অনলাইন ডেস্ক

০১ জুন, ২০১৬ ২৩:৩৯

সেরা ফল অর্জনকারীদের নিয়ে টিভি রিপোর্ট, ফের পরীক্ষা দিতে হবে ১০ শিক্ষার্থীকে

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর কিছু ভুল উত্তর দেওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে এবার সম্ভবত ওই প্রতিবেদনকেও ছাড়িয়ে গেছে ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনেকটা একই রকমের একটি প্রতিবেদন।

 এতে এইচএসসিতে কলা অনুষদ থেকে শীর্ষস্থান দখল করা বিহারের রুবি রায়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কী পড়ানো হয়? উত্তরে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এতে রান্না শেখানো হয়’। তবে ১৭ বছরের রুবি রায় একা নয়। এ তালিকায় রয়েছে ফলাফলের দিকে থেকে শীর্ষস্থানে থাকা আরও ৯ শিক্ষার্থী।

বিহারের শীর্ষস্থান অধিকারী ১০ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই ভিএন রায় কলেজের। এই কলেজটি রাজধানী পাটনা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে পরীক্ষায় ব্যাপক নকলের অভিযোগ রয়েছে।

গত সপ্তাহে এইচএসসির ফল প্রকাশের পর ভারতের বিহার প্রদেশের সেরা ১০ মেধাবীকে কিছু প্রশ্ন করে স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেল। ওই চ্যানেলের প্রশ্নোত্তরেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রান্না শেখানোর কথা বলেন রুবি রায়। একই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে বিহারে শীর্ষস্থান অধিকারী এক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয় পানি এবং এর সংকেত এইচ-২০’র মধ্যে সম্পর্ক কী? ওই শিক্ষার্থীও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।

টেলিভিশনের প্রতিবেদনে রাজ্যের সেরা শিক্ষার্থীদের এমন হাল দেখে রীতিমতো বিব্রত রাজ্য সরকার। এরইমধ্যে বিহারের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্যের ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে শীর্ষ ১০ শিক্ষার্থীকে (প্রতিবেদনে যাদের নাম উঠে এসেছে) নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। আগামী সপ্তাহে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বিহারের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হয় তাদের বদলে অন্য কেউ প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছে অথবা শিক্ষার্থীদের জমা দেওয়া উত্তরপত্র পরে অধিকতর ভালো কারও মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিহারের একটি স্কুলের দেয়াল বেয়ে নকল সরবরাহের চিত্র।

ভারতে পরীক্ষায় গণনকল নতুন কিছু নয়। গতবছর দেশটির এসএসসি পরীক্ষায় ব্যাপক নকলের চিত্র উঠে আসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এক পর্যায়ে পরীক্ষায় নকলে সহায়তাকারী প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হয়।

২০১৫ সালের মার্চে বিহার রাজ্যে মাধ্যমিক স্কুল সর্টিফিকেট পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং বন্ধুদের ভবনের দেয়াল বেয়ে উঠে নকল সরবরাহ করার চিত্র ছিল লক্ষ্যণীয়। বিষয়টি গণমাধ্যমের নজর কাড়লে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটা পুরো বিহারের চিত্র এমন নয়।
তখন শিক্ষামন্ত্রী পি কে শাহি বলেছিলেন, অভিভাবকদের সহায়তা ছাড়া  পরীক্ষায় নকল করা ঠেকানো যাবে না।

পি কে শাহি’র ভাষায়, প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই তিন থেকে চারজন নকলে সাহায্য করেছেন। তার মানে ষাট থেকে সত্তর লাখ মানুষ পরীক্ষার্থীদের নকলে সাহায্য করছেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে সামাল দিয়ে শত ভাগ সুষ্ঠু পরীক্ষা  অনুষ্ঠান করা কি সরকারের একার দায়িত্ব?

নকলের এ চিত্র শুধু পাবলিক পরীক্ষাতেই নয়। নিয়োগ পরীক্ষাতেও চলে এমন কাণ্ড। যেটা ঠেকাতে চলতি বছর খোলা মাঠে অন্তর্বাস পরিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেয় ভারতের সেনাবাহিনী।

বিহার রাজ্যের মুজাফফরপুর জেলায় সেনাবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আগেই অন্তর্বাস ছাড়া সব পোশাক খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। আর অন্তর্বাসেও কোনো নকল আছে কী না পরীক্ষা করে দেখেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অবশ্য খোলা মাঠের মধ্যে খালি গায়ে পরীক্ষা দেওয়ার ঘোষণায় ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার অজুহাত তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী। তবে সেই অজুহাতে কর্ণপাত করেননি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। শুধু লজ্জা নিবারণের জন্য অন্তর্বাসটুকু ছাড় দিয়ে সব পোশাক খুলে ফেলতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।

ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষায় গণনকলের ক্ষেত্রে বিহার রাজ্যের বদনাম দীর্ঘদিনের। এ কারণে অনেক চিন্তাভাবনা করে নিয়োগ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেয় সেনাবাহিনী। এই সিদ্ধান্তেরই বাস্তবায়ন হলো খোলা মাঠে শুধু অন্তর্বাস পরে পরীক্ষা। আর পরীক্ষার্থীদের বসানোও হয় বেশ দূরে দূরে। সূত্র: এনডিটিভি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত