অনলাইন ডেস্ক

২৯ আগস্ট, ২০১৮ ১২:২০

রোহিঙ্গা নিপীড়ন: জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করলো মিয়ানমার

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে বলে সম্প্রতি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, বুধবার (২৯ আগস্ট) তা প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার।

গতবছরের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন পীড়ন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী। এখনও তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

সোমবার (২৭ আগস্ট) প্রকাশিত ওই জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, মিয়ানমার সেনারা যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপকভাবে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ চালিয়েছিল, তা প্রমাণিত। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ মিয়ানমার সেনাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচারের দাবি জানিয়েছে।

কিন্তু বুধবার (২৯ আগস্ট) জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার।

মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হতে বলেন, ‘আমরা এফএফএম (জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন) প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে ঢুকতে দেইনি। তাই মানবাধিকার পরিষদের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি। একই সঙ্গে জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাবকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’

জ হতের এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে দেশটির ‘গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমার’ নামের এক সরকারি পত্রিকা।

জ হতে আরো জানান, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার দেশের বিরুদ্ধে যে ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে তার জবাব দিতে মিয়ানমার তাদের নিজস্ব একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।

এ সময় তিনি মিয়ানমারের সেনা প্রধানসহ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের ফেসবুক পেইজ সরিয়ে ফেলারও তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই জাতীয় তৎপরতা মিয়ানমার সরকারের ‘জাতি পূর্ণগঠনের’ প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এদিকে মঙ্গলবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নিধনের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হেইলি-ও।

তিনি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেন, রোহিঙ্গারা সরাসরি সহিংসতার শিকার হয়েছে ; তাদের বাড়িতে , তাদের পরিবারে এবং দুই জায়গাতেই। তিনি আরও বলেন, ওই প্রতিবেদনে একটি গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা অধিকাংশ অপরাধ করেছে, আর তারা হচ্ছে বর্মার (মিয়ানমার) সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী।

তবে তিনি রোহিঙ্গা নির্যাতনের সমালোচনা করলেও ‘গণহত্যা’ শব্দটি এড়িয়ে গেছেন। কেননা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, তারা এখনও এই উপসংহারে পৌঁছুতে পারেনি যে, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা হয়েছে।

জাতিসংঘ গত এক বছর ধরে (২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুলাই) মাঠপর্যায়ে কাজ করে এমন ৮৭৫ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এটি তৈরিতে তারা ভিডিও ফুটেজ এবং স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করেছে।

ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। তাদের অভিযোগ, শান্তিতে নোবেল জেতা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওই নেত্রী রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে সেনাবাহিনীকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘ প্রতিবেদনে অং সান সুচিরও সমালোচনা করা হয়েছে

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত