সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০১ জুন, ২০১৬ ০৯:৩৬

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ইরাকের ফালুজা শহর

ইরাকের ফালুজার রণক্ষেত্র থেকে মাত্র কয়েক শ পরিবার পালাতে পেরেছে। তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া ছবির পরিবারটি ফালুজার পাশের জেবেইল গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছে।

ইরাকের ফালুজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি বাহিনী ও জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র লড়াইয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শহরটি। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে ৫০ হাজার বেসামরিক লোক আটকা পড়েছে। তাদের নির্বিঘ্নে বের করে দিতে একটি নিরাপদ বহির্গমন পথ বা ‘করিডোর’ খুলে দিতে আবারও আহ্বান জানিয়েছে শরণার্থী অধিকার নিয়ে কর্মরত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।

সরকারি সেনারা সোমবার ফালুজায় প্রবেশের পর ‘চূড়ান্ত আক্রমণ’ শুরু করে। এখন সেখানে ঘটানো হচ্ছে হাজারো সেনা সমাবেশ। আইএসও শেষ রক্ষার চেষ্টায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লড়াইয়ে তাদের প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে পড়ছে সরকারি বাহিনী। এ অবস্থায় আইএস সরকারি বাহিনীর অগ্রযাত্রাকে মন্থর করতে সাধারণ লোকজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে।

নরওয়ের বৃহত্তম শরণার্থীবিষয়ক সংগঠন ‘নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল’ (এনআরসি) গতকাল মঙ্গলবার এ আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে আটকে পড়া মানুষের প্রাণহানি ঠেকাতে আবারও একটি নিরাপদ বহির্গমন পথ বা করিডোর খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির মহাসচিব ইয়ন এগেলন গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ফালুজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটতে চলেছে। সেখানে আটকে পড়া পরিবারগুলো দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে আছে। শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনো নিরাপদ পথ পাচ্ছে না তারা।

এনআরসির মহাসচিব এগেলন বলেন, ‘নয় দিনে ফালুজা থেকে শুধু একটি পরিবার পালিয়ে বের হতে পেরেছে বলে আমরা শুনেছি। অনেক দেরি ও আরও প্রাণহানি হওয়ার আগে বিবদমান পক্ষগুলোকে অবশ্যই বেসামরিক লোকদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার এখনই পথ করে দিতে হবে।’

ফালুজার অবরুদ্ধ বাসিন্দাদের জন্য জরুরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এগেলন বলেন, ‘শহরে যথেষ্ট পরিমাণে পানীয় জল নেই। শিগগিরই তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটবে। ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে আমরা যাতে সহায়তা করতে পারি, সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে তহবিল জোগান দিতে হবে।’

রয়টার্স বলেছে, আইএসের বিরুদ্ধে চলা অভিযানের মধ্যে ফালুজা থেকে ইরাকি সেনারা তাদের কবল থেকে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের দুজন নারীকে উদ্ধার করেছেন। এ ঘটনায় ইয়াজিদি সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত ইরাকি পার্লামেন্ট সদস্য ভিয়ান দাখিল এক টুইটার বার্তায় সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রাজধানী বাগদাদের মাত্র ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ শহর ফালুজা ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে আইএসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরটির পুনর্দখল নিতে ইরাকি বাহিনী গত ২২ মে থেকে সমন্বিত অভিযান শুরু করেছে। এরপর সেখান থেকে সাড়ে পাঁচ শর বেশি পরিবার পালাতে পেরেছে বলে খবরে বলা হয়। আর জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার বরাত দিয়ে গতকাল রয়টার্স জানায়, এক সপ্তাহে সেখান থেকে ৩ হাজার ৭০০ জনের মতো পালাতে পেরেছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান গতকাল এএফপিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি যোদ্ধারা সিরিয়ার রাকা শহরের কাছে আইএসের নিয়ন্ত্রণ থেকে কিছু এলাকার দখল নিয়ে নিয়েছেন। রাকাকে আইএসের ‘রাজধানী’ হিসেবে ধরা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত