ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:৫৭

৩০ লাখ অপরাধী অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে করা অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন সদ্যনির্বাচিত দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান দলীয় এই নেতা ও মার্কিন ধনকুবের বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসী যারা বিভিন্ন অপরাধ এবং বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্য তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাবেন।

একই সঙ্গে মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো দেশটির প্রভাবশালী টেলিভিশন সিবিএসের সিক্সটি মিনিট প্রোগ্রামে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় নির্বাচনের আগের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপের কথা জানান আলোচিত-সমালোচিত এ রিপাবলিকান দলীয় রাজনীতিক।

রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সিবিএসে ট্রাম্পের ওই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। এতে জোর দিয়ে ট্রাম্প বলেন, তার নির্বাচনী প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ করা।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় সদ্যনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকোর নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের অঙ্গীকার করেন। সে সময় প্রতিবেশি দেশ মেক্সিকোকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেছিলেন, তারা ধর্ষক ও অপরাধীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে।

সিক্সটি মিনিট প্রোগ্রামে ট্রাম্প বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর শিগগিরই তিনি ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠাবেন।

ট্রাম্প বলেন, আমরা যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি তারা হলেন; যারা অপরাধী এবং যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের রেকর্ড রয়েছে, কোনো গ্যাংয়ের সদস্য অথবা মাদক ব্যবসায়ী, প্রচুর সংখ্যক এমন মানুষ রয়েছে, সম্ভবত ২০ লাখ এমনকি তা ৩০ লাখও হতে পারে- আমরা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিতে যাচ্ছি অথবা কারাবন্দি করতে যাচ্ছি।

“আমরা তাদের দেশ থেকে বের করতে যাচ্ছি। তারা অবৈধভাবে এখানে আছে।”

সীমান্ত সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, একবার এটা করা গেলে ইমিগ্রেশন ব্যুরো ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট দেশে থেকে বাকি অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে ধারণা পাবে।

সীমান্ত সুরক্ষিত এবং সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে কারা ‘দুর্ধর্ষ’ তা বের করা যাবে বলে মনে করেন ট্রাম্প।

সাক্ষাৎকারে নির্বাচনে জয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকার কথা বলেছেন আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া ট্রাম্প। তবে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে টুইটার ও ফেইসবুক ব্যবহারে সংযত হওয়ার কথা বলছেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, সংবাদমাধ্যমে ‘নেতিবাচক খবর’ প্রচারের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া তাকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি পথ তৈরি দেয়।

সোশ্যাল মিডিয়াকে ‘অসাধারণ’ অভিহিত করেন তিনি। ট্রাম্প এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখছেন বলেই সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে দুই কোটি ৮০ লাখ মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান ট্রাম্প।

“এটা খুব ভালোবাসি তা আমি বলছি না। তবে এটা বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়।”

উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যে প্রয়োজন ছিল ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট, কিন্তু রিপাবলিকান দলীয় এ প্রার্থী পান ২৮৯ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন পান ২২৮ ইলেকটোরাল ভোট। এদিকে, ইলেকটোরাল কলেজ ভোট কম পেলেও পপুলার ভোট বেশি পান ডেমোক্রেট দলীয় হিলারি।

ট্রাম্পের জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের নানা শহরে ডেমোক্রেট দলীয় সমর্থকদের সৃষ্ট সহিংস বিক্ষোভ চলছে, যার মধ‌্যে অভিবাসীসহ অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনও রয়েছে। ভোটে জিতলেও ‘ট্রাম্পের পতন হোক’, ‘ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট নন’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলছে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, মিয়ামি, লস এঞ্জেলেস, সিয়াটল, ওকল্যান্ড ও পোর্টল্যান্ডসহ বিভিন্ন শহরে। এদিকে, বিক্ষোভের এঘটনাকে মিডিয়ার ইন্ধন ও ডেমোক্রেটদের বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেছেন সদ্যনির্বাচিত এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগামী জানুয়ারিতে তার ক্ষমতা গ্রহণের কথা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত