সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১০:২৬

আলেপ্পোর যুদ্ধবিরতি টিকল মাত্র কয়েক ঘণ্টা

একদিনও টিকল না সিরিয়ার পূর্ব আলেপ্পোর যুদ্ধবিরতি চুক্তি, টিকল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে কয়েক সপ্তাহের লড়াই শেষে মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই চুক্তি ভঙ্গ করে বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহীদের কামান, রকেট লঞ্চার ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্টা হামলায় বাশার বাহিনীর দফায় দফায় বিমান হামলায় কেঁপে ওঠে পূর্ব আলেপ্পোর মাটি। এতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে আলেপ্পোয় আটকে পড়া সাধারণ মানুষ।

চুক্তি অনুযায়ী বাশার বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আলেপ্পো ছেড়ে যাওয়ার জন্য আলকসর শহরে জমায়েত হয় মানুষ। তখন সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় বিদ্রোহীরা। প্রাণভয়ে পালাতে গিয়ে অনেকে লাশ হয়ে পড়ে থাকেন রাস্তায়। আহতদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রমি আবদুল রহমান বলেছেন, 'সহিংস লড়াই চলছে। ভারী বোমাবর্ষণও চলছে ... মনে হচ্ছে যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে গেছে।' বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিমান হামলা শুরু হয়েছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, সরকারি বাহিনীর দখলে থাকা এলাকাতে বিদ্রোহীরা গোলা হামলা চালাচ্ছে। সিরিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি স্টেফান ডি মিস্তুরা জানিয়েছেন, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আটকা পড়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, আটকেপড়া মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। তাদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বিদ্রোহীরা।

তিনি আরও বলেন, এসব অঞ্চলে অন্তত দেড় হাজার বিদ্রোহী রয়েছেন। তাদের ৩০ শতাংশই জঙ্গি সংগঠন ফাতেহ আল শামের (সাবেক নুসরা ফ্রন্ট) সঙ্গে জড়িত।

বুধবার পর্যন্ত দু'পক্ষই গোলাগুলি বন্ধ রেখেছিল। বিদ্রোহী নেতারা জানিয়েছেন, সরকার নতুন করে গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির একদিনের মাথায় তারা তা লঙ্ঘন করছে। তবে রুশ গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বুধবার সকালে বিদ্রোহীরাই প্রথম যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ আগামী দু-তিন দিনেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

রাশিয়া ও তুরস্কের পৃষ্ঠপোষকতায় মঙ্গলবার দু'পক্ষের সমঝোতা হয়। এদিন সন্ধ্যায় জাতিসংঘ নিয়োজিত রাশিয়ার দূত ভিতালি চারকিন ঘোষণা দেন, আলেপ্পোর যুদ্ধ শেষ। পূর্বর্ আলেপ্পোয় সব সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে এবং সরকার ওই এলাকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

স্থানীয় সময় বুধবার ভোর ৫টা থেকে এলাকা ফাঁকা করার চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার শর্ত ছিল। চুক্তি অনুযায়ী আলেপ্পো থেকে শুরুতে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এর পর বিদ্রোহীদের সরানো হবে। তিনি বলেন, 'পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ইদলিবের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। তাদের তুরস্কে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।'

প্রতিশ্রুত সে সময় পার হওয়ার অনেক পরেও আলেপ্পো থেকে একজন মানুষও সরে যেতে পারেনি। গার্ডিয়ান তাদের খবরে নিশ্চিত করেছে, স্থানীয় সময় ভোর ৫টা থেকে শহরবাসীর আলেপ্পো ত্যাগের কথা ছিল। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাসও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় সব ভেস্তে গেছে। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে আলেপ্পো দখলের পর বিদ্রোহীরা বিশ্বাস করত, বাশারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয়টা তাদের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু গত চার বছরে তারা এর চেয়ে বেশি আর এগোতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তারা অনন্যোপায় হয়ে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশন নামক একটি সংস্থার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্যাম হেলার বলেছেন, 'এর মানে হলো, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। তারা এখন বাস্তবের মাটিতে পা রাখতে বাধ্য হয়েছে।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত