বিশ্ব্যবাপী সমালোচনা ও উদ্বেগের মধ্যেই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে রাজধানী স্বীকৃতির পর তেলআবিব থেকে দূতাবাস স্থানান্তরের কথাও বলেন।

ফ্রান্স, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অনেক মিত্র জেরুজালেমকে এমন স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহবান জানিয়েছিল, কিন্তু পূর্ব-সিদ্ধান্তে অনঢ় থেকে ট্রাম্প জেরুজালেমকে স্বীকৃতির সে ঘোষণাই দিলেন।

গত সাত দশক ধরে মার্কিন প্রশাসনের কাছে এটি ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় হিসেবেই চিহ্নিত ছিল। বিতর্ক এড়াতেই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সমঝোতার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের সুরাহা করার যে মার্কিন-নীতি তার স্পষ্ট ব্যত্যয় ট্রাম্পের এই ঘোষণা।

গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের ১০ মাসের মাথায় তিনি সেই প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করলেন।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে হোয়াইট হাউজে কূটনীতিকদের অভ্যর্থনা কক্ষে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির এটাই সময় বলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

“দুই দশকেরও বেশি সময়ের ছাড় দিয়েও আমরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারিনি।”

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ই ‘দুই রাষ্ট্র’ সমাধান চাইলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সায় থাকবে বলে জানান তিনি।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে অতীতের মার্কিন নীতিকেও নিজের বক্তব্যে কটাক্ষ করেছেন ট্রাম্প, ‘অতীতের অনেক প্রেসিডেন্টই বলেছিলেন যে তারা এটি করতে চান (জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া)। কিন্তু তারা তা করেননি। তারা করার সাহস পাননি নাকি নিজেদের মতের পরিবর্তন করেছিলেন, আমি বলতে পারব না। আমি মনে করি অনেক আগেই এটি করা উচিত ছিল।’

তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরে পররাষ্ট্র দপ্তরকে নির্দেশ দিচ্ছেন বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

এদিকে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে ওই অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

হামাস ট্রাম্পের এই ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে ‘নরকের দরজা’ খুলে গেল। তারা আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের দূতকে নিজ নিজ দেশ থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে।

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মহাসচিব ট্রাম্পের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘পৃথক দুই রাষ্ট্রের ভাবনা’র সর্বশেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে গেছে। তিনি মনে করেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যার মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও মর্যাদা হারিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটি “সাহসী” ও “ন্যায়-সংগত” সিদ্ধান্ত।’ নেতানিয়াহু অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিষ্টান—এই তিন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর পুণ্যভূমি হিসেবে জেরুজালেমের যে অবস্থান, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় এর কোনো পরিবর্তন হবে না।

১৯৯৫ সালে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নেওয়া হবে—এই মর্মে একটি আইন পাস হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু এরপর থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট একটি আদেশে সই করেন। এর মাধ্যমে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়।