সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ১৭:৩৩

ঋণ নিয়ে মালদ্বীপকে আইএমএফের সতর্কতা

ঋণের বোঝায় টালমাটাল দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশটির নতুন বন্ধুরা তাদেরকে বিপদে ফেলছে।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) গতকাল বুধবার সতর্ক করে জানিয়েছে যে, যে ভাবে সে দেশের সরকার বিদেশ থেকে ঋণের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে, তাতে ‘ঋণ সঙ্কট’ দেখা দিতে পারে সে দেশে।

সম্প্রতি ভারতের হাত ‘ছেড়ে’ চিনের হাত ‘ধরেছে’ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর সরকার। নভেম্বর মাসে মহম্মদ সোলিকে সরিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের আসনে বসেছেন ‘চিনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত মুইজ্জু। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেইজিং এবং মালের বন্ধুত্ব গভীর হতে দেখা গিয়েছে। মুইজ্জু সরকার গঠনের পর ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ মালদ্বীপকে তহবিল দিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চিনের শি জিনপিং সরকার।

সম্প্রতি বেজিং সফরে গিয়েছিলেন মুইজ্জু। ফিরে আসার পরেই উন্নয়নের জন্য ‘নিঃস্বার্থ সহায়তা’ করার জন্য চিনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে খবর, চিনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ধার নিয়েছে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর সরকার। যদিও সেই কারণেই মলদ্বীপ ঋণ সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে কি না, তা স্পষ্ট করেনি আইএমএফ।

বিদেশ থেকে ঋণবাবদ কত টাকা মলদ্বীপ নিয়েছে, তারও বিশদ বিবরণ দেয়নি আইএমএফ। তবে বিদেশি ঋণ নিয়ে মালদ্বীপ সরকারের ‘জরুরি নীতি সমন্বয়ের’ প্রয়োজন রয়েছে বলে স্পষ্ট করেছে আইএমএফ।

সে দেশের অর্থনীতির পর্যালোচনার পরে আইএমএফ বলেছে, ‘‘উল্লেখযোগ্য নীতিগত পরিবর্তন ছাড়াই মালদ্বীপের সামগ্রিক রাজস্বে ঘাটতি এবং ঋণ বৃদ্ধির অনুমান করা হচ্ছে।’

দেশটির সরকার সম্প্রতি সে দেশে একটি বিমানবন্দরের এলাকা বৃদ্ধি এবং হোটেলের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। যদিও আইএমএফ জানাচ্ছে, সে দেশের অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবং ঝুঁকি বেড়েছে। মালদ্বীপের মূল আকর্ষণ অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। নীল জলরাশি, ঝিকিমিকি লেগুন, সাদা বালির সৈকত, প্রচুর প্রবাল— দেশটিতে মন ভাল করার মতো জিনিসের অভাব নেই।

সম্প্রতি ‘ভারত-বৈরিতা’র জেরে ভারতীয়রাও মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দিয়েছেন। প্রতি বছর বহু ভারতীয় মালদ্বীপে ঘুরতে যেতেন। ভারতীয়দের বয়কটের জেরে দ্বীপরাষ্ট্রের পর্যটনও এ বার চাপের মুখে।

মুইজ্জুর রাজনৈতিক গুরু তথা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনও ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বেজিং থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিলেন। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ২০২১ সালের হিসাবে চিনের কাছ থেকে ঋণবাবদ মালদ্বীপের নেওয়া ৩০০ কোটি ডলারের ৪২ শতাংশ মেটানো বাকি ছিল। তার মধ্যেই আবার নতুন আশঙ্কার কথা শোনাল আইএমএফ।

সম্প্রতি, ভারত-মালদ্বীপের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন দেখেছে সারা বিশ্ব, যার সূত্রপাত চলতি বছরের গোড়া থেকে। সম্প্রতি লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ, এর পর মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী, মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ ভারত এবং মোদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়েছিল।

মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের চাপের মুখে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। কিন্তু সংঘাতের পরিস্থিতি তাতে প্রশমিত হয়নি। মালদ্বীপের ভেতরেও সমালোচনার মুখে পড়েন মুইজ্জু। এর পর সম্প্রতি আবার ভারতকে ১৫ মার্চের মধ্যে মালদ্বীপ থেকে সেনা সরানোর ‘আর্জি’ জানিয়েছিল মুইজ্জু সরকার। পরে দু’পক্ষের আলোচনার পর মুইজ্জু সরকার ঘোষণা করে, ১০ মে-র মধ্যে সে দেশ থেকে সেনা ‘প্রতিস্থাপন’ করবে ভারত। যদিও ভারত এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনও মন্তব্য করেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত