গত ৩০ এপ্রিল রাতে ভারতের কোলকাতার মেট্রোর ভিতরে আলিঙ্গন করার ‘অপরাধে’ এক দল লোক চড়াও হয়ে এক যুগলকে মারধর করেন। এদিকে ১২ দিনের মাথায় শনিবার (১২ মে) কোলকাতার শ্যামবাজারের কাছে চলন্ত বাসের মধ্যে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন করতে দেখা গেলো এক প্রৌঢ়কে।

আর এমন চিত্র নিজের মোবাইলে ধারণ করেন কোলকাতার এক কলেজ ছাত্রী। বাসে থাকা ওই ছাত্রীর সাথে ছিলেন তারই এক সহপাঠী। সেসময় ওই দুই ছাত্রী চিৎকার করে প্রতিবাদ জানালেও কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ করে তাদেরই একজন ঘটনার ভিডিওটি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ওই কলেজ ছাত্রী তার ফেসবুকে লিখেন, হেদুয়া থেকে প্রাইভেট টিউশন নিয়ে দমদমের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। এসময় ৩০বি/১ রুটের ওই বাসে এক বান্ধবীর সঙ্গে সামনের দিকের আসনেই বসেছিলেন তিনি। হঠাৎ এক ছাত্রীর নজরে পড়ে, পিছনের আসনে বসে থাকা এক প্রৌঢ় সহযাত্রী অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে হস্তমৈথুন করছে।

তিনি আরো লিখেন, যাত্রীটি নেমে যাওয়ার পরে বাসের কন্ডাক্টরকে ওই ছাত্রী বিষয়টা চিৎকার করে জানান। কিন্তু, কন্ডাক্টরের জবাব শুনে তিনি আরও চমকে যান।

ওই ছাত্রী ভারতীয় এক অনলাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘দুপুর তখন ১২টা হবে। টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছিলাম। হাতিবাগান ঢোকার আগে হঠাৎ দেখি আমাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ওই লোকটি অমন করছে। আমি চিৎকার করি। কেউ কোনও প্রতিবাদ না করায় ভিডিও করতে শুরু করি। তাতেও লোকটা থামেনি। আমার বন্ধুটি ভয় পাচ্ছিল। ও ভিডিও করতে বারণ করে। এর পর ভয় পেয়ে আমরা দু’জনে মিলে চিৎকার করি। কিন্তু বাসের কোনও যাত্রীই বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে আসেননি।’’

তিনি বলেন, ‘‘কেউ কোনও প্রতিবাদ না করায় আমরা কন্ডাক্টরকে চিৎকার করে বলি। তিনি হেসে বলেন, ‘কী করব বলুন! কার মনে কী আছে, কী করে বুঝব!’ আমি চিৎকার করি, ওঁকে ধরুন। উনি আমাদের সঙ্গে অভদ্রতা করছেন। কিন্তু, কেউ আটকালো না। তার পর লোকটি নিজের আসন ছেড়ে উঠে যায়। বাস তখনও চলছে। শ্যামবাজার মোড়ের আগেই বাসটি একটু স্লো হতেই তিনি নেমে যান।

ওই ছাত্রীর দাবি, এমনটা প্রথম বার নয়। এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই ব্যক্তি। দিন ১৫ আগে ওই একই পথে ফেরার সময় এমনটা ঘটে। সে বার তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই কাউকে কিছু বলতে পারেননি। এ বার সাহস করে ভিডিও করেছেন। ছাত্রীটির অভিযোগ, সে বার যৌনাঙ্গ বার করেই প্রকাশ্যে বাসের ভিতর হস্তমৈথুন করছিলেন এই একই ব্যক্তি।

এদিকে ওই ছাত্রীর তোলা ভিডিওসহ পোস্টটি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। সেখানে কলকাতা পুলিশের তরফে অভিযোগকারীকে ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দ্রুত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

পরে ওই ছাত্রী কোলকাতা পুলিশের শ্যামপুকুর থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ করলে চলন্ত বাসের মধ্যে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন করা ওই প্রৌঢ়কে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের পর কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে গ্রেপ্তারকৃত প্রৌঢ়ের ছবি সমেত একটি পোস্টে করে।

তাতে লিখা হয়,

ইনিই তিনি। ধরা পড়েছেন,শাস্তি হবেই

প্রিয়াঙ্কা দাস নামে এক ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে বাসে আজ চূড়ান্ত অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন এক পুরুষ। প্রিয়াঙ্কা দেবী আমাদের পেজে পোস্ট করে অভিযোগ জানান, ঘটনার ভিডিও পোস্ট করেন। আরও অনেকে মেসেজ করেন প্রতিকার চেয়ে। আমরা ওই ফেসবুক পোস্টের ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করি।

সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু হয়। শহর চষে ফেলা হয় গত কয়েক ঘণ্টায়, লোকটির ছবি সমেত। কিছুক্ষণ আগেই ধরা গেছে ওই অসুস্থ মানসিকতার ব্যক্তিকে। শ্যামপুকুর থানা এলাকা থেকে। পেশায় হকার, নাম অসিত রাই। বৈদ্যবাটির বাসিন্দা। ছবি রইল।

শাস্তি হবেই । ভরসা রাখুন।

ভিডিও :