মাসুদ পারভেজ রূপাই

২৫ মে, ২০২৪ ১৪:০১

ফুটবল: মোর দ্যান অ্যা গেইম

ফুটবলের ইতিহাস হাজার বছরের পুরানো। সময়ের সাথে সাথে ফুটবল সারাবিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে। ফুটবল খেলে এমন দেশের ব্যাপ্তি জাতিসংঘের চাইতেও বিশাল। এবার জাতিরাষ্ট্র সমূহের সংগঠন জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো বিশ্ব ‘ফুটবল দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতি বছর ২৫ মে সারাবিশ্বে বিশ্ব ‘ফুটবল দিবস’ পালিত হবে।

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনে ফুটবল ইভেন্টে বিশ্বের সবগুলো অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সে আয়োজনের তারিখ ছিল ২৫ মে। এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্ব ফুটবল দিবসের জন্য সেই ঐতিহাসিক দিনটিকেই বেছে নিয়েছে। প্রথমবারের মতো উদযাপিত হতে যাওয়া বিশ্ব ফুটবল দিবসকে বাংলাদেশের ফুটপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে এই নিবন্ধ।

নিছক বিনোদনের উপলক্ষ থেকে সময়ের সাথে সাথে ফুটবল অবস্থান করে নিয়েছে সবার মাঝে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ডে খেলাটার বর্তমান রূপের দেখা মিললেও ফুটবলের ইতিহাস তিন হাজার বছরের। সেখান থেকে নানা ধাপ, পরিবর্তন এবং সংযোজন পেরিয়ে এসে হালের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ফুটবল খেলা। অপেশাদার থেকে পেশাদার, পুরষ্কারবিহীন থেকে সোনার ট্রফি কিংবা হাতেগোনা দর্শক থেকে বিলিয়ন দর্শক; ফুটবল এই গ্রহের সবচাইতে জনপ্রিয় এবং দর্শকনন্দিত খেলা।

সেই খেলা ধীরে ধীরে মানুষের মানসপটে জায়গা করে নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে মানুষের প্রতি মানুষ হিসেবে দায়িত্ববোধ। সেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি বিকাশের পাশাপাশি বিকশিত হয়েছে মানবতা। ফুটবল ও ফুটবলাররা খেলাটার মাধ্যমে বারতা দিতে সচেষ্ট হয়েছে। ফুটবলের যে অপরিসীম শক্তি তা ব্যবহার করে দূর করতে চেয়েছে অনাচার ও নিপীড়ন। কালক্রমে ফুটবল আর নিছক গোলের খেলা কিংবা বিনোদনের উপলক্ষ ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং দেখিয়েছে ফুটবল হলো মোর দ্যান অ্যা গেইম। ফুটবলকে যারা মোর দ্যান অ্যা গেইম হিসেবে পরিণত করেছে সেইসব নক্ষত্রদের কতিপয় নিয়ে এই লেখাটা।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল
১৯৭১ সাল, মার্চ মাসের ২৫ তারিখ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। পাকিস্তানের পশ্চিম অংশ অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তান এখানে শুরু করে শতাব্দীর ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা। পঁচিশে মার্চের ভয়াল কালরাতে শুরু করে দেয় নির্মম হত্যাকাণ্ড। এক রাতেই ঢাকাসহ সারাদেশে তাদের হাতে মারা যায় লক্ষ লক্ষ বাঙালি। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই স্বাধিকার আন্দোলনের পুরোধা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। শুরু হয় মুক্তির লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই। সেই লড়াইয়ে শামিল হয় দেশের মানুষ। সেই লড়াইয়ে শামিল হয় ফুটবলাররা। দেশের জন্য লড়াইয়ের তাড়নায় ফুটবলাররা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত পৌঁছে আর গঠন করে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’।

১৯৭১ সালের জুন মাসে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠিত হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে। কয়েকজনকে চিঠি দিয়ে মুজিবনগরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলামের চিঠি নিয়ে মুজিবনগরে পৌঁছান শঙ্কর হাজরা, শেখ আশরাফ আলী, সাইদুর রহমান প্যাটেল, আলী ইমামসহ আরও অনেকে। সেখান থেকে ৩১ জনকে নিয়ে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। যারা ফুটবলের মাধ্যমে মুক্তির লড়াইয়ে শামিল করবে অগণিত মানুষকে। যারা ফুটবল খেলে ফান্ড সংগ্রহ করবে স্বাধীনতার জন্য লড়া বাঙালিদের জন্য। আর ফুটবল ও জীবন একাকার হয়ে যেন মানুষের কথা বলে সেটা প্রচার করবে। জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে সেই দলের ম্যানেজার ছিলেন তানভীর মাজহার তান্না আর কোচের দায়িত্বে ছিলেন ননী বসাক।

২৩ জুলাই মুজিবনগর থেকে নদীয়ায় পৌঁছে এবং ২৫ জুলাই কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে নদিয়া একাদশের বিপক্ষে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে। খেলা শুরুর আগে জাতীয় সংগীতের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন খেলোয়াড়রা। খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়। এইরকম আরও ১৬টা ম্যাচ খেলে পিন্টু, সালাউদ্দিন, শাহজাহানরা জানিয়ে দিয়েছিল জীবনের যুদ্ধে ফুটবলও একটা অংশ। ম্যাচগুলো থেকে ৫ লক্ষ টাকার মত ফান্ড সংগ্রহ হয়েছিল, যা যুদ্ধকালীন খাতে জমা দেওয়া হয়েছিল। সারা ভারতের নানা অলিগলিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জয়গান পৌঁছে গিয়েছিল। ফুটবলের মাঠ, ফুটবলের একেকটা শট হয়েছিল গোলা আর বারুদে ঠাঁসা স্বাধীনতার অব্যক্ত কথামালা। ভারতের বিপুল সমর্থনে বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতির তত্ত্বাবধানে ম্যাচগুলো স্বাধীনতার কথা ছড়িয়ে দিয়েছিল আর বিখ্যাত আনন্দবাজার স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে ‘মুজিব বাহিনী’ বলে উল্লেখ করেছিল।

শুধু যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ব্যস্ত ছিল না। বরং যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীনতা অর্জনের পরেও তারা ফুটবল চাঙ্গা করতে ম্যাচ খেলেছিল। ফুটবল আর ফুটবলাররা এভাবেই মানুষের মানসপটে স্থান করে নিয়েছে যুগে যুগে। মাঠে কারিকুরি দেখাতে অভ্যস্ত অনেকেই ফুটবলকে পাথেয় করেছে জীবনে। জীবনের যাপনকে চির সংগ্রামী করে রাখতে, মানুষের জন্য মানুষ হিসেবে নিজের লড়াই জারি রাখতে অনন্য নজির রেখেছেন অনেক ফুটবলার। জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ১৯৭১ সালে একটা জাতির ঊষালগ্নে ঠিক সেভাবেই স্মরণীয় করে রেখেছিল, যেভাবে স্মরণ করে রাখা যায়। ফুটবলের মাধ্যমে মানবতার জয়গান গাওয়া সেইসব বীর ফুটবলারদের নমি। যারা দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধের আখ্যান। যারা ফুটবলকে উপজীব্য করে সারাবিশ্বকে জানিয়েছিল বাঙালিদের সাথে ঘটা জেনোসাইডের কথা। তারা প্রমাণ করেছে ফুটবল আলাদা কিছুই নয়। ফুটবল মানুষের জন্য।মানুষের মুক্তির জন্য। লড়াইয়ে ও সংগ্রামে ফুটবল ও ফুটবলাররাও অংশীদার।

বব মার্লে
ফুটবল নিছক গোলের খেলাতে সীমাবদ্ধ নেই। সময়ের সাথে সাথে একেকটা পাস, কিপারের সেইভ, রক্ষণের ট্যাকল আর সাফল্য-ব্যর্থতার সাথে জড়িয়ে গেছে নানা সমীকরণ। নানা অংশ আর অংশের শেষে হাসি-কান্না। ফুটবলের হার-জিতের সাথে আমাদের যাপিত জীবনের নানা ঘটনা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। মুক্তিকামী মানুষ, নিষ্পেষিত মানুষ, বঞ্চিত মানুষ ফুটবলেও খুঁজে নিয়েছে নিজেদের অব্যক্ত কথামালা। যা বলতে পারছে না, যা বুঝাতে পারছে না কিংবা মনের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ থেকে যারা তাদের বঞ্চিত রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে ফুটবলের মাঠ, গ্যালারি হয়ে গেছে একেকটা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। যেখান থেকে দ্রোহের কাব্য রচিত হয় সেখান থেকে বিপ্লবের অগ্নিফুল ফোটে।

বিশ্ব সংগীতের অন্যতম পুরোধা বব মার্লে। ফুটবল আর গানের সুতো একত্রিত করে বব মার্লে নাটাই বেঁধেছিলেন শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেওয়ার জন্য। ববের কাছে ফুটবল ছিল নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত মানুষের স্বাধীনতার জায়গা। মাঠে নেমে ফুটবলে কিক দেওয়ার মাঝে বব মার্লে খুঁজে নিয়েছিলেন নিজের অপ্রকাশিত সব কথামালা। ববের ভাষায়-'আমি মুক্তি চাই, ফুটবল মানে হলো মুক্তি'। বব মার্লের ফুটবলের সাথে সখ্যতার আগে গানের সাথে সখ্যতা হয়েছিল। কিন্তু গানের সাথে সমানতালে চলেছে ফুটবল। যেখানে যেতেন সেখানে কোন না কোনভাবে ফুটবল খেলার একটা ব্যবস্থা থাকতো। ট্যুর ম্যানেজার হিসেবে যাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সেও ফুটবলার। অর্থাৎ বব মার্লের ফুটবল-প্রীতি চমক জাগানিয়া।

বব মার্লে ফুটবল খেলতেন। সিরিয়াস ফুটবলের সংজ্ঞায় হয়তোবা বব মার্লেকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ফুটবল মাঠে ববের অবিশ্বাস্য সব কারিকুরি কেউ দেখলে নিশ্চিত বলবে-প্রফেশনাল ফুটবলারের সব যোগ্যতা বব মার্লের ছিল। কিন্তু তিনি খেলাটাকে উপভোগ করতে চেয়েছেন আর আমৃত্যু তা করে গেছেন। এ কজন জগৎবিখ্যাত সংগীত-শিল্পী যখন ফুটবলে খুঁজে নেয় তার অনুপ্রেরণা আর বিশ্ববাসীর জন্য লড়াকু স্বাধীনতার মন্ত্র যেখানে খুঁজে পান সেটা নিশ্চয়ই হেলায় ফেলার মতো না। বিপ্লবের সূতিকাগার হিসেবে বব মার্লের গান স্মরণীয় হলে ফুটবলকে সেই বব মার্লে বলেছেন- “ফুটবল হল স্বাধীনতা, ফুটবল হল গোটা একটি বিশ্ব।”

আমৃত্যু বব মার্লে তিনটা জিনিসের অনুরাগী ছিলেন। মার্লের লাল রঙয়ের গিবসন গিটার, মারিজুয়ানার কুঁড়ি, এবং ফুটবল! গানের সাথে তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন গিটার, মারিজুয়ানা এবং চামড়ার গোলক। যেন একেকটা কিক উড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর একেকটা অনাচার। যেন ফুটবলের একেকটা শট লক্ষ্যভেদ করে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের চোয়াল। আর আঁচড়ে পড়ছে মুখোশের আড়ালে মানুষের।

"বব কখনো বল হারাতে চাইতো না। ওর দৌড়, শক্তিমত্তা অন্য সবার চেয়ে আলাদা ছিল। মিডফিল্ডে তার প্রভাব ছিলো প্রফেশনাল ফুটবলারদের মতোই। সে ছিলো আগ্রাসী মনোভাবের মানুষ। যখন কিক করতো তখন সত্যিকার অর্থেই কঠিনভাবে কিক করতো। মার্লের ক্ষিপ্রগতির কিক আমাদেরকে ভুগাতো। বড় মাঠে মার্লে খুবই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতো। যখনই সুযোগ পেতো, গোল করার চেষ্টা করতো।" কথাগুলো বব মার্লের বন্ধু নেভিল গ্যারিকের বলা।

গানে গানে মার্লে জীবনের জয়গান গেয়েছেন। আর ফুটবলের মাধ্যমে স্বাধীনতার সর্বোচ্চটা উপলব্ধি করেছেন। কিন্তু তার জীবন থেকে ফুটবল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে সবসময়ই। তার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বব মার্লে ফুটবল খেলে বেড়িয়েছেন মাঠে, গানের ফাঁকে, মঞ্চে, পার্কে কিংবা স্টেশনে। বব মার্লের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তের সাথে ফুটবল জড়িয়ে ছিল, যে বন্ধন তিনি কখনোই আলগা করেননি। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী থাবা তার কাছ থেকে ফুটবল কেড়ে নিতে সচেষ্ট ছিল সর্বদা। সহজিয়া রাস্তার পথিক হিসেবে বব মার্লে ‘রাস্তাফারিয়ান’ মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। যা আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রচলিত ‘রাস্তাফারি‘ নামে একটি সহজিয়া লোকধর্ম। মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর খুঁজে ফেরা বব মার্লেরা বিশ্বাস করেন ‘পৃথিবীতে সবার সমান অধিকার’।জটা চুলের বব মার্লে সেখানে খুঁজে পেয়েছিলেন জীবন।

বব মার্লে ছিলেন জন্মলগ্ন থেকে বর্ণ বৈষম্যের শিকার। সাদা-কালো ভেদ করে তিনি বলেছিলেন-আমি ঈশ্বরের দলে। মুক্তিকামী মানুষের দলে তিনি সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কিন্তু মুক্তিকামী মানুষের তো শত্রুর অভাব নেই। তাঁরও কোনকালে ছিল না। ১৯৭৭ সালে উপহার পাওয়া এক জোড়া বুট হয়েছিল তাঁর হন্তারক! ডান পায়ে বুটের সাথে থাকা তামার তার ক্ষত তৈরি করেছিল। শুরুতে পাত্তা না দিলেও একটা সময় ডাক্তার তাঁকে বলেছিল পায়ের পাতা বাদ দিতে। কিন্তু ঈশ্বরের দেওয়া কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাদ দেবে না বব মার্লে। চিকিৎসক এরই মাঝে পরীক্ষা করে জানালেন ‘লেন্টিজিনাস মেলানোমা’ নামের ত্বকের ক্যানসারের কথা। ফুটবল খেলতে পারবে না বলে বব মার্লে পায়ের পাতায় হাত দিতে দেয়নি ডাক্তারকে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছিল-বব মার্লেকে গুলি করে মারতে ব্যর্থ হয়ে সিআইএ মার্লের জন্য তেজস্ক্রিয় তামার তারের বুট পাঠিয়েছিল। সেখান থেকে তিন বছরের মধ্যে বব মার্লের সারা শরীরে ছড়িয়েছে ক্যানসার।

গানে গানে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার দাবিদার বব মার্লের কাছে ফুটবল ছিলো মুক্তির সংগীত। নিপীড়িত মানুষের মুক্তি খুঁজে বেড়ানো সেই বব মার্লেকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে যারা চেয়েছে তারাও আশ্রয় নিয়েছে ফুটবলের কাছে। কারণ ফুটবল আর গান, এই দুইটাই ছিলো বব মার্লের প্রাণ। যে ফুটবলকে তিনি প্রাণাধিক ভালোবাসতেন সেই ফুটবলের বুটই তাঁর মৃত্যুর উৎপত্তি! "আমি গান ভালোবেসেছিলাম, ফুটবলকে ভালোবাসারও আগে। যদি আমি ফুটবলকেই আগে ভালোবাসতাম তবে তা ভয়ংকর হতে পারত। ফুটবল খেলা আবার একই সাথে গান গাওয়া মারাত্মক ব্যাপার হতো। আমি শান্তির গান গাই, ভালোবাসার সুর ছড়াই; কিন্তু ফুটবল এমন এক খেলা যেখানে ডিফেন্ডার ট্যাকেল করলে একটা যুদ্ধের আবেশ ছড়িয়ে দেয়। যুদ্ধ আর শান্তি একই বিন্দুতে চলতে পারে না!" কথাগুলো ১৯৮০ সালে এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন বব মার্লে।

বব মার্লে পেশাদার ফুটবলার ছিলেন না, কিন্তু ফুটবল খেলার সময় তাঁর দেখা মিলতো প্রাণোচ্ছল। জন্মভূমি জ্যামাইকান ফুটবলার কার্ল ব্রাউন বলেন- "বয়েজ টাউনে আমি মার্লেকে ফুটবল খেলতে দেখতাম। সেই সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটে অবধি৷ ট্রেঞ্চ টাউনের তরুণদের কাছে বয়েজ টাউনে ফুটবল খেলতে পারা'টা স্বপ্নের মতো। সত্যি কথা বলতে কী, আমি এখনো খুঁজে বের করতে পারিনি মার্লে কোনটা বেশি ভালোবাসতো- ফুটবল নাকি গান!

কিংবদন্তী বব মার্লে প্রয়াত হয়েছেন ১৯৮১ সালের ১১ মে। মাত্র ছত্রিশ বছরের বয়সে তিনি জয় করেছেন গানের মুদ্রা আর ফুটবলের গান। গানকে তিনি গেয়েছেন ফুটবলের মাঠে। আর ফুটবলের বাঁক তিনি মুদ্রিত করেছেন গানের গলায় আর ভাবনায়। ট্যুর ম্যানেজার এলান কোল ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। উত্তর আমেরিকায় ফুটবল খেলেছেন, জ্যামাইকায় খেলেছেন, খেলেছেন হাইতিতে। বিশ্বকাপেও জ্যামাইকার হয়ে খেলেছেন। মার্লের আফসোস ছিল, এলান যেভাবে ফুটবল খেলে সেভাবে গান গাওয়ার!

জগৎবিখ্যাত এক শিল্পীর আফসোস জ্যামাইকার এক ফুটবলারের মতো খেলতে পারার! কী ভীষণ ভালোবাসা ফুটবলের জন্য...এভাবেই বিশ্ব সংগীতের অন্যতম পুরোধা বব মার্লে একটা ফুটবলময় জীবন পার করেছেন। দ্য গ্রেটেস্ট গেইম ফুটবলে খুঁজে ফিরেছেন জীবন, আর জীবনকে যাপনের গান। সংগীত ও ফুটবল মিলেমিশে তৈরি করেছে মোর দ্যান অ্যা গেইমের জয়গান। এখানেই ফুটবল অনন্য, এখানেই ফুটবল জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা বলে-মোর দ্যান অ্যা ক্লাব, প্রিমিয়ার লিগের দল লিভারপুল বলে-ইয়ু উইল নেভার ওয়াক এলোন আর বব মার্লে দুইটাকে নিয়ে গেছেন মোর দ্যান অ্যা গেইমে।

সক্রেটিস
পেলে-ম্যারাডোনার সময়ে যে খেলোয়াড় ফুটবলে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি সক্রেটিস। সক্রেটিস ফুটবল খেলার পাশাপাশি একজন জনদরদী ডাক্তার, সমাজ-সংস্কারক, গণতন্ত্রকামী এবং মানবতার দূত। স্বৈরাচার সরকারের আমলে ব্রাজিল যখন নিষ্পেষিত, দেশের মানুষ যখন অপশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট তখন ফুটবলকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী গণতন্ত্রের ঢেউ তুলেছিলেন সক্রেটিস। ‘ইয়েস টু লাভ, নো টু টেরর’ আন্দোলনের মাধ্যমে লিবিয়ায় সেই সময় চালিত আমেরিকান বোমা হামলা কিংবা ব্রাজিলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ‘ফেয়ার ইলেকশন নাও’ এর দাবানল। সক্রেটিস মূলত ডাক্তার সক্রেটিস। দিনে ফুটবল, তার ফাঁকে ডাক্তারি প্র্যাকটিস আর রাতে অনুশীলন, এই ছিল তাঁর রুটিন। তার সাথে সাথে তাঁকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য প্রতিবাদী সংগঠন। যাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিলেন সক্রেটিস।

অসম্ভব প্রতিভাবান সক্রেটিস তাঁর প্রজন্মের সৃষ্টিশীল ফুটবলারদের অন্যতম। গড়পড়তা লাতিন আমেরিকানদের মতো নন, বরং তিনি ছিলেন আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ফুটবলার। যা তাঁর সময়ে বিরলপ্রজ। ১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সক্রেটিস। কিন্তু শিরোপার শক্ত দাবিদার হয়েও তাঁর সময়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হয়েছিল। যা এখনো বিস্ময়ের রেশ বইয়ে দেয় ফুটবলযোদ্ধাদের মনে! ১৯৮৬ সালে সক্রেটিসের পেনাল্টি মিসের বিশ্বকাপ জিতে অমরত্বের খ্যাতি পায় ডিয়েগো ম্যারাডোনা নতুবা সেই খ্যাতি সক্রেটিসের হতে পারতো। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে বঞ্চিত করেছে। তা নাহলে সক্রেটিসের নেতৃত্বে সেই ব্রাজিল ছিল দুর্দান্ত এবং ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা।

ছোটবেলায় বাবাকে ভুগতে দেখেছিলেন সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে। বড় হয়ে নিজেও যখন দেখেন সামরিকতন্ত্র থেকে রেহাই পাচ্ছে না তাঁর দেশ, তখন নিজ ক্লাব করিন্থিয়ান্সেই চালু করেন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। যা পরবর্তীতে ‘করিন্থিয়ান্স ডেমোক্রেসি’ নামে স্বীকৃতি পায়। খেটে খাওয়া মানুষের ক্লাব হিসেবে ১৯৭৯ সালে সক্রেটিসের অনুপ্রেরণায় চালু হওয়া ‘করিন্থিয়ান্স ডেমোক্রেসি’ নিশ্চিত ব্রাজিলের সামরিক শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিল। গণতন্ত্রের জন্য চলা বিক্ষোভে উন্মাতাল হলে ব্রাজিলের তৎকালীন সরকার তাঁকে হুমকি দিয়ে রেখেছিল। ব্যর্থ আন্দোলনের ফসল তাঁকে ভোগ করতে হবে। ফলত তাঁকে দেশ ছাড়া করার প্রচ্ছন্ন হুমকিতে দেশব্যাপী শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। সেখান থেকে সরকার পতন ঘটে। তারপর দেশের মানুষ তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার জন্য চাপ দিলে সক্রেটিস বলেন: নেতা এবং রাজনীতিবিদ-এই দুইয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম বিভেদরেখা রয়েছে। আর সেটাই বজায় রাখতে চান তিনি। ফুটবলের মঞ্চে বারবার প্রতিবাদের ঝড় তোলা সক্রেটিস ফুটবল ছাড়ার পরেও তৎকালীন ব্রাজিলের সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। ফিফার পদ তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন অবলীলায়। শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানো সক্রেটিস আফসোস করে বলেছিলেন- ফুটবলের ব্যাপক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্রাজিলের ফুটবলাররা কেবলমাত্র শিক্ষার অভাবে তা ব্যবহার করতে পারে না দেশের পরিস্থিতি বদলানোর জন্য।

সক্রেটিস তাঁর সময় ছাপিয়ে পৌঁছে গেছেন বিশ্ব ছাড়িয়ে মহাবিশ্বে। ইতালিতে খেলতে যাওয়ার আগে ইতালির ফুটবল, প্লেয়ার সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন-ফুটবলার নয় বরং কয়লা খনির ইতিহাস জানি। লিবিয়ায় মার্কিন বোমা হামলার প্রতিবাদ তিনি জানিয়েছিলেন ইয়েস টু লাভের মাধ্যমে। আর এইসবের দীক্ষা তিনি হয়তোবা পেয়েছিলেন মানুষের চিরকালীন দুর্দশা দেখে নতুবা ফিদেল, চে কিংবা জন লেলন থেকে। ফুটবলে তিনি শিল্প এনেছেন, এনেছেন প্রতিবাদ আর অধিকার আদায়ের চিরকালীন সংগ্রাম। পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সক্রেটিসের মহান সংগ্রামকে পাথেয় করে ২০২২ সাল থেকে ব্যালন ডি অর পুরষ্কারের সাথে দেওয়া হচ্ছে ‘সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড’। প্রথমবার সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড জিতেছে সাদিও মানে। সেনেগালের ফরোয়ার্ড সাদিও মানে নিজ গ্রাম ও দেশের মানুষের জন্য তৈরি করেছে স্কুল, মেডিকেলসহ নানা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। যা তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ও সম্মান এনে দেয়। দ্বিতীয় সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ব্রাজিলিয়ান উইংঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বর্ণ-বৈষম্য দূরীকরণ এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ তাকে এনে দিয়েছে এই সম্মানজনক স্বীকৃতি।

সক্রেটিসকে লম্বা চুলের ফ্যাশন আইকন নন, নন ফ্যান্টাসিতে ভোগা কোন ফুটবলার। বরং তিনি ছিলেন ফুটবলার, ডাক্তার,দার্শনিক এবং গণতন্ত্রকামী। ক্লাবের কোন এক ফাইনালে ফাইনাল ম্যাচের জার্সিতে ‘ডেমোক্রেসিয়া’ লিখে শোরগোল ফেলে দেওয়া সেই মানবতার প্রতীককে স্প্যানিশ মিডিয়া আখ্যা দিয়েছিল ‘Not Athlete, Just Artist’ হিসেবে। সক্রেটিস আক্ষরিক অর্থেই তা ছিলেন; তিনি ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তী এবং মৃত্যু পরবর্তীতেও কিংবদন্তী। এমন দুর্লভ সম্মান আর কে পেয়েছেন!

আরও কিছু আখ্যান এবং মানবিক ফুটবলের ছিটেফোঁটা
যুগে যুগে ফুটবলের উন্মাদনা বেড়েই চলছে। সেই সাথে ফুটবলকে কেন্দ্র করে নানা মানবিক কাজ, দাতব্য কাজ এমনকি যুদ্ধ বন্ধের কাজেও দাঁড়িয়ে গেছে ফুটবল ও ফুটবলার। তেমনি এক আখ্যান নাইজেরিয়ার। বায়াফ্রা অঞ্চল আলাদা হওয়ার জন্য চলা যুদ্ধ থেমে গিয়েছিল পেলের জন্য। সান্তোসের হয়ে নাইজেরিয়ায় খেলতে যাওয়া খেলার জন্য যুদ্ধবিরতি হয়েছিল দুইদিন। কথিত আছে লোকজন চেয়ার নিয়ে স্টেডিয়ামে এসেছিল পেলেকে এক নজর দেখার জন্য। ফুটবলের গণ্ডি বিস্তৃত হয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রেও।

মেসির হাতে থাকা আর্মব্যান্ড ‘ইডুকেশন ফর অল’ স্লোগান ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। খেলার স্কোরের পাশে নো রুম ফর রেসিজম কিংবা তারকা প্লেয়ারদের জার্সি বিক্রি থেকে অঢেল অর্থ সারাবিশ্বে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাজে ব্যয় হচ্ছে অহরহ। তেমনি একটা পদক্ষেপ মেসির বিশ্বকাপ জেতানো ছয়টা জার্সি। ছয়টা জার্সি ব্রোকার হাউস সোথেবির নিলামে বিক্রি হয়েছে ৭৮ লাখ ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। তাছাড়া ফুটবলের মাধ্যমে মানবতার মহান দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত রাখার জন্য গ্রেটেস্ট এভার ফুটবলার (তর্কসাপেক্ষ) লিওনেল মেসি নিজের নামে ‘মেসি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠিত করে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে। যে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সিরিয়ার অর্ধ লক্ষাধিক শিশুকে শিক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। মোজাম্বিকের পনেরো হাজার ইশকুল পড়ুয়া শিশুর সকালের নাশতার ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া বার্সেলোনায় ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে মেসি ফাউন্ডেশনের সহায়তায়।

অন্যদিকে সময়ের আরেক গ্রেট ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও মানবিক কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট পারঙ্গম। পর্তুগাল থেকে ফিলিস্তিন, নেপাল থেকে জাপান সবখানে রোনালদো নিয়মিত বিরতিতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। এর মধ্যে পর্তুগালের মাদেইরা ক্যানসার নিরাময় কেন্দ্রে রোনালদো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের নিগৃহীত শিশুদের জন্য তার সহানুভূতি সবাই জানে। সিয়াম পালনের জন্য রোনালদো দান করেন দেড় মিলিয়ন মার্কিন ডলার (রুশ সংবাদ মাধ্যম স্পুটনিক নিউজ)। ফুটবল আর ফুটবলাররা মানবিক বলেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতায় পাওয়া বোনাস রোনালদো দান করে দেন দাতব্য সংস্থায় কিংবা এক শিশুর বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য আবেদন জানান সবার কাছে।

ফুটবলের শক্তি এতই প্রবল যে, স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পেলেকে বলেন- আমি রোনাল্ড রিগ্যান, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আপনার পরিচয় দেওয়া লাগবে না, আপনি পেলে তা সবাই জানে। কিংবা জীবদ্দশায় পেলেকে তুলনা করা হতো যিশুর সাথে। উত্তরে পেলে নিছক মজা করে বলেছিলেন- অনেক অঞ্চল/জায়গায় যিশু পৌঁছায়নি। কথাটা মজার ছলে হলেও তো সত্যি! ফুটবল কখনো কখনো হয়ে যায় দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক।

১৯৮৬ বিশ্বকাপের সময় ইংল্যান্ডের সাথে আর্জেন্টিনার ম্যাচটা আক্ষরিক অর্থেই পরিণত হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। সেখানে হ্যান্ড অব গডের জন্ম দেওয়া ম্যাচে ম্যারাডোনা করে বসেন শতাব্দীর সেরা গোল। যেটা আমাদের কাছে ফুটবলের শতাব্দীর সেরা গোল, সেটা ম্যারাডোনা ও আর্জেন্টিনার কাছে ফকল্যান্ড যুদ্ধ জয়ের শামিল। ১৩ জুন বিশ্বকাপ শুরু হয়, যুদ্ধ তখন শেষ হয়নি; মার্গারেট থ্যাচার বক্তৃতায় বলেন- 'বিশ্বাস করি ইংল্যান্ড দল স্পেনে দারুণ খেলার মাধ্যমে ফকল্যান্ডে যুদ্ধরতদের জন্যে অসাধারণ উদ্যম বয়ে আনবে। বিপরীতে খেলা শেষে আর্জেন্টাইনরা বলে “এটি ছিল যেন আমরা একটি দেশকে হারিয়েছি, শুধু একটি ফুটবল দলকে নয়”।

অন্যদিকে লিও মেসি ফাউন্ডেশন সারাবিশ্বে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ইউনিসেফের হয়ে প্রচারণা চালায়, সেখানে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অনুদান থাকে। এভাবে ফুটবল আর নিছক গোলের খেলাতে সীমাবদ্ধ নেই। ধীরে ধীরে ফুটবল পরিণত হয়েছে মোর দ্যান অ্যা গেইমে। সেখানে ফুটবলের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ বপন হয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার হাত ধরে। কাতালানদের জন্য স্বাধীন একটা দেশের স্বপ্নে বার্সেলোনার সভাপতিকে সামরিক শাসকদের হাতে প্রাণ দিতে হয়।

খেলার মাঠ থেকে কারাগারে যেতে হয় টোটাল ফুটবলের অন্যতম পুরোধা ইয়োহান ক্রুইফকে। সেখানে একটা রিবন প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় অসংখ্য মুক্তিকামী কাতালানদের হৃদয়ে। এভাবেই ফুটবল মোর দ্যান অ্যা গেইম। ফুটবল ফর লাইফ, ফুটবল ফর ফ্রিডম।

যেখানে যুগে যুগে বব মার্লে থেকে সক্রেটিস কিংবা একটা দেশের গোড়াপত্তনে নিজেদের বুট জোড়া দিয়ে মাঠ কাঁপানো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল; সবাই এক ও অভিন্ন।

  • মাসুদ পারভেজ রূপাই: কবি, প্রাবন্ধিক ও ফুটবল সমর্থক; ইমেইল: masud.khan121@gmail.com

আপনার মন্তব্য

আলোচিত