রকম জোর করে তাকে বিয়ানীবাজার কলেজে নিয়ে বিনা পয়সায় ভর্তি করিয়ে দেন। তিনি বিয়ানীবাজার কলেজের ১৯৬৯ সালের শিক্ষার্থী হন।

শিক্ষা জীবন
মোহাম্মদ আব্দুর রবের শিক্ষা জীবন খুবই বিচিত্র। ১৯৫৫ সালে কালাই উরা (সি পি) বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয় হতে কুমিল্লা বোর্ড থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৪ ইংরেজিতে ঢাকা বোর্ডের অধীনে সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে এইচএসসি তৃতীয় বিভাগে পাস করেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত শিক্ষার্থী হিসাবে বিএ পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণিতে পাস করেন। ১৯৯৭-৯৮ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ’ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষকতা জীবন
বিমান বাহিনীর চাকুরির শেষ দিকে কেবলই তাঁর মনে হতো, বিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোতে ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’ বলে একটি প্রবন্ধ লিখতে হতো। তিনি লিখতেন ‘আমি একজন শিক্ষক হব।’ আর চাকুরি জুটলো সামরিক বাহিনীতে। বিমান বাহিনীর চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার নব প্রতিষ্ঠিত হাজী ইউনুছ মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। এরপর বিয়ানীবাজারের প্রাচীনতম উচ্চ বিদ্যালয় ‘পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ হাইস্কুল’ এ সহকারী প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে আবেদন করে উক্ত পদে ১৯৯৯ সালের ১ আগস্ট নিয়োগ লাভ করেন। ২০০৭ সালের শেষার্ধে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কারণ ২০০৪ সাল থেকে সরকারি পরিপত্র মোতাবেক সকল প্রকার শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। ২০০৯ সালে শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা নিরসন হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারে সরকারি নীতি না মেনে কমিটির সদস্যদের নিজেদের অযাচিত শর্ত আরোপের ফলে তাঁর সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তাদের এ অন্যায় মেনে না নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। এই সময় উপজেলার ‘মাথিউরা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়’ এর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যবর্গের অনুরোধে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর যোগদান করেন। ২০১২ সালে পি এইচ জি হাইস্কুলের নব গঠিত কমিটি কর্তৃক প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার হলে তিনি আবেদন করেন এবং পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী হিসাবে ২০১২ সালের ১৫ জুলাই প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ২০১৩ সালের শেষ দিকে বয়স ষাট বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি বিধি মোতাবেক অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণের পর নব প্রতিষ্ঠিত নিদনপুর সুপাতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির অনুরোধে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অদ্যাবধি উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব পালন করছেন।

বিমান বাহিনীতে চাকরি
তিনি ১৯৬৬ ইং জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করার পর বড় ভাই আব্দুস শহীদ ঐ বছর পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে চাকুরি পেয়ে যান। ১৯৭০ সালে জানুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়ি আসেন। কী যেন একটি কাজে ঢাকা শহরে যাবেন শুনে আব্দুর রবও তাঁর সাথে ঢাকা যাওয়ার বায়না ধরেন। তিনি তাকে সঙ্গে নিলেন। ট্রেনে ঢাকা গেলেন এবং নবাবপুর রোডের একটি হোটেলে রাত্রিযাপন করেন। ভোরে উঠে বড় ভাই যেন কোথায় চলে গেলেন। তিনি হোটেল থেকে বের হয়ে নাস্তা করে ঢাকা শহর দেখার জন্য এদিক সেদিক হাঁটতে থাকেন। কিছু দূর গিয়ে দেখেন তাঁর বয়সী অনেক লোকজন একটি ছোট মাঠের মধ্যে একত্রিত হয়েছে। কাছে গিয়ে জানতে পারলেন যে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে লোক নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি দ্বিতীয় বিভাগ। তিনিও তাদের সাথে যোগ দিলেন। যথাসময়ে বিমান বাহিনীর পোশাক পরিহিত ৩/৪ জন লোক এসে তাদেরকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে শারীরিক উচ্চতা দেখে সবাইকে দুই ভাগে ভাগ করে কম উচ্চতার লোকদের চলে যেতে বলেন। অপর সবাইকে আলাদা চেয়ার টেবিলে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তিন গ্রুপে মোট ১৫০ জন পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক পরে ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায় তিনিসহ তেরোজন পাস করেছেন। পরে ওই দিনই মেডিকেল পরীক্ষায় সাতজন নির্বাচিত হলে নাম ঠিকানা লিখে রেখে তারা বিমান বাহিনীতে চাকুরি পেয়ে গেছে বলে জানানো হয়। হোটেলে এসে বড় ভাইজানকে সবকিছু বলে তাঁর রোল নং সম্বলিত কাগজ দেখালে তিনি বললেন যে, সত্যিই চাকুরি হয়ে গেছে। ১৯৭০ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে on pakistan state service লিখা একটি খাম পেলেন। যাতে লিখা ছিল ১৫ জুন ঢাকায় যেখানে পরীক্ষা দিয়েছিলেন সেখানে গিয়ে যেন চাকুরিতে যোগদান করেন। পরিচিত সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে ঢাকায় যোগদান এবং ট্রেনিং এর জন্য তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটা শহরে চলে যান।

প্রাথমিক পর্যায়ের ২৪ সপ্তাহ ট্রেনিং শেষে পেশাগত ট্রেনিংয়ের জন্য ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে করাচি যান। মাস দুয়েক পর মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়। তাদের ট্রেনিং কিন্তু চলতে থাকে। ৩৬ সপ্তাহের ট্রেনিং শেষে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে রিসালপুর গেলে বিমান বাহিনীর পুরাতন সদস্যদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর তখনই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভয়াবহ অবস্থার কথা বুঝতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের কারণে পাকিস্তানি সদস্যরা বাঙালিদের সন্দেহ করতে থাকে। তাদের মধ্যে চালচলন ও আচার ব্যবহারে পার্থক্য বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বাঙালি সদস্যদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের পর পর প্রায় সকল বাঙালি সদস্যকে আলাদা ক্যাম্পে নেয়া হয় এবং বন্দি লোকদের মতো রাখা হয়। প্রায় দুই বছর পর রেডক্রসের মাধ্যমে ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন।

তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফুটবল টিমের নিয়মিত খেলোয়াড় হওয়ায় প্রায় সারা বছরই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। চাকুরির মেয়াদ ছিল আঠারো বছর অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত। চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে অবসর গ্রহণ করে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন।

সাংগঠনিক দায়িত্ব
তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সমূহের নীতিনির্ধারক, বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সাংগঠনিক কমিটির সেক্রেটারি ও বর্তমান গভর্নিং বডির সদস্য, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক, এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

পারিবারিক জীবন
তিনি পারিবারিক জীবনে এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। বড় ছেলে মো. শরীফুল ইসলাম রবিন বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ (সম্মান) সম্পন্ন করে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে গিয়ে এমবিএ পড়ে লন্ডন শহরে বসবাস করছেন। মেজো ও ছোট মেয়ে যথাক্রমে রোমেনা আক্তার রুমি ও সোহানা আক্তার রুনা বিএ পাস করার পর বিবাহিত জীবনযাপন করছে।

সফল শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুর রব ন্যায় নীতির প্রতি ছিলেন নিষ্ঠাবান। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুর রবের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের মূল্যায়ন করবে শিক্ষার্থীরা এবং বাকি কাজগুলোর মূল্যায়ন করবে কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ জনগণ। গুণী এই শিক্ষকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

  • ফয়সল আহমদ রুহেল : সাউথ ইষ্ট লন্ডন প্রতিনিধি, চ্যানেল এস টেলিভিশন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত