সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ জুলাই, ২০১৬ ১৯:৩৬

ট্রাকও এখন অস্ত্র!

কঠোর ইসলামিক অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে খলিফাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা আইএস মূল উদ্দেশ্য ছিল। এই কারণেই আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ছিলেন আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি।  কিন্তু যতই ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস কোণঠাসা হচ্ছে ততই আল কায়েদার পথে ফিরতে শুরু করেছে আইএস। কিন্তু আল কায়েদা যেমন সেল বা মডিউল তৈরি করে লক্ষ্যে আঘাত হানত, সে পথে যাচ্ছে না আইএস। বরং প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পশ্চিমী যুবক, যুবতীদের জেহাদে দীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আর তারা কখনও দল বেঁধে (প্যারিস, ফ্রান্স), কখনও একলা (সান বার্নার্ডিনো, আমেরিকা) হামলা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় ‘লোন উলফ অ্যাটাক’।

যদিও নিসের হামলার দায় এখনও স্বীকার করেনি ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় নিসের হামলার উদ্‌যাপন শুরু হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সের ‘কৃতকর্ম’-ই যে ফ্রান্সকে এই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে, তা জোর দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে নিস অ্যাটাক হ্যাশ ট্যাগ (#nice attack) তৈরি হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই হ্যাশ ট্যাগ বেশি বেশি করে ব্যবহার করতে দখল নিতে সমমনোভাবাপন্নদের উৎসাহ দিচ্ছে আইএসের ডিজিটাল জেহাদিরা। এর মধ্যেই এই হামলার প্রশংসায় একাধিক পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে আইএস পন্থীরা।

ফ্রান্সে হামলায় অস্ত্র ও গোলাবারুদে ভর্তি ট্রাকটি থেকে পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে চালক নিসের বাসিন্দা। জন্ম তিউনিশিয়ায় হলেও ফ্রান্সের নাগরিক। বয়স ৩১ বছর। আইএস জেহাদিদের অনেকেই তিউনিশিয়ার বাসিন্দা। ফলে এই ঘটনার সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। যে ভাবে ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে একটি ট্রাককে হামলার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে তাও বিশেষজ্ঞদের চিন্তার কারণ। জেহাদি আদর্শে দীক্ষিত কোন যুবক-যুবতী  যে কোনও সময়ে হামলা চালাতে পারে। তাদের কাছে থাকা যে কোনও জিনিসই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আল কায়েদা সাংগঠনিক কাঠামো মেনে বিভিন্ন সেলে ভাগ হয়ে কাজ করে। কিন্তু আইএস অনেক ক্ষেত্রেই কাঠামো বহির্ভূত পথে নাশকতা চালায়। আইএসের সংগঠন অনেক ছড়ানো-ছেটানো। তার মধ্যে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেহাদে দীক্ষিত হয়ে যারা আইএস-এর হয়ে হামলা চালানোর ছক কষে, তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন। ফলে আগাম হামলা ঠেকানো খুব শক্ত। তার উপরে এ ভাবে একটি হামলা সফল হলে অন্য জেহাদিদের মধ্যে এই ধরনের হামলা চালানোর উৎসাহ বাড়ে। এই ‘লোন উলফ অ্যাটাকই’ আগামী দিনে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দিন নিশ্চিত ভাবে ইরাক ও সিরিয়াতে আইএস-এর পতন হবে। নিজভূম থেকে আইএসকে মুছে ফেলা সম্ভব হলেও জেহাদিদের মনভূমি থেকে আইএস-কে মুছে ফেলা কার্যত অসম্ভব।
সূত্র : আনন্দবাজার

আপনার মন্তব্য

আলোচিত