শিকাগো ট্রিবিউন

০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৫:৫২

মিয়ানমারের নির্যাতনে রোহিঙ্গা মুসলমানের সাথে ৮৬ হিন্দুকে হত্যা

শুধু রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুই নয় মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাথে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে অনেক হিন্দু পরিবারও।

গত সপ্তাহে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি দল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কমপক্ষে দুই ডজন পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ১০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হন এবং কমপক্ষে ১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করা হয়। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রোহিঙ্গা সংগঠকরা দাবি করেছেন যে, এ অভিযানে নিহত হয়েছেন আট শতেরও বেশি রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশ সীমান্তে শত শত মানুষ নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটে ধারণকৃত দৃশ্য থেকে জানাচ্ছে, উত্তর রাখাইনে অনেক বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এবারের হামলায় কিছু শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মালম্বীও নির্যাতিত হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা ও পালিয়ে আসা নির্যাতিত মানুষদের সূত্রে জানা গেছে,  ইতিমধ্যে ৪০০ এরও বেশি হিন্দু ধর্মালম্বী রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসেছেন।

কক্সবাজারের উখিয়ার সরকারি কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার থেকে তিনটা গ্রামে ৮৬ জন হিন্দু হিন্দু ধর্মালম্বীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

বেঁচে ফিরে আসা অনেকেই জানিয়েছেন, মিয়ানমার সৈন্যরা সব জায়গায় অবস্থান নিয়েছে, তাদের সাথে থাকা কিছু সশস্ত্র দল ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে ও মানুষ হত্যা করছে।

নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে একজন হিন্দু ধর্মালম্বী নিরঞ্জন রুদ্র এপি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, 'মুখোশধারী কিছু মানুষ বন্দুক, লাঠি ও ছুরি দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।'

মঈন উদ্দিন বলেন, ‘৪১২ জন হিন্দু ধর্মালম্বী উখিয়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছাকাছি একটি হিন্দু এলাকায় অবস্থান করছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘তারা সেখানে পরিত্যক্ত একটি পোল্ট্রি খামারে আশ্রয় নিয়েছেন এবং বাংলাদেশী হিন্দুরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।’

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের স্থানীয় নেতা স্বপন শর্মা এই আশ্রয় নেয়াদের দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ‘উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে অল্প দূরত্বে একটি মন্দিরে এবং তার আশে পাশে আশ্রয় নিয়েছেন পালিয়ে আসা ৪১২জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন বৃদ্ধ ছাড়া বাকিরা নারী এবং শিশু।’

কক্সবাজারের জেলাপ্রশাসনও বিবিসি বাংলাকে তাদের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে

এই আশ্রয় নেয়াদের একজন রমা কর্মকার জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার রিকটা নামের গ্রাম থেকে দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি এসেছেন। তাদের গ্রামে তার স্বামীসহ অনেক পুরুষকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার রিকটা গ্রাম ছাড়াও চিয়ংছড়ি এবং ফকিরাবাজার গ্রামে ছিল হিন্দুদের বসবাস। এই তিনটি গ্রাম থেকে নির্যাতনের কারণে হিন্দুরা পালিয়ে সীমান্তে এসেছেন বলে জানাচ্ছেন স্বপন শর্মা।

মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান উত্তর রাখাইন রাজ্যে বাস করে। কয়েক দশক ধরে তারা বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।  দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বৈধ নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবেও মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটি। যার কারণে সেখানে রোহিঙ্গাদের কোন মৌলিক অধিকার নেই, সেইসাথে ধারাবাহিকভাবে চরমমাত্রার মানবাধিকার  লঙ্ঘন করে যাচ্ছে দেশটির সরকার।

এর আগে ২০১২ সালে এক রোহিঙ্গা মুসলিম কর্তৃক রাখাইন নারী ধর্ষণের অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ওপর বড় ধরণের হামলা চালায় মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীরা। সে সময় দেশটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ তোলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

তথ্যসূত্র: শিকাগো ট্রিবিউন, বিবিসি বাংলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত