আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০২ জুলাই, ২০১৮ ১৩:৫০

‘পরিত্রাণের আশায়’ এক পরিবারের ১১ জনের মৃত্যু

দুটি খাতায় পাওয়া একগুচ্ছ হাতে লেখা নোটের সূত্র ধরেই নতুন মোড় নিয়েছে দিল্লীর বুরারি এলাকার এক পরিবারের ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনা। পুলিশের ধারণা ‘পরিত্রাণের আশায়’ এই পরিবারের সবাই আত্মহত্যা করতে পারেন।

তবে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, পুলিশ প্রথমে ঘটনাটিকে গণআত্মহত্যা বলে মনে করেছিল। কিন্তু লাশগুলো যেভাবে ছিল, তাতে পরে ধারণা হয়, পরিবারের এক সদস্য দশজনকে হত্যা করে পরে নিজে আত্মহত্যা করেছেন।

কিন্তু নোটগুলো দেখার পর তদন্তকারীরা এখন বলছেন, এর পেছনে তারা কোনো ধরনের অতীন্দ্রিয় বিশ্বাসের ইঙ্গিত পাচ্ছেন।

নিহত ১১ জনের মধ্যে ১০ জনকে বাড়ির আঙ্গিনায় লোহার গ্রিলের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ, ছয়জন নারী এবং দুজন কিশোর বয়সী। এছাড়া ৭৭ বছর বয়সী নারায়ণ দেবীকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

মৃতদেহগুলোর মুখমণ্ডলে চোখ ও মুখ চারদিক থেকে পেঁচিয়ে ব্যান্ডেজের মত মোড়ানো ছিল।কয়েকটি মৃতদেহের হাত-পাও বাঁধা ছিল।

এই ঘটনায় নিহতদের নাম- নারায়ণ দেবীর মেয়ে প্রতিভা (৫৭), তার মেয়ে  প্রিয়ঙ্কা (৩৩), নারায়ণ দেবীর দুই ছেলে ভবনেশ ভাটিয়া (৫০) ও ললিত ভাটিয়া (৪৫), ভবনেশের স্ত্রী সবিতা (৪৮) এবং তাদের তিন সন্তান মিনু (২৩), নিধি (২৫) এবং ধ্রুব (১৫), ললিতের স্ত্রী টিনা (৪২) এবং তাদের ১৫ বছর বয়সী সন্তান শিভাম।

এদের মধ্যে প্রিয়ঙ্কার বাগদান হয়েছিল কিছুদিন আগে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

বাড়িতে যেসব নোট পাওয়া গিয়েছিল সেখানে লিখা ছিল, “মানবদেহ অস্থায়ী। চোখ ও মুখ ঢেকে রাখার মাধ্যমে একজন তার ভয়কে জয় করতে পারে।”

এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কোনো ব্যক্তি কীভাবে ‘পরিত্রাণ লাভ’ করতে পারেন এবং ‘মানবদেহ অস্থায়ী কিন্তু আত্মা সবসময় বেঁচে থাকবে’ এমন সব বিষয় লেখা রয়েছে নোটগুলোতে।

তদন্তকারী এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, “নোটগুলো বলছে, যদি ১১ জনের একটি দল ওই অনুশাসনগুলো অনুসরণ করে, তবে সব সমস্যা সহজ হয়ে যাবে এবং পরিত্রাণ লাভ হবে। কিছু নোট কবে লেখা হয়েছে তার তারিখও দেওয়া আছে।... সবগুলো নোটেই চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে শান্তি অর্জনের কথা বলা হয়েছে।”

ওই পরিবারটির সঙ্গে কোনো ধর্মগুরু বা গোপন ধর্মীয় সংগঠনের সম্পর্ক ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) অলোক কুমার পিটিআইকে বলেন, হাত ও পা কীভাবে বাঁধতে হবে- তার বিস্তারিত লেখা ছিল ওই নোটে। আর ১০টি মৃতদেহ যে অবস্থায় পাওয়া গেছে তার সঙ্গে ওই নোটের বর্ণনা অনেকটাই মিলে যায়।

পিটিআই লিখেছে, গলায় শ্বাসরোধের চিহ্নের ভিত্তিতে পুলিশ চালঞ্চল্যকর এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তবে এটা সমঝোতার মাধ্যমে আত্মহত্যার ঘটনাও হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেছেন, “এমন হতে পারে যে ওই বৃদ্ধা টুলের ওপর উঠতে পারার অবস্থায় ছিলেন না বলে তাকে শ্বাসরোধ করা হয়েছে। শিশুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে, না তাদের রাজি করানো হয়েছে- সেটাও বোঝার চেষ্টা করছি আমরা।”

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই পরিবারের একজন বাকিদের খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন, না কি সবাই মিলেই আত্মহত্যা করেছেন- তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই স্পষ্ট হবে।

তবে কেতন নাগপাল নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ, ওই পরিবারের সবাইকে খুন করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কেতনের নানীও আছেন।

তিনি বলছেন, “তাদের আর্থিক সমস্যা ছিল না, এমনকি তারা কখনো কোনো ঋণও নেননি। সবকিছু ভাল ছিল। কেন তারা আত্মহত্যা করতে যাবেন?

তিনি আরো বলেন, “যদি তারা আত্মহত্যাও করতেন, তাহলে তো নিজেদের মুখ ঢাকার দরকার ছিল না। নিজেদের মুখ টেপ লাগিয়ে বন্ধও করতেন না।”

প্রতিবেশীরা বলেছেন, পরিবারটি ছিল ধর্মভীরু। প্রতিদিন বাড়ির বাইরের একটি বোর্ডে ধর্মীয় ‘শ্লোক’ লিখে রাখত তারা। তবে সন্দেহজনক কিছু কখনও চোখে পড়েনি।

এক প্রতিবেশী পিটিআইকে বলেছেন, “তারা গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতেন এবং সকাল-সন্ধ্যা ভগবানের উপসনা করতেন। তাদের বাড়িতে কখনো কোনো তান্ত্রিক বা ধর্মগুরুকে আসতে দেখিনি। তারা ছিলেন পরোপকারী ও বিনয়ী।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত