সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জুন, ২০২৩ ০১:১৪

ওয়াগনারের ভয়ে মস্কো ছেড়েছেন পুতিন?

মস্কোর ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গেছে ওয়াগনার বাহিনী। শুক্রবার ওয়াগনার সেনাদের ওপর রুশ সেনারা রকেট হামলা চালায় বলে দাবি করেন বাহিনীটির প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। এর জবাবে ক্রেমলিনের সামরিক নেতৃবৃন্দকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়ে নিজ সেনাদের মস্কোর দিকে পাঠান তিনি।

শুক্রবার রাতেই ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার রোস্তোভ প্রদেশে প্রবেশ করে ওয়াগনার সেনারা। রাতারাতি ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে শনিবার ভোররাতে ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার রোস্তোভ অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং রোস্তোভ-অন-ডন নগরীর দখল নেয়। এসময় পুরো বাহিনীর নেতৃত্ব দেন প্রিগোজিন নিজে।

প্রথমে তারা রোস্তোভের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখল করে নেয়। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে পরিচালিত রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান রোস্তোভের এ সদর দপ্তর থেকেই পরিচালনা করা হতো।

পরে তারা সেখান থেকে ভোরোনেজ ও লিপিয়েৎস্ক নগরীর ওপর দিয়ে উত্তর দিক হয়ে মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াগনার বাহিনীর বহরটি প্রথমে রোস্তোভ থেকে ভোরোনেজে আসে। এরপর তারা লিপিয়েৎস্ক অঞ্চল ‍অতিক্রম করছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই অঞ্চলের গভর্নর আইগর আরতেমোনোভ। ওই বহরটিতে সাঁজোয়া যান এবং অন্তত একটি ট্যাংক রয়েছে বলে জানান তিনি।

এক টুইটে গভর্নর বলেন, ‘ওয়াগনার বাহিনী এ অঞ্চল অতিক্রম করছে। তবে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে আরতেমোনোভ বলেন, ‘আপনাদের সতর্ক করে বলা হচ্ছে- ঘরের বাইরে বের হবেন না এবং সব ধরনের ভ্রমণ এড়িয়ে চলবেন।’

লিপিয়েৎস্ক থেকে উত্তরে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো।

এর মধ্যে ওয়াগনার বাহিনী ভোরোনেজ অতিক্রমের সময় তাদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়ার বিমানবাহিনী। তাতেও দমানো যায়নি তাদের। রাশিয়ার বেসামরিক মানুষ দেশটির বিমানবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রিগোজিন।

এদিকে ওয়াগনার সেনারা যাতে কোনোভাবেই রাজধানী শহরে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য মস্কোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। লোহার ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে মস্কোর বিখ্যাত রেড স্কয়ারে।

এছাড়াও ঝুঁকি কমাতে সোমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন। মস্কোর বাসিন্দাদের যতদূর সম্ভব ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবগুলো নাগরিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।’

তবে এতকিছুর মধ্যেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কোথায় অবস্থান করছেন, তা নিয়ে চলছে জোর জল্পনা।

অবশ্য ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শনিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট মস্কোয় তার বাসভবন ক্রেমলিনে আছেন এবং সেখান থেকেই কাজ করছেন। তবে পুতিন ইতোমধ্যে বিশেষ বিমানে করে মস্কো ত্যাগ করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোরের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু পোস্টে বলা হয়েছে, পুতিনের বিশেষ এয়ারক্র্যাফট ‘দ্বিতীয়-৯৬-৩০০পিইউ’ শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা ১৬ মিনিটে মস্কো থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে চলে গেছে। বিশেষ ওই উড়োজাহাজ তেবর শহরের কাছে গিয়ে ট্র্যাকিং সার্ভিসের আওতার বাইরে চলে যায়।

অবশ্য এই তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো সংবাদমাধ্যম। পুতিন ওই এয়ারক্র্যাফটে ছিলেন কি না তা-ও জানা যায়নি।

টুইটারে ভাইসগ্রাড টোয়েন্টিফোর নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ফ্লাইটরাডারে পুতিনের এয়ারক্র্যাফটের মস্কো ত্যাগের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়েছে। পোস্টে বলা হয়, সেন্ট পিটার্সবার্গের উদ্দেশে মস্কো ত্যাগ করেছে পুতিনের বিমান। ওয়াগনার গ্রুপের সামরিক বহর এগিয়ে আসায় তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিনের। শুক্রবার তার সেনাদের ওপর প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ এনে রুশ হামলার বদলা নেয়ার অঙ্গীকার করেন প্রিগোজিন।

ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে নিজের ভাড়াটে বাহিনীর এমন বিদ্রোহে বেকায়দায় পড়ে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।

এই বাহিনী এতদিন ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে মস্কোর হয়ে লড়ছিল। কিন্তু শনিবার ওয়াগনারপ্রধানের রুশ সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। হঠাৎ এই বিদ্রোহকে ‘পিঠে ছুরি মারা হয়েছে’ বলে আখ্যা দিয়েছেন পুতিন।

টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘অতি উচ্চাভিলাষ ও কায়েমি স্বার্থ বিশ্বাসঘাতকতায় রূপ নিয়েছে। এটা রাশিয়া ও আমাদের জনগণের ওপর আঘাত। এ ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে পিতৃভূমিকে রক্ষায় আমাদের কর্মকাণ্ড হবে কঠোর।’

তবে বিদ্রোহকারীদের ‘শায়েস্তা’ করার ঘোষণা দিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুতিনকে নিয়ে ছড়াচ্ছে ভিন্ন খবর। খোদ পুতিনই নাকি মস্কো ছেড়ে কোথাও চলে গেছেন।

এদিকে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে প্রিগোজিন বলেছেন, তার লক্ষ্য ‘সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।’

রাশিয়ার নাগরিকদের ওয়াগনারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রিগোজিন মস্কোর সামরিক নেতৃত্বকে শাস্তির আওতায় আনার তাগিদ দেন।

এক অডিও বার্তায় তিনি জানান, বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে পুতিনের ভুল ধারণা রয়েছে। তিনি ও তার বাহিনী বিশ্বাসঘাতক নন, দেশপ্রেমিক।

ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া রুশ সামরিক অভিযানকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ওয়াগনারপ্রধানের এই বিরোধ নতুন নয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক নেতারা ওয়াগনার যোদ্ধাদের যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন প্রিগোজিন। তবে শুক্রবারের হামলার পর যুদ্ধে তাদের অবস্থান পাল্টে যায়।

তবে ওয়াগনার গ্রুপের সশস্ত্র বিদ্রোহকে এখন পর্যন্ত সামরিক অভ্যুত্থান বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, সরকারের ভেতর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি। কিন্তু এটা রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় সামরিক ব্যক্তিদের ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা এবং সে হিসেবে এই সশস্ত্র বিদ্রোহ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত