অনলাইন ডেস্ক

২৬ জুলাই, ২০১৬ ০২:২৮

ভারতে ধর্ষণ কেন বারবার?

ভারতের পার্বত্য রাজ্য হিমাচল প্রদেশে পঁচিশ বছর বয়সী এক ইসরায়েলি মহিলা পর্যটক চলন্ত গাড়িতে ধর্ষিতা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজ্য পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই গাড়িটিকে তারা আটক করেছেন এবং অভিযুক্ত দুজন ধর্ষণকারীও ধরা পড়েছে।

ভারতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার অভিযান ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন সত্ত্বেও ধর্ষণের ঘটনা ক্রমশই বেড়ে চলেছে, বিদেশি পর্যটকরাও প্রায় নিয়মিত এর শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সেখানে কেন এই পরিস্থিতি – সরকারি কর্মকর্তা বা সমাজতাত্ত্বিকরাই বা কী বলছেন?

হিমাচল প্রদেশের কুলু ও মানালি বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয় – আর সেই মানালি থেকেই গতকাল ভোররাতে একটি গাড়িতে চেপে কাছেই কিলং নামে একটি জায়গায় যাওয়ার সময় ধর্ষিতা হন এক ইসরায়েলি তরুণী।

কুলু জেলার পুলিশ সুপার পদম চাঁদ জানিয়েছেন, ওই পর্যটক দুষ্কৃতীদের গাড়িটিকে ভুল করে একটি ট্যাক্সি ভেবেছিলেন।

পদম চাঁদ বলেন, ‘‘রবিবার ভোর চারটে নাগাদ একটি নির্জন জায়গায় ওই ইসরায়েলি পর্যটক গাড়িটিতে চাপেন। গাড়িতে মোট ছজন আরোহী ছিল, তাদের মধ্যে দুজন একটু দূরে নিয়ে গিয়ে গাড়ির ভেতরেই তাকে ধর্ষণ করে।’’

‘‘পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে গাড়িটিকে আমরা জব্দ করেছি, অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন ধরাও পড়েছে। ভিক্টিমের মেডিক্যাল পরীক্ষা ও চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

দিল্লিতে ইসরায়েলি দূতাবাসকেও এই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তিন বছর আগে মানালিতে মার্কিন এক পর্যটককেও একটি ট্রাকের ওপর তিনজন মিলে ধর্ষণ করেছিল। বছরদুয়েক আগে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসের খুব কাছে গণধর্ষণ করা হয়েছিল ডেনিশ এক মহিলাকে।

দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল মনে করেন, ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তির হার খুব কম বলেই এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘‘আজ (সোমবার) সকালেই আমি চার বছরের একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখতে গেছিলাম, যাকে তিরিশ বছরের এক পুরুষ নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছে। গতকালই দিল্লিতে ধর্ষণের শিকার একটি চোদ্দ বছরের মেয়ে মারা গেছে, যে গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল।’’

‘‘বিদেশি পর্যটকই হোক বা ভারতীয় নাগরিক, আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে – কারণ ধর্ষণকারীরা খুব ভাল করে জানে এই ধরনের ঘটনায় শাস্তির হার এত কম যে তারা ঠিক পার পেয়ে যাবে, তাদের কিচ্ছুটি হবে না! ’’

২০১২তে দিল্লিতে চলন্ত বাসে নির্ভয়া নামে পরিচিত এক মেডিক্যাল ছাত্রীর গণধর্ষণের নৃশংস ঘটনার পর ভারতে তুমুল প্রতিবাদ-আন্দোলন হয়েছে, এমন কী পার্লামেন্ট দেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা বদলে নতুন আইনও করেছে। কিন্তু তার পরও সারা দেশে ধর্ষণের হার এতটুকুও কমেনি – আর সমাজতাত্ত্বিক আশিস নন্দীর মতে, এই সমস্যার বীজ নিহিত আছে এ যুগের ছিন্নমূল সামাজিক বা পারিবারিক কাঠামোতে।

তিনি আরও বলেন, ‘‘সমাজের একটা বড় অংশের শেকড়গুলো  ছিঁড়ে গেছে, তারা শেকড়হীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ছিন্নমূলতা কিন্তু প্রধানত এথিক্যাল – যার ফলে যেগুলোকে আমরা ভয়ানক অপরাধ বলে মনে করি, সেগুলো তাদের কাছে ততটা ভয়ানক বলে মনে হচ্ছে না। তাদের এথিক্যাল বা নৈতিক চেতনাগুলোই আসলে ভোঁতা হয়ে গেছে।’’

তবে আধুনিকতার এই উপসর্গ শুধু ভারতের বৈশিষ্ট্য নয় – আরও নানা দেশে নানা আকারেই দেখা গেছে বলে আশিস নন্দী বলছেন। ‘‘আগে থাইল্যান্ডেও এই জিনিস ঘটেছে, যেখানে প্রচুর বিদেশি পর্যটক যান – এমন কী আমেরিকাতেও ঘটেছে’’, বলছেন তিনি।

তবে ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনায় যে ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক, এই সব ঘটনায় এই দেশটি যে মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয় ভারতের এই ছবিটাই আরও বেশি করে ফুটে উঠছে।

জেমস বন্ড সিরিজের ইটালিয়ান অভিনেত্রী ক্যাটরিন মুরিনোও এদিন ভারতে এসে বলেছেন – এ দেশে ধর্ষণের কথা ভেবে তিনি রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেননি।

মানালিতে ইসরায়েলি পর্যটক ধর্ষিতা হওয়ার পর ভারতের সেই ছবিটাই যে আরও ভয়াবহ ও বিষণ্ণ হয়ে উঠবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
সূত্র : শুভজ্যোতি ঘোষ, বিবিসি বাংলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত