আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:২৮

পাকিস্তানে বন্যাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা

পাকিস্তানে বন্যা দুর্গত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করার পর হাজার হাজার মানুষ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

আরও অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হওয়ায় এসব রোগে ভুগে মৃতের সংখ্যা ৩১৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন তারা।

এবারের বর্ষা মওসুমে পাকিস্তানজুড়ে সাধারণ গড়ের চেয়েও তিন গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছ। এর সঙ্গে অতিরিক্ত গরমে উত্তরের পর্বতগুলোর হিমবাহ গলে নেমে আসা পানি যোগ হওয়ায় দেশটিতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানে এক তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।

প্রলয়ঙ্করী এ বন্যা ৫৫১ শিশু ও ৩১৮ জন নারীসহ এ পর্যন্ত ১৫৫৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এরপর পানি নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

বন্যার পানির তোড়ে ঘরবাড়ি, ফসল, সেতু, রাস্তা ও গবাদিপশু ভেসে গিয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব করা হয়েছে। বন্যার কারণে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। বদ্ধ জলাশয়ের নোংরা পানি পানে বাধ্য হওয়ায় তাদের মধ্যে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণের বিস্তার তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা হুঁশিয়ার করেছেন। পরিস্থিতিকে ‘ধারণারও বাইরে’ বলে বর্ণনা করেছে ইউনিসেফ।

বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে ২ থেকে ৬ মাসের মতো লেগে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন। পানি নামতে শুরু করার পর বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে এবং প্রধানত সিন্ধু প্রদেশে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, তীব্র ডায়রিয়া, চোখের সংক্রমণ ও চর্ম রোগের মতো বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, বন্যার পানি নামতে থাকার পর রোগ ছড়িয়ে পড়তে থাকায় ‘দ্বিতীয় আরেকটি বিপর্যয়ের’ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী এবং সরকার ও সামরিক বাহিনীর যৌথভাবে পরিচালিত জাতীয় বন্যা মোকাবেলা কেন্দ্রের প্রধান আহসান ইকবাল ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “ইতোমধ্যে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমাদের শঙ্কা, এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

বেলুচিস্তান প্রদেশে ইউনিসেফ পাকিস্তানের মাঠ পর্যায়ের প্রধান কর্মকর্তা গেরিডা বিরুকিলা পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত হৃদয়বিদারক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

মঙ্গলবার জেনিভায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, শিশুরা যেখানে থাকছে তার আশপাশে রাসায়নিক সার ও মলের কারণে বিষাক্ত হয়ে পড়া পুকুরগুলোতে ভাইরাস ও রোগের জীবাণু গিজগিজ করছে, কোথাও কোথাও এর কয়েক মিটার দূরেই শিশুরা ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছে।

কোনো বিকল্প না থাকায় অনেক পরিবার এসব পুকুরের পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা যেখানেই গেছি মরিয়াভাব ও হতাশা বাড়তে দেখেছি, বলেছেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত