অনলাইন ডেস্ক

৩০ জুন, ২০১৭ ১০:২৮

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানত বেড়ে ৫,৬০০ কোটি টাকা

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬ সাল শেষে সেখানে বাংলাদেশিদের নামে রয়েছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ (প্রতি ফ্রাঁ ৮৪ টাকা হিসাবে) ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সেখানে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি ৯২ লাখ ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা বেড়েছে ১৮ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, নির্বাচন সামনে রেখে দেশ থেকে টাকা পাচার বাড়তে পারে। অবৈধ পথে এ অর্থের একটি অংশ যাচ্ছে এসব ব্যাংকে।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) গতকাল বৃহস্পতিবার সে দেশের ব্যাংকগুলোর সার্বিক পরিসংখ্যান নিয়ে 'ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬' নামে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের নামে অর্থ গচ্ছিত থাকার পরিসংখ্যান রয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রতি বছরই সুইস ব্যাংকগুলোতে এ দেশের নাগরিকদের টাকা বাড়ছে। অন্যান্য দেশের মতো এ দেশ থেকেও পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ এসব ব্যাংকে জমা হয়। তবে সব অর্থ পাচারের নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

গ্রাহকের তথ্য গোপন রাখার কারণে সুইস ব্যাংকগুলো অবৈধ অর্থ রাখার নিরাপদ জায়গা হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক নানা চাপের মুখে সুইজারল্যান্ড কিছুটা নমনীয় হয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণসহ কোনো দেশ তথ্য চাইলে ক্ষেত্রবিশেষে দেশটি সহায়তা করছে। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পায়নি।

গত মাসে প্রকাশিত ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্গ্নোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য রয়েছে। জিএফআইর তথ্যমতে, ২০১৪ সালে এ দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ৯১০ কোটি ডলার বা প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য ও পরিমাণ দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানির ক্ষেত্রে কম মূল্য ও পরিমাণ দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) মাধ্যমেই প্রায় ৮০ ভাগ অর্থ পাচার হয়। সংস্থাটির হিসাবে গত ১০ বছরে এ দেশ থেকে চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

এসএনবির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশিদের নামে সুইস ব্যাংকগুলোতে 'দায়' হিসেবে সরাসরি থাকা অর্থের পরিমাণ ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্রাঁ। এর বাইরে বিভিন্ন সম্পদ ব্যবস্থাপক অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রয়েছে আরও ৫৫ লাখ ফ্রাঁ। পরিসংখ্যান সারণিতে গত ১০ বছরের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের অঙ্কটাই সর্বোচ্চ। টাকার অঙ্কে ২০১২ সাল শেষে এসব ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এরপর ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ১২৫ কোটি ও ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে একধরনের অনিশ্চয়তা আছে। দু'বছর পর নির্বাচন হবে। তার পর কী হয় না হয়, দেশের অবস্থা কোন দিকে যায়_ এরকম ভাবনা থেকে অনেকে টাকা পাচার করতে পারে। দ্বিতীয়ত, অনেকে নানা রকম দুর্নীতির মাধ্যমে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে। এসব টাকা দেশের ব্যাংকে রাখলে জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হতে পারে, এমন ভয়ে বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তৃতীয়ত, অর্থ পাচার হলেও সন্দেহভাজন দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে লোকজন মনে করছে, টাকা-পয়সা পাচার করে তো নিশ্চিন্তে থাকা যায়, কোনো শাস্তি হয় না। এতে করে আগে যারা পাচার করেছে তারা ছাড়াও নতুন-নতুন ব্যক্তি অর্থ পাচার করছে।

ড. সালেহ উদ্দিন মনে করেন, অর্থ পাচার ঠেকাতে কঠোর তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি যাদের নাম প্রকাশ পাচ্ছে তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। তার মতে, দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন থাকলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য সংস্থাগুলো অন্তত দু'চারটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত