সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৩:৩৯

টাইটানিকের রেপ্লিকা তৈরি হচ্ছে চীনে

টাইটানিক জাহাজ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল হিমশৈলের সঙ্গে সংঘর্ষে ডুবে যায়। সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ, আধুনিক ও বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল টাইটানিক।

টাইটানিক নিয়ে ছবিও হয়েছে একাধিক। ডি ক্যাপরিও আর কেট উইন্সলেট অভিনীত টাইটানিক ছবিটি অস্কার জয় ও ব্যবসাতেও রেকর্ড গড়েছে।

এবার ওই টাইটানিকের রেপ্লিকা তৈরি করছে চীনের সেভেন স্টার এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে কিজিয়াং নদীতে ভাসবে এই টাইটানিক। রোমানডিসী সেভেন স্টার ইন্টারন্যাশনাল কালচার ট্যুরিজম রিসোর্টে দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে এই টাইটানিক।



ঐতিহাসিক জাহাজটি দেখতে কেমন ছিলো সেটা দর্শকদের দেখানোর পাশাপাশি ওই জাহাজটি কীভাবে আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়, সেটিও দেখানো হবে দর্শকদের। হলিউডের নামকরা প্রডাকশন ডিজাইনার ও প্রডিউসার কার্টিস স্নেল এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন।

স্থায়ীভাবে এটিকে নোঙর করে রাখা হবে সিচুয়ান প্রদেশের একটি জলাশয়ে। জাহাজটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।

টাইটানিক জাহাজের চেয়েও বেশি কিছু উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি আসল টাইটানিকের মতো রেপ্লিকাটি তৈরি করতে। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। প্রতিটি রুম ঠিক টাইটানিকের মতো হবে না। তবে নতুন টাইটানিকের উপরিভাগ ও বাইরের সব অংশ একই রকম থাকবে। আর দর্শনার্থীরা জাহাজের বিভিন্ন রুম ঘুরে দেখতে পারবেন। সেসব রুম আসল টাইটানিকের আদলেই তৈরি করা হচ্ছে।’



সেভেন স্টারস কোম্পানির সিইও সু শাওজান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নতুন টাইটানিক তৈরির জন্য ১০০ কোটি ইয়েন অর্থাৎ ১১৬ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় ধরা হয়েছিল। এখন ওই ব্যয় আরো বেড়েছে। তার মতে, চীনের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই চায় এই প্রজেক্টটি হোক। টাইটানিকের সঙ্গে একটি কৃত্রিম সমুদ্র সৈকতও তৈরি হচ্ছে। আরো তৈরি হচ্ছে কিছু ইউরোপিয়ান দুর্গ। এসব কিছু প্রচুর পর্যটক সমাগম ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

১৯৯৭ সালের বিখ্যাত টাইটানিক ছবিটি চীনা তরুণ যুবকদের মনে এখনো স্থায়ী হয়ে আছে।

প্রসঙ্গত, টাইটান ছিল গ্রিক পুরাণের সৃষ্টির শক্তিশালী দেবতা। এ দেবতার কাজই ছিল শুধু সৃষ্টি করা। তার নামানুসারে এ জাহাজের নাম রাখা হয়েছিল টাইটানিক। এটি আসলে জাহাজটির সংক্ষিপ্ত নাম। এর পুরো নাম ছিল ‘আর এম এস টাইটানিক’। ‘আর এম এস’ এর অর্থ ‘রয়্যাল মেল স্টিমার’। অর্থাৎ পুরো জাহাজটির নাম ছিল ‘রয়্যাল মেল স্টিমার টাইটানিক’।



টাইটানিক জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯০৭ সালে। পাঁচ বছর একটানা কাজ করে ১৯১২ সালে জাহাজটির কাজ শেষ হয়। হল্যান্ডের ‘হোয়াইট স্টার লাইন’ জাহাজটি নির্মাণ করেন। ৬০ হাজার টন ওজন ও ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট জাহাজটি নির্মাণ করতে সে সময় খরচ হয়েছিল ৭৫ লাখ ডলার।

১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে টাইটানিক। সে সময় টাইটানিকে মোট যাত্রী ছিল ২২০০ জন ও কয়েকশ কর্মী। শুরুতেই মাত্র চার ফুটের জন্য ‘এসএসসিটি অব নিউইয়র্ক’ জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সমর্থ হয়। ৭৭ নটিক্যাল মাইল এগিয়ে শেরবুর্গ থেকে ২৭৪ জন যাত্রী তুলে নেয়। ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায় আয়ারল্যান্ডের কর্ক পোতাশ্রয় থেকে জাহাজে ওঠেন ১১৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর এবং সাতজন দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী। ব্রিটেন থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় যাওয়া খুবই বিপজ্জনক ছিল। ছোটোখাটো জাহাজের পক্ষে বলা চলে জীবন বাজি রেখে যাত্রা করা। কেননা হঠাৎ সামুদ্রিক ঝড়- জলোচ্ছ্বাসে পড়ার আশঙ্কা সবসময়ই ছিল। তারপরও এত সংখ্যক যাত্রী সমুদ্রের রোমাঞ্চকর এই ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য টাইটানিকের যাত্রী হয়েছিল। টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির ভাড়া ছিল ৩১০০ ডলার। আর তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া ছিল ৩২ ডলার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত