সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০৯:৩৮

প্রশ্নের মুখে মোসাদ

মোসাদ লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শক্তিশালী অবকাঠামো, প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকার পরও ইসরায়েলের গোয়েন্দ সংস্থা মোসাদ হামাসের হামলা পরিকল্পনার কথা আগে জানতে পারেনি। এ কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে আলোচিত-সমালোচিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘তাদের কোনো ধারণাই নেই এমন হামলা কীভাবে হলো।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত, গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী মিলে আগে থেকে হামাসের হামলার কোনো ধারণাই পায়নি। এ বিষয়টিকেই অত্যাশ্চর্য মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের সীমানার বাইরে গোপনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা, শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলি যাতে বিশেষ ধরনের অস্ত্র তৈরি বা সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা এবং দেশে-বিদেশে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলার ষড়যন্ত্র আগাম প্রতিরোধ করা, যেসব দেশে ইসরায়েলের অভিবাসন সংস্থা আইনত সক্রিয় হতে পারে না, সেই সব দেশ থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করে ‘মোসাদ'।

মোসাদের কাজের রিপোর্ট ও গোয়েন্দা তথ্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয়। এর নীতিমালা ও কার্যক্রম অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, যুক্তরাজ্যের এমআই৬ ও কানাডার সিএসআইএস এর অনুরূপ। মোসাদের হেডকোয়ার্টার তেলআবিবে।

বিবিসি জানায়, গত শনিবার হামাসের শত শত সশস্ত্র সদস্য ইসরায়েল আর গাজা উপত্যকার মধ্যকার সুরক্ষিত সীমানা অঞ্চল পার করে ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে। একই সময় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হাজার হাজার রকেট ছোড়া হয়।

বিবিসি জানায়, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিস্তৃত গোয়েন্দা সংস্থা। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের যেকোনো গোয়েন্দা সংস্থার তুলনায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নও সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভেতরেও তাদের গোয়েন্দা আছে। এ ছাড়া লেবানন, সিরিয়াসহ অন্যান্য অনেক দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যেও তাদের গোয়েন্দা রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের গুপ্তঘাতকের সাহায্যে হত্যা করেছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব নেতার কার্যক্রম আগে থেকে জেনে পদক্ষেপ নিত ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। তবে এবার হামাসের নজিরবিহীন হামলার আগাম ইঙ্গিত দিতে পুরো ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা।

বিবিসি জানায়. গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের সীমানা চিহ্নিত করা বেষ্টনীতে ক্যামেরার পাশাপাশি মোশন সেন্সরও রয়েছে, যার মাধ্যমে বেড়ার আশপাশের কোনো প্রাণীর নড়াচড়া শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া সীমান্তরক্ষীদের নিয়মিত টহল তো আছেই। গত শনিবার সংগঠিত হামলার মতো অভিযান আটকানোর জন্যই এই বেড়াগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে । তারপরও হামাস যোদ্ধারা বেড়া কেটে, সমুদ্রপথে বা প্যারাগ্লাইডারের সাহায্যে যেভাবে ইসরায়েলের সীমানার ভেতরে প্রবেশ করেছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ইসরায়েলের প্রশিক্ষিত গোয়েন্দাদের নাকের ডগায় থেকে হাজার হাজার রকেট জড়ো করা বা এমন সংগঠিত আক্রমণ করার জন্য নিশ্চিতভাবেই হামাস সদস্যরা ব্যাপক পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েলের গণমাধ্যম তাদের সেনাবাহিনী আর রাজনৈতিক নেতাদের এ প্রশ্নই করছে– কীভাবে এটা হওয়া সম্ভব হলো?

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই হামলার পর সবার মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কীভাবে এমন হামলা সম্ভব হলো। এ প্রশ্ন হয়তো অনেক বছর ধরে ইসরায়েলিদের মনের মধ্যে থাকবে।

কিন্তু এ মুহূর্তে ইসরায়েলের সামনে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। তাদের দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঢুকে পড়া হামাস সদস্যদের দমন করা আর সীমান্তবর্তী এলাকার ইসরায়েল অংশে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা নাগরিকদের মুক্ত করা এখন ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষের মূল চিন্তার বিষয়।

তাদের যেসব নাগরিক জিম্মি রয়েছেন, তাদের মুক্ত করার জন্য তাদের হয় হামাসের সঙ্গে আলোচনায় যেতে হবে অথবা সশস্ত্র উদ্ধার মিশনে নামতে হবে।

তবে ইসরায়েলের জন্য এর চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় হামাসের সমর্থকগোষ্ঠীদের সামাল দেয়া।

হামাস এরই মধ্যে অস্ত্রের জন্য তাদের মিত্র ইরান আর লেবাননভিত্তিক শিয়া সশস্ত্রগোষ্ঠী হেজবুল্লাহর কাছে সহায়তা চেয়েছে।

এখন গাজা উপত্যকা ছাড়িয়ে পশ্চিম তীরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়া আর দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমানা দিয়ে সশস্ত্র হেজবুল্লাহ সৈন্যদের প্রবেশ করা ঠেকানো ইসরায়েলের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত