সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ আগস্ট, ২০১৮ ০১:১৮

বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাককেইনের ছিল মানবিক আত্মীয়তার সম্পর্ক

মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন শনিবার রাতে প্রাণত্যাগ করেছেন। তার সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের মানবিক আত্মীয়তার সম্পর্ক। বাংলাদেশের অনাথ এক আশ্রম থেকে এক মেয়েশিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি। নাম দেন ব্রিজেট ম্যাককেইন; নিজ সন্তানের মত পালন করেন ম্যাককেইন দম্পতি।

রিপাবলিকান পার্টির অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের আসনে জন ম্যাককেইন মোট ছয়বার মার্কিন সংসদের উচ্চ-কক্ষ সিনেটে নির্বাচিত হন। গত তিন দশকে মার্কিন রাজনীতির একজন মহীরুহ জন ম্যাককেইন ছিলেন, যাকে বলে একজন 'ফ্যামিলি ম্যান' -পরিবারের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এক স্বামী এবং পিতা।

বাংলাদেশের সাথে এক মানবিক আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল জন ম্যাককেইনের। তার সাত সন্তানের একজন বাংলাদেশের মেয়ে। নাম তার ব্রিজেট ম্যাককেইন।

এবিসি নিউজ জানাচ্ছে, সিনেটর ম্যাককেইনের স্ত্রী সিন্ডি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সফর করেছিলেন। সে সময় ঢাকায় মাদার তেরেসার এক অনাথ আশ্রমে তিনি ১০ সপ্তাহের এক শিশুকে দেখতে পান যার মাড়ি এবং ঠোঁট এমনভাবে কাটা ছিল যে সে ভালভাবে খেতে পারতো না।

এই দৃশ্য দেখে মিসেস ম্যাককেইন তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে মেয়েটিকে তিনি দত্তক নেবেন। এবং তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

মিসেস ম্যাককেইনের একজন সহকারী ওয়েস গালেট জানান, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিসেস ম্যাককেইনকে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সাথে বেশ দেন-দরবার করতে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ইচ্ছেই বজায় থাকে।

সিনেটর ম্যাককেইন প্রথমবারের মতো মেয়েটিকে দেখেন যখন সিন্ডি ম্যাককেইন মেয়েটিকে নিয়ে অ্যারিজোনার ফিনিক্স বিমানবন্দরে এসে নামেন।

গালেট জানাচ্ছেন, "সিনেটর জিজ্ঞেস করলেন 'এ এখন যাবে কোথায়?' মিসেস ম্যাককেইন জবাব দিলেন, 'কেন আমাদের বাড়িতে।'"

"সেই দিন জন ম্যাককেইনের যে মুখ আমি দেখেছিলাম সেটা একজন সিনেটর মুখ ছিল না। ছিল একজন বাবার। একজন দয়ালু মানুষের।"

আমেরিকায় পৌঁছানোর পর ব্রিজেটের মুখে অনেকগুলো অপারেশন করা হয়। এবং তার ঠোঁট ও মাড়ির কাটা অংশ জোড়া লাগানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়াতে ২০০৮ সালে জন ম্যাককেইন যখন দলের মনোনয়নের জন্য লড়ছিলেন সে সময় মিনিয়াপলিসে রিপাবলিকান দলের জাতীয় কনভেনশনে ম্যাককেইন তার পালিতা কন্যা ব্রিজেটকে প্রথমবারের মত জনগণের সামনে হাজির করেন।

তবে ব্রিজেটকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে সে সময় কিছু বিতর্কও তৈরি হয়েছিল।

তাকে যে প্রক্রিয়ায় দত্তক নেয়া হয়, এবং নির্বাচনে মনোনয়নের আগে রিপাবলিকান ডেলিগেটদের সামনে তাকে হাজির করার মধ্য দিয়ে ম্যাককেইন পরিবারের বিশাল হৃদয় সম্পর্কে ভোটারদের আগাম জানিয়ে দেয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে তখন প্রচুর কথাবার্তা হয়।

প্রাইমারি চলার সময় এমনকি এই অপপ্রচারও চালানো হয়েছিল যে মেয়েটি জন ম্যাকেকেইনের অবৈধ সন্তান। কিন্তু সেদিন মিনিয়াপলিসে রিপাবলিকান কনভেনশনে ব্রিজেটকে ডেলিগেটদের সামনে হাজির করার পর মিসেস ম্যাককেইন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

সে সময় দেখা যায় তার বাংলাদেশি পালিতা কন্যা তার চোখের জল মুছে দিচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত