সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ১৮:৪৩

মুখোমুখি আমেরিকা-চীন : বেইজিং অভিমূখে মার্কিন রণতরী

পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্র অঞ্চল দক্ষিণ চীন সাগরের বেশির ভাগ অংশ বহুদিন ধরেই নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। সেখানে কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করেছে তারা।

এবার চীনের সেই একাধিপত্যে ভাগ বসাতে তৈরি আমেরিকা। জলভূমি দখলে বেইজিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে তারা। মার্কিনি নৌবাহিনীর রণতরী রওনা দিয়েছে সুবি এবং মিসচিফ রিফের দিকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন নৌসেনা অফিসার জানিয়েছেন ‘অপরেশন শুরু হয়ে গেছে...কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষও হয়ে যাবে।’

মার্কিন প্রতিরক্ষা সূত্রে খবর, সমুদ্র দখলের লড়াইয়ে চীনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলার পরিকল্পনা করেছে আমেরিকা। মার্কিনি রণতরীগুলোর সঙ্গেই থাকছে নজরদারি বিমান।

অন্যদিকে আমেরিকার এই চ্যালেঞ্জে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। জানিয়েছে নিজেদের অঞ্চলে কারোর খবরদারি তারা বরদাস্ত করবে না।

আমেরিকায় চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন ‘‘পেশিশক্তি দেখিয়ে এভাবে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের আগে ১০ বার ভাবা উচিত আমেরিকার, কোনও রকম প্ররোচনামূলক কার্যকলাপের ফলে যদি আঞ্চলিক শান্তি নষ্ট হয়, তার দায় আমেরিকার উপরেই বর্তাবে।’’

চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন ১২ মাইল পরিধির মধ্যে ইতিমধ্যেই কোনও মার্কিন রণতরী প্রবেশ করেছে কিনা সে বিষয়ে তারা বিস্তারিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

চীনের কড়া হুমকি
যেমনটা প্রত্যাশিত ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, এটি চীনের সার্বভৌমত্ব লংঘনের সামিল।

চীনের সরকারি গণমাধ্যমে এই ঘটনাকে এক নগ্ন উস্কানি বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। চীনের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র লু কাং অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন ইচ্ছে করেই দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

"যে কোন দেশের ইচ্ছাকৃত উস্কানির বিরুদ্ধে চীন শক্ত ব্যবস্থা নেবে...চীন তাদের আকাশ সীমা এবং সমুদ্র সীমার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।" চীনের "সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্বার্থে" আঘাত হানার বিরুদ্ধে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করে দেন।

কিন্তু চীন যাকে নিজের সমুদ্র সীমা বলে দাবি করছে, সেটিকে চীনের অনেক প্রতিবেশী দেশ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা হিসেবে।

২০১৩ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের ডুবন্ত কোরাল রীফের ওপর মাটি ফেলে চীন এই কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করে, এরপর সেখানে সামরিক ব্যবহারের উপযোগী রানওয়ে এবং লাইটহাউজও বসানো হয়। এসবের লক্ষ্য ছিল চীনের সমুদ্র সীমা দক্ষিণ চীন সাগরের অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত করা।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নিয়েছে জাপান
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যা দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা হিসেবে সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল, কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে সেটিকে নিজের বলে দাবি করা যায় না। ওয়াশিংটন পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতেও ঐ অঞ্চলে তাদের ভাষায় এরকম 'স্বাধীন সমুদ্রচলাচল অভিযান' পরিচালনা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানও একই ধরণের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, তারা এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছে।

দক্ষিণ চীন সাগর বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথগুলোর একটি। এই সমুদ্র পথে এখন বছরে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহন করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সে কারণেই চীনের মত এক অর্থনৈতিক পরাশক্তি এটিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে।

কিন্তু শুধু চীন নয়, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপিন্সও একইভাবে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে তাদের সীমানা বাড়াতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে জাপান, ফিলিপিন্স এবং ভিয়েতনামের পক্ষ নিয়ে ঐ অঞ্চলে সামরিক পেশি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে, তাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সামনে আরও বাড়বে বলে আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত