নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০১:৪৫

কলকাতায় অরিন্দম স্মরণ

অজস্র মোমবাতির আলোকশিখা প্রজ্বলন ও এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী, মুক্তমনা, যুক্তিবাদী, প্রগতিশীল চিন্তার কর্মী অরিন্দম মুন্সীকে স্মরণ করল বাক-স্বাধীনতা, বিজ্ঞানের প্রসার এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে দুই বাংলার মুক্তমনা মানুষদের সংগঠন পূর্ব-পশ্চিম।

শনিবার (৫ নভেম্বর) কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউটের লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত এক স্মরণ সভায় কলকাতা ও আশপাশের এলাকা থেকে মুক্তমনারা অংশ নেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অরিন্দম মুন্সীর পরিবারের সদস্যরা সহ বাংলাদেশ থেকে যোগ দেওয়া কয়েকজনও।

সভার শুরুতেই একদা অরিন্দম যে কলেজে পড়তেন সেই বেলেঘাটা গুরুদাস কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক শ্রী দুলালকৃষ্ণ বিশ্বাস বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন “আজ আমি পুত্রহারা এক বাবার ন্যায় শোক পেলাম! অরিন্দম যে কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন তা জানতে পেরেছি, পরবর্তীকালে তাঁর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ভূমিকা, যুক্তিবাদ তথা নাস্তিকতাবাদ আমাকে আকৃষ্ট করেছে বারে বারে”।

এরপর সভায় রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন অরিন্দমের দিদি অরণী মুন্সী, ছোট বোন অরুণিমা। সভায় ২০ জন বক্তার মধ্যে একদা তাঁর ছাত্র রাজনীতির বন্ধু অমিত রায় চৌধুরী, প্রতীপ নাগ, তাঁর ছাত্র জীবনের নানান সংগ্রামের কথা,সংগঠক হিসাবে অরিন্দমের ব্যাপক পরিচিতির কথাই বক্তাদের স্মৃতি চারণায় উঠে আসে অনেক অজানা কথা।

শ্রী তাপস মুখার্জির উদাত্ত কণ্ঠের গানে, “মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশ খানি দিও” অথবা যখন অরিন্দম যার গান শুনতে খুবই ভালোবাসতো, সেই শবনম সুরিতা (ডানা) যখন গেয়ে ওঠেন, “আজি বিজন ঘরে...” তখন অনেকেরই চোখ জলে ভরে যায়।

সভায় তাঁর নাস্তিকতাবাদের চর্চা, ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রামের কথা, দুই বাংলার মুক্তমনা মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনে তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও সারাবাংলা ভগৎ সিং চর্চা কেন্দ্রের মুখ্য আহবায়ক সুরেশ কুণ্ডু, সাধন বিশ্বাস প্রমুখ।

অপরদিকে অমিতাভ সাহা রায়, ধীরাজ দন্ডপাট, রথীন্দ্র নাথ দাস, শুভপ্রতীম চৌধুরী ও অমিত মিত্রসহ অনুজপ্রতিম,অরিন্দমের দীর্ঘদিনের কর্মজীবনের সাথী, সমীন্দ্র সরকার, কুশল সান্যালরা ব্যক্তি মানুষ অরিন্দমের সরলতা, উদারতা, কর্মকুশলতার কথাই তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ থেকে আসা মুক্তমনা সঙ্গীতা ঘোষসহ আরও অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন।

সভায় তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশের সাথে সাথে আজ দুই বাংলায় যেভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ধর্মীয় মৌলবাদ-এর আক্রমণ নেমে আসছে সাধারণ মানুষের উপর তারও নিন্দা করেন অনেকেই। অনেকেই আজ অরিন্দম মুন্সীর অভাব অনুভব করার কথা বলেন।

দুই বাংলার প্রগতিশীল, মুক্তমনা আন্দোলনের মানুষকে একত্রিত করার যে স্বপ্ন অরিন্দম দেখতেন তাকে সাকার করার জন্য বাংলাদেশের মুক্তমনা চলচ্চিত্র পরিচালক রাকিবুল হাসান টেলিফোনের মাধ্যমে তার বক্তব্য দেন।

দীর্ঘক্ষণ সভা চলার পর সমবেত সঙ্গীতের মূর্ছনা- “আগুনের পরশ মনি ...."-র ছোঁয়ায়, প্রতিজ্ঞায়, অরিন্দম মুন্সীর মতো মুক্তমনা, সমাজ গড়ার কারিগরদের কাজ,তাঁর চেতনাকে আরো সম্প্রসারণ ,শোককে সংকল্পে পরিণত করার আহবান রেখে সভার পরিসমাপ্তি হয়।

সভা সঞ্চালনা করেন রবীন দাস ও অনুপম দাস অধিকারী। অনুষ্ঠানটির আয়োজক পূর্বপশ্চিম।

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী অরিন্দম মুন্সি ১৯ অক্টোবর বুধবার দিবাগত রাতে কলকাতার একটি নার্সিং হোমে মাত্র ৫২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত