ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ::

২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ২১:০৭

শান্তিগঞ্জে ধানের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা

বীজতলা বোনা থেকে শুরু করে রোপনের জন্য জমি তৈরি, তারপর ধানের চারা রোপন। কিছুদিন পর জমির আগাছা পরিষ্কার করা ও বর্ধনশীল ধানের চারায় মিশ্র সার ছিটানো, পাকার পর ধান কাটা ও বহন করে আনা, সব মিলিয়ে প্রতি কিয়ার (৩০ শতক) জমিতে খরচ হয় প্রায় দশ হাজার টাকা। বর্গাচাষীরা জমির মালিককে ৩ হাজার টাকা বা সেই মূল্যের ধান  পরিশোধ করতে হয়। তাদর জন্য এক কিয়ার জমিতে খরচ হয় প্রায় ১৩ হাজার টাকা। এ তো গেলো খরচের হিসাব। সঠিক পরিচর্যা শেষে ধান কাটার পর কিয়ার প্রতি কৃষকরা পান গড়ে ১৮ মন ধান।

বর্তমান মূল্যের যার বাজার দর ১৮ হাজার টাকা। জৈষ্ঠ্য মাসে এ ধানের দাম আরও বাড়বে। তবে বর্তমানের ধানের চেয়ে কিছুটা পাতলা হবে তখনকার ধানের ওজন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে শান্তিগঞ্জের হাওরগুলোতে।

উপজেলার প্রায় ষাট হাজার কৃষকের হাত ধরে ২২ হাজার ৬ শত ৫৪ হেক্টর জমি চাষ হয়েছে এবছর। এসব জমিতে উৎপাদিত ধান থেকে প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য ৩ শত ৮০ কোটি টাকা। ধানের এমন ভালো ফলনে খুশি উপজেলার ধান চাষীরা। তাদের মুখে এখন সোনালী হাসি। কৃষকরা জানান, ধানে মান বাড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুব বেশি ক্ষতি না করলে ধান চাষে কোনো ক্ষতি নেই। এখনো গৃহস্থালিতে লাভ আছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ২২ হাজার ৬ শত ৫৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে সবগুলো হাওরের মোট ধানের প্রায় ৬২. ১৮ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে হাওর এলাকার প্রায় ৭৫.৮৯ এবং নন হাওর এলাকার ৫.৫৮ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ৫৫ থেকে ৬০ হাজার বোরো চাষী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। নতুন ধান চাষের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখা গেছে কৃষকদের। ২৮ ও ২৯ জাতের ধানের চেয়ে ৮৮, ৮৯, নতুন ৯২, বিনা-২ সহ কিছু হাইব্রিড ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। ফল পেয়েছেন হাতে হাতে। ফলন ভালো হয়েছে৷ তারাতারি পেকে গিয়েছে। কৃষকরা বেশ উপকৃত হবেন। আগামীতে কৃষকরা নতুন ধানের প্রতি বেশি আগ্রহী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন উপজেলার কৃষক, কৃষাণী। তাদেরকে সহযোগিতা করছেন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। ধান শুকানোর পাশাপাশি কেউ কেউ গোখাদ্য হিসেবে খড়ও শুকিয়ে রাখছেন। এসব কাজ করতে ধান শুকানোর খলায় খলায় (ধান শুকানোর উঠান)  কৃষক পরিবারের ভিড় লক্ষ করা গিয়েছে৷ মাথায় ছাতা নিয়ে ধান নেড়ে দিচ্ছেন গৃহবধূ কৃষাণী। কৃষকরা জমি থেকে ধান এনে খলায় স্তুপ করে রাখছেন। ধান শুকানোতে এতো তাড়া কেনো জানতে চাইলে কৃষকরা জানান, যে কোনো সময় বৃষ্টি নেমে যেতে পারে। পানি চলে আসতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ধান শুকিয়ে ঘরে তুলতে চাই। এরকম রোদও হয় তো আর পাওয়া যাবে না। কৃষকরা বলছেন, এমন রোধ থাকলে আর সপ্তাহ দশ দিনের মধ্যে হাওরের সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।

দেখার হাওরের পাড়ের গ্রাম আস্তমা। এ গ্রামের কান্দিহাটির বাসিন্দা সত্তোর্ধ কৃষক শাহিদ আলী। তিনি জানান, গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো আমরা বিশ্বাস করি ধানেই মান। জীবনের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত কৃষি কাজ করেই জীবন কাটাচ্ছি। নিজের জমিতে যারা ধান চাষ করেন তারা বেশি লাভবান হবেন। যারা বর্গাচাষী তাদের লাভ একটু কম হবে। তবে লাভ হবেই। সঠিকভাবে ধান চাষ করলে জমিতে লাভ আছে। এখন খলায় আমাদের সারাদিন কাটে। শাহিদ আলীর এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন একই গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমীন ও বাবুল মিয়া।

শান্তিগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা সোহায়েল আহমদ বলেন, ২২ হাজার ৬ শত ৫৪ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো চাষ করেছেন কৃষকরা। নতুন বিভিন্ন জাতের ধান চাষে কিছুটা সফলতাও দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছি। কৃষকরা লাভবান হবেন। এ পর্যন্ত ৬২.১৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। ৫৫-৬০ হাজার কৃষক ভালোভাবেই ধান তুলতে পারবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত