সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:২৮

বিষণ্ণতায় ভোগেন এক-চতুর্থাংশ মেডিকেল শিক্ষার্থী

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষন্নতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আমেরিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণার সহকারী গবেষক ড. ডগলাস মাতা বলছেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভোগার এ হার খুবই উদ্বেগজনক। খবর সিবিসি নিউজ।

গবেষণার জন্য গবেষকরা বিশ্বব্যাপী ১৮০টিরও বেশি এ-সংক্রান্ত গবেষণা পর্যালোচনা করেছেন। এসব গবেষণায় প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার মেডিকেল শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে কানাডার শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। এতে গবেষকরা দেখতে পান, যেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভোগার হার ৮-৯ শতাংশ, সেখানে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ হার আশঙ্কাজনক, প্রায় ২৭ শতাংশ; যার মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিষণ্ণতায় ভোগার জন্য চিকিত্সকের শরণাপন্ন হয়েছেন। আর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে প্রায় ১১ শতাংশের।

এ বিষয়ে অন্টারিও মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কো-চেয়ার জাস্টিন কোটরেল বলেন, চিকিত্সাবিজ্ঞানের ব্যাপক চাহিদা থাকার সঙ্গে সঙ্গে এখানে মানসিক চাপও বেশি। আর দিন দিন এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে, এ চাপের কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

গত বছর একই গবেষক দল আবাসিক চিকিত্সকদের মধ্যে বিষণ্ণতার প্রবণতা ও প্রকরণ নিরূপণে একটি গবেষণা চালান। সাম্প্রতিক এ গবেষণার মাধ্যমে পূর্ববর্তী ওই গবেষণাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিলেন তারা। এতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও নিরূপণের চেষ্টা করা হয়েছে।

ড. মাতা বলেন, আমাদের গবেষণায় মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে  চিকিত্সক হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত একজন ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ মানসিক অবস্থার একটি চিত্র উঠে এসেছে। এতে তার বিষণ্ণতা কিংবা ভালো লাগার মুহূর্ত সবই বিচার করা হয়েছে।

কোটরেল বলেন, শিক্ষার্থীরা কখনো কখনো বাজে ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এ ধরনের মানসিক অবস্থার দরুন শিক্ষার্থীরা সামাজিক মেলামেশায় সংকোচ বোধ করেন। ফলে এক ধরনের বহিঃস্থিততা তৈরি হয় তাদের মধ্যে।

গবেষকদের মতে, মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণেই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্ণতা ও আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়ছে। ড. মাতা বলেন, এত বিস্তৃত পরিসরের তথ্য শেখা ও মনে রাখার প্রয়োজন পড়ে যে, মেডিকেলে ভর্তি হওয়া অনেকটা উত্তপ্ত চুল্লি থেকে জলপান করার মতো। আর এ শিক্ষা কখনো বন্ধ হয় না। যদি কেউ সার্জারি থেকে মেডিসিন বিভাগে যান, তাকে সম্পূর্ণ নতুন চাপের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়। এখানে ভালো করতে হলে উচ্চতর অভিযোজনক্ষমতা থাকতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যদের চাহিদার উচ্চমাত্রা। রাতের শিফটে কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনাও বহাল রাখতে হয়। আর ধারাবাহিক অনিদ্রার ফলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্ণতার প্রবণতা বাড়তে থাকে। সঙ্গে আত্মহত্যা প্রবণতা।

গবেষকদের মতে, পড়াশোনাসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন চাপের কারণে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষাদগ্রস্ততা দেখা যায়। এক্ষেত্রে এ মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার কৌশল নিরূপণের জন্য আরো বিশদ গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কাজের চাপ ও কর্মঘণ্টার পরিধি কমানো ও লেটার পদ্ধতির বদলে পাস বা ফেল পদ্ধতিতে মেডিকেল শিক্ষার সংস্কারসাধন একটি সমাধান হতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত