সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২২:১৪

৩৬টি যুদ্ধবিমান কিনতে ৮৮০ কোটি ডলারের চুক্তি করলো ভারত

মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সামরিক উচ্চাভিলাসের সঙ্গে যুক্ত হলো আরেকটি বড় মাপের চুক্তি। ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে ৩৬টি রাফাল জঙ্গিবিমান কিনতে ৮৮০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে ভারত। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে অন্যতম চুক্তি এটি।

এতো বড় বাজেটের সমরাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নিল দিল্লি, যখন কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে। দুই দেশের ‍যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাকযুদ্ধও চলছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত।

তবে ফ্রান্সের সঙ্গে এই চুক্তিটি নিয়ে অনেক দিন ধরেই জটিল আলোচনা পর্যালোচনা চলছিল। অবশেষে শুক্রবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার ও ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যঁ ইয়েভস লে দ্রিয়াঁ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করলেন।


এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যাধুনিক এ বিমানগুলো ভারতের যুদ্ধবিমানবহরে আলাদা মাত্রা যোগ করবে। রাশিয়ার কাছ থেকে নেয়া মিগ-২১ বিমানগুলোর বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে এসব বিমানকে এখন “উড়ন্ত কফিন” আখ্যা দেয়া হচ্ছে।

বিজেপির নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সমরাস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারত বেশ কয়েকটি বড় অস্ত্র আমদানি চুক্তি করেছে। প্রতিবেশী প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন ও পাকিস্তানকে টেক্কা দিতেই ভারত সামরিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

ভারতের বিমান বাহিনীতে মাত্র ৩৩টি স্কোয়াড্রন। চীন এবং পাকিস্তানের মোকাবেলা করতে হলে তার দরকার ৪৫ স্কোয়াড্রন। যেখানে সীমান্ত বিরোধ তো বহুদিন থেকেই চলে আসছে সঙ্গে রয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তান।
এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ প্রশাসনের জোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাফালকে বিদেশী ক্রেতা পেতে অনেক খাটুনি করতে হয়েছে। শুক্রবারের চুক্তিটি রাফালের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বাড়াবে তাতে সন্দেহ নেই।

২০১২ সাল থেকেই এই চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছিল। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে চার বছর ধরে ঝুলে ছিল। চার বছর আগে ভারত ১২৬টি রাফাল বিমান কেনার আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু এর দাম ও অন্যান্য খরচ এবং অ্যাসেম্বলি জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা ৩৬ এ নামে।

২০১৫ সালে প্যারিস সফরের সময়ই মোদি ঘোষণা দেন, সামরিক খাতে আধুনিকায়নে তার সরকার যুদ্ধবিমান কিনতে সম্মত হয়েছে। অবশ্য এরপরও বিভিন্ন কারণে তা পেছাতে থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ দিল্লি সফরের সময় এ বিষয়ে কথা বলেন।

এই চুক্তির আওতায় আকাশে উড়ার যোগ্য হয়ে প্রথম বিমানটি ভারতে ২০১৯ সালের মধ্যে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর ছয় বছরের মধ্যে ৩৬টি বিমানের সবক’টি যুক্ত হবে দিল্লির যুদ্ধবিমান বহরে।
ভারতের নিজস্ব নির্মিত ফাইটার বিমান ‘তেজ’ গত ৩৩ জুলাই আকাশে উড়েছে। নিজস্ব প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানে ভারতের এগিয়ে যাওয়ার এটি একটি বড় নজির। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর বলছেন, রাশিয়ার মিগ-২১ অচল হয়ে যাচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে এই স্থান পূরণের জন্য ১০০ নতুন হালকা কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট লাগবে তাদের।

শুক্রবারের চুক্তির ফলে ভারতই এখন পর্যন্ত রাফালের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এর আগে ২০১৫ সালে মিশর কিনেছিল ২৪টি এবং একই বছরের শেষ দিকে কাতারও সমসংখ্যক কিনে।

রাফালকে অত্যন্ত দক্ষ বহুমুখি যুদ্ধবিমান বলা হয়। খুব সম্প্রতি সিরিয়া এবং ইরাকে আইএস এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বোম্বিং মিশন পরিচালনা করা হয় এই বিমান দিয়ে। এছাড়া লিবিয়া এবং আফগানিস্তানে বিমান হামলাতেও এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স

আপনার মন্তব্য

আলোচিত