সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ জুলাই, ২০১৭ ০২:২৫

বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদায় ফিলিস্তিনের হেবরন, ক্রুদ্ধ ইসরায়েল

দ্য টম্ব অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক: মুসলিম এবং ইহুদী উভয় ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র স্থান

বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পেয়েছে ইসরাইলের দখল করা ফিলিস্তিনের হেবরন শহর। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা 'ইউনেস্কো'র ভোটাভুটিতে ১২ ভোট পেয়ে এ মর্যাদা পায় হেবরন। খবর আল জাজিরার।

ইউনেস্কোর এ সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে অনেকে। ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও বসতি স্থাপনে এটি একটি আঘাত। এ সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে তাদের নতুন বসতি স্থাপন বাধাগ্রস্ত হবে।

বৃহস্পতিবারের ভোটাভুটিতে হেবরনকে এ মর্যাদা না দেয়ার পক্ষে ভোট পড়ে ৩টি। আর ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল ৬ জন।

হেবরনে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করে। অপরপক্ষে বেশকিছু ইহুদী বসতি স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ইসরাইল দখলদারিত্ব ও বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী হেবরন নবী হযরত ইব্রাহীম (আ) এর নির্মিত ঐতিহ্যবাহী মসজিদের শহর। আর ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী শহরটি তাদের আদি পুরুষদের সমাধিস্থল।

হেবরনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল। এ শহরে ইসরাইলের অব্যাহত দখলদারিত্ব রোধ করতে তারা এ দাবি করে।

হেবরন খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছর আগের শহর। যা বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন শহর বলে দাবি করেন ঐতিহাসিকরা।

এদিকে বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউনেস্কো ফিলিস্তিনি শহর হেবরনের পুরনো নগর কেন্দ্রকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট' বা বিশ্ব ঐতিহ্য বলে ঘোষণা দেয়ার পর এর বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল।

ইউনেস্কোর এক বৈঠকে গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি হেবরনের পুরনো নগর কেন্দ্র এবং সেখানে অবস্থিত 'টম্ব অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক'কে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। ইউনেস্কো একই সঙ্গে এই জায়গাটিকে বিপন্ন ঐতিহ্যের একটি তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

'টম্ব অব দ্য প্যাট্যিয়ার্ক' বা 'আদি পিতাদের সমাধি' বিশ্বের তিনটি প্রধান একেশ্বরবাদী ধর্ম- ইসলাম, খ্রিষ্টান এবং ইহুদী, সবার কাছে পবিত্র এক স্থান। এটি আব্রাহাম (ইব্রাহীম), আইজ্যাক (ঈসা)এবং জ্যাকবের সমাধিস্থল হিসেবে পরিচিত।

ইহুদীদের কাছে এটি দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান। আর ইসলামে একটি চতুর্থ পবিত্রতম স্থান।

ফিলিস্তিনি এবং ইহুদীদের মধ্যে এই জায়গাটি নিয়ে অতীতে বহু বার সংঘাত হয়েছে। কয়েকশো ইহুদী এর কাছে গিয়ে বসতি গেড়েছে। অন্যদিকে হেবরনের পুরনো শহরে থাকে প্রায় দু লাখ ফিলিস্তিনি থাকে।

ফিলিস্তিনিরা আশংকা করছে, ইসরায়েল সেখানে যেসব তৎপরতা চালাচ্ছে, তাতে এটির ঐতিহ্য বিপন্ন হতে পারে। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করছে, ইসরায়েলে সেখানে আন্তর্জাতিক আইন এবং রীতিনীতি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ঐতিহ্য ধ্বংস করছে, বাড়িঘরের ক্ষতি করছে। তারা এই শহরের ইসলামী ঐতিহ্য ধ্বংস করে ফেলতে চাইছে।

টম্ব অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি তারা প্রতি বছর পর্যালোচনা করবে এবং এটি সংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে।

ইসরায়েল অবশ্য অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি হাজার হাজার বছরের ইহুদী ঐতিহ্যের অংশ।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আজকে ফিলিস্তিন এবং সারা বিশ্ব হেবরনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উদযাপন করছে। এটি দেশ, কাল, ধর্ম, রাজনীতি, আদর্শের উপরে এক মূল্যবান সম্পদ।

কিন্তু ইসরায়েলি শিক্ষা মন্ত্রী নাফটালি বেনেট অভিযোগ করেছেন, ইউনেস্কোকে তার দেশের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, "হেবরনের সঙ্গে ইহুদীদের সম্পর্ক হাজার হাজার বছরের। এটি হচ্ছে কিং ডেভিডের জন্ম স্থান, এখানে রয়েছে টম্ব অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক।"

তিনি ইউনেস্কোর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৯৭ সালের এক চুক্তির অধীনে হেবরনকে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। শহরটির আশি শতাংশ এলাকা থেকে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হয়। শহরের পুরোনো অংশ এবং টম্ব অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত