সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ১৯:৪৪

ব্রাজিলের ক্লাব ফুটবল টিম নিয়ে ভেঙে পড়ল বিমান, নিহত ৭৬

কোপা সুদামেরিকার ফাইনাল ম্যাচ ছিল বুধবার। কিন্তু, অ্যাটলেটিকো ন্যাশনালের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ আর খেলা হল না ব্রাজিল ক্যাপিকোয়েন্স-এর। মাঠে নামার আগেই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন টিমের বেশির ভাগ খেলোয়াড়। শুধু ক্যাপিকোয়েন্স টিমই নয়, ওই বিমানে ৯ কর্মী-সহ মোট ৮১ জন ছিলেন।

ওই ঘটনায় পাঁচ জন প্রাণে বেঁচেছেন। বাকি ৭৬ জনই নিহত হয়েছেন।

যে পাঁচ জন জীবিত রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে টিম ক্যাপিকোয়েন্স-এর ডিফেন্ডার আলান রাসেল এবং দুই গোলকিপার ডানিলো পাদিলহা এবং জ্যাকশন ফলম্যান রয়েছেন। অন্য দু’জনের সঙ্গে তাঁরাও হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়াতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছে না কলম্বিয়া প্রশাসন।

৭২ জন যাত্রী এবং ৯ বিমান কর্মীকে নিয়ে ওই বিমানটি কলম্বিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল সোমবার দুপুরে। স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বিমানটি ব্রাজিলের সাও পাওলো বিমানবন্দর থেকে উড়ান শুরু করে। এর পর বলিভিয়ার সান্তাক্রুজ বিমান বন্দরে প্লেনটি নামে। কিছু সময় পরে সেটি কলম্বিয়ার দিকে উড়ে যায়। কিন্তু, কলম্বিয়ার মেডেলিন বিমানবন্দরে অবতরণ করার আগেই ওই দিন স্থানীয় সময় রাত সওয়া ১০টা নাগাদ বিমানটি মাঝআকাশে ভেঙে পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধারকাজে উদ্যোগী হয়। কিন্তু, মেডেলিন-এর আবহাওয়া সেই সময় খুবই খারাপ ছিল। প্রবল ঝড়বৃষ্টির কারণে বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে শহরের বাইরের ওই পাহাড়ি এলাকায় ঠিক মতো উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়নি। মেডেলিন-এর পুলিশ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসে জেরার্দো অ্যাসেভেডো জানিয়েছেন, ৮১ জনের মধ্যে পাঁচ জন জীবিত রয়েছেন। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়।

ব্রাজিল থেকে কলম্বিয়ায় কোপা সুদামেরিকার ফাইনাল খেলতে যাওয়া ক্যাপিকোয়েন্স টিমের ২২ জন খেলোয়াড় ওই বিমানে ছিলেন। ২৩তম খেলোয়াড়ের আসার কথা থাকলেও তিনি শেষ মুহূর্তে বিমান ধরতে পারেননি। খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ওই বিমানে ২৩ জন ফুটবল সাংবাদিকও ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মেডিলিন-এর মেয়র মঙ্গলবার সকালে জানান, পাঁচ জনকে জীবিত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভাগ্য ভাল যে কোনও আবাসিক এলাকায় ওই বিমানটি ভেঙে পড়েনি! তা হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বহু গুণ বাড়ত।’’ মেডেলিন বিমান বন্দরের র‌্যাডার থেকে বিমানটি হারিয়ে যেতেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে উদ্ধারকারী দল রওনা দেয়। একে তো মধ্যরাত তার উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দুয়ে মিলে উদ্ধার কাজ চূড়ান্ত ভাবে ব্যহত হয়। ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার নামিয়ে উদ্ধার কাজ চালানো হয়। ছিল পুলিশ, দমকল এবং মেডিক্যাল টিমও।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি ব্রিটিশ এয়ারস্পেস ১৪৬ শর্ট-হলো মডেলের। একটা অংশের মতে ওই বিমানে জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই মাঝআকাশে আচমকাই পাহাড়ের গায়ে ভেঙে পড়ে। অন্য একটা অংশের দাবি, হঠাত্ করেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। বজ্রবিদ্যুত্-সহ প্রবল ঝড়বৃষ্টির কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে, সরকারি ভাবে এখনও বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানানো হয়নি। জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার মিনিট পনেরো আগে পাইলট বিমানে বৈদ্যুতিক গণ্ডগোলের কারণ দেখিয়ে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে জরুরি অবস্থার কথা ঘোষণা করেন। তার পরেই বিমানটি পাহাড়ের গায়ে ভেঙে পড়ে।

প্রিয় দলের খেলোয়াড়দের চূড়ান্ত পরিণতির আশঙ্কায় শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা বিশ্বে। ক্যাপিকোয়েন্স টিমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সাও পাওলো বিমানবন্দরে চেক ইন করছেন খেলোয়াড়েরা। বিমানের ভেতরে খেলোয়াড়দের মিঠে খুনসুটির ভিডিও-ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে থাকে। প্রিয় খেলোয়াড়দের মাঠের নানা মুহূর্তের ছবি পোস্ট করতে থাকেন ফ্যানেরা। যে তিন খেলোয়াড়কে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়, তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেও সকলে বার্তা পাঠাতে থাকেন।

দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সেই পেজে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া সামঞ্জস্যহীন খবর পাওয়া যাচ্ছে। খবরে বলা হচ্ছে, ক্যাপিকোয়েন্স-এর ডেলিগেশন টিম বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। আমরা যদিও এই প্রসঙ্গে কলম্বিয়ার বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষের সরকারি ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছি। ঈশ্বর অবশ্যই আমাদের ডেলিগেশন টিমের খেলোয়াড়, নেতৃত্ব, সাংবাদিক এবং অন্য অতিথিদের সঙ্গে রয়েছেন।’ বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব টুইট করে দুঃখপ্রকাশ করেছে।

ক্যাপিকোয়েন্স টিমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এই ভিডিওটি  প্রকাশ করা হয়েছে। কলম্বিয়া উড়ে যাওয়ার আগে বলিভিয়া বিমানবন্দরে তোলা।

বুধবার ক্যাপিকোয়েন্স-এর সঙ্গে কোপা সুদামেরিকার ফাইনাল ম্যাচ ছিল। তাদের প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো ন্যাশনালের তরফেও দুঃখপ্রকাশ করে পোস্ট করা হয়েছে টুইটারে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘ক্যাপিকোয়েন্স-এর খেলোয়াড়দের বিমান দুর্ঘটনার খবরে আমরা গভীর ভাবে সমবেদনা এবং দুঃখপ্রকাশ করছি। সরকারি ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।’

কোপা সুদামেরিকার ফাইনাল ম্যাচ এ বছরের জন্য অমীমাংসিত থেকে গেল!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত