সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:৫৫

যুদ্ধ নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ভারত

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে ভয়াবহ হামলায় প্রথমে ভারত সরকার পাকিস্তানকে দোষারোপ করে সরাসরি কিছু বলেনি।

তবে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে সব ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার সিনিয়র মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সরকারের পক্ষ থেকে সিনিয়র মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ বলেছেন, ‘পাকিস্তানের কাজকর্ম সহ্যসীমার বাইরে চলে গেছে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আর কখনো আগের মতো হবে না।’ পাকিস্তান অস্বীকার করলেও হামলায় এর সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আর ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং হামলার পরই পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে আখ্যায়িত করেন।

তবে কাশ্মিরের উরি ক্যান্টনমেন্টে ওই হামলায় জড়িত থাকার কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি নয়াদিল্লির এমন ‘অপরিপক্ক’ অভিযোগের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসলামাবাদ। বলেছে, জম্মু কাশ্মিরের মানুষদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ভারত এ অভিযোগ তুলছে।

ভারত আঘাত করলে পাল্টা প্রতিঘাত করতেও পাকিস্তান প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে।

বুধবারের জাতিসংঘ সাধারণ সম্মেলনের জন্য অনেকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। উদ্দেশ্য, নিজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে আরেক ধাপ তুলে ধরা এবং ভারত-পাকিস্তানের বিরোধের অন্যতম বিষয় কাশ্মিরে ভারতের সহিংসতায় নিন্দার মাধ্যমে পাকিস্তানকে দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করা।

তবে রোববার ভারত নিয়ন্ত্রণাধীন জম্মু কাশ্মিরে সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ সেনা সদস্য ও ৪ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। সোমবার আহত সেনাদের মধ্যে আরেকজন মারা গেলে মৃত সেনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮তে।

গত এক দশকে কাশ্মিরে সবচেয়ে ভয়াবহ এই হামলার পর ঘটনাটি শুধু ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ পরিচয় থেকে রাজনৈতিক দিকে মোড় নিয়েছে। দিল্লির অনেক রাজনৈতিক নেতা এবং সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এর সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার দাবি করছেন। বলছেন, হামলাকারীদের মদদদাতা হচ্ছে খোদ পাকিস্তান।

এ ঘটনায় ভারতে শোক ও তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানকে তীব্র পাল্টা জবাব দেয়ার জোরালো দাবি জানায় ভারতীয় সেনাবাহিনী।

সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক কর্মকাণ্ড বিষয়ক ডিরেক্টর অব জেনারেল (ডিজিএমও) জানান, হামলাকারী চার ‘ফিদায়িন’ (আত্মঘাতী মিশন পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি)-এর কেউই ভারতীয় নয়। তাদের কিছু সরঞ্জাম পাকিস্তানের বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সব মিলিয়ে পাকিস্তানের বৈশ্বিক পরিস্থিতি এখন বেশ জটিলতার মুখে। কেননা জাতিসংঘ সম্মেলনে কাশ্মির ইস্যু নিয়েই কথা বলতে চাইছিলেন নওয়াজ শরীফ। হামলার পর এখন ভারতের সামনে এই ইস্যু তুলে কতটা সুবিধা হবে সেটাই দেখার বিষয়।

কেননা ভারত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, সরকার অবশ্যই পাকিস্তানকে এই হামলার জবাব দেবে বিভিন্নভাবে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সম্মেলনেও এ বিষয়টি তোলা হবে।

ভারত-পাকিস্তানের নতুনভাবে জেগে ওঠা এ দ্বন্দ্ব সম্মুখযুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায় কিনা - এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত