সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ জুন, ২০১৭ ১৯:২৩

লন্ডন হামলায় নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে একটি মসজিদের কাছে তারাবির নামাজ-ফেরত ব্যক্তিদের ওপর ভ্যান উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তি একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। নিহত হিরন মিয়ার (৫২) বাড়ি  সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সরুয়ালা গ্রামে। দ্য টেলিগ্রাফ এ তথ্য জানিয়েছে। এঘটনায় ৪৮ বছর বয়সী একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উত্তর লন্ডনের সেভেন সিস্টারস রোডের ফিন্সবারি পার্ক মসজিদের কাছে রোববার এই হামলা হয়। এতে একজন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়। নিহত ওই ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।

সুলতান আহমেদ নামের লন্ডনে জনকল্যাণে নিযুক্ত এক কর্মী জানিয়েছেন, তাঁর চাচাও ঘটনাস্থলে ছিলেন। মসজিদ ছাড়ার পর তাঁর চাচার চোখের সামনেই ভ্যানটি মুসল্লিদের ওপর উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে প্রবীণ ওই বাংলাদেশি মারা যান। ফিন্সবারি হলো ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল এবং প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের নির্বাচনী এলাকা।

হামলাকারীরা পালাবার সময় উপস্থিত জনতার হাতে আটক হন। পরে পুলিশ এসে একজনকে গ্রেপ্তার করে। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। বিষয়টি তাঁরা তদন্ত করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে হামলাকারী গাড়িতে তিন ব্যক্তি ছিলেন, অন্য দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

তিনজন ব্যক্তি হামলাকারীকে আটক করেছিলেন। তাঁদের একজন মোহাম্মদ বলেন, আটকের পর স্থানীয় ইমামের ভূমিকা ছিল প্রশংসাজনক। তিনি রোজার মাসে সবাইকে সংযম ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে হামলাকারীর কোনো ক্ষতি করা থেকে অন্যদের বিরত করেন। পরে পুলিশ এসে সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে।

স্থানীয় এক ক্যাফের মালিক ২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, ‘ওই ইমামের কারণেই হামলাকারী লোকটি এখনো জীবিত আছে।’

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে ওই ইমামের নাম মোহাম্মদ মাহমুদ। ফিন্সবারি পার্কের মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম মাহমুদের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর কারণেই হামলার পরের পরিস্থিতি শান্ত করা গেছে এবং সম্ভাব্য জীবননাশের ঘটনা এড়ানো গেছে।

জেরেমি করবিন হামলার পরপরই তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দলের এই নেতা বলেন, ‘আমি একে অন্যান্য হামলার মতোই অতীব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি’।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এক বিবৃতিতে নিহতের জন্য শোক প্রকাশের পাশাপাশি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ঘটনার পর অনলাইনে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। লোকজন ছোটাছুটি করছে। আহত ব্যক্তিদের সহায়তায় মানুষ এগিয়ে আসছে।

সেভেন সিস্টারস রোডের একটি ফ্ল্যাট বাস করা এক নারীর ভাষ্য, লোকজনকে তিনি চিৎকার ও আর্তনাদ করতে দেখেছেন। একটি ভ্যান লোকজনের ওপর উঠে যাচ্ছে বলে সবাই চিৎকার করে বলছিল। মসজিদের বাইরে একটি সাদা ভ্যান থেমে ছিল। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা লোকজনকে ভ্যানটি আঘাত করছিল বলে মনে হয়।

হামলাকে ‘গুরুতর ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে লন্ডন পুলিশ। তারা বলছে, রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের খবর দেওয়া হয়। জানানো হয়, একটি ভ্যান মুসল্লিদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিরা নামাজ শেষ মসজিদ থেকে বেরিয়েছিলেন।

মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) বলেছে, মুসল্লিদের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি ভ্যান তুলে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি যুক্তরাজ্যের মসজিদ ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দাবি করেছে।

স্থানীয়রা বলেছেন, এলাকাটিতে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিয়ে তাঁরা গর্বিত ছিলেন। কিন্তু এখন মুসলমানদের মধ্যে ভীতি জন্মাতে দেখা যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত