সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ আগস্ট, ২০১৯ ২২:১৫

নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আসামজুড়ে আতঙ্ক

নাগরিক তালিকায় নাম আছে কিনা দেখতে ভিড়। ছবি- রয়টার্স

আসামে 'অনুপ্রবেশকারী' বিদেশি নাগরিক কারা সরকারিভাবে তার ঘোষণা হবে শনিবার (৩১ আগস্ট)। কিন্তু নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ এখনও সম্পূর্ণ করতে পারেনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার এক দিন আগেও দলিল দস্তাবেজ নিয়ে ডাকা হচ্ছে সন্দেহের তালিকায় থাকা বাঙালিদের। এতেই প্রশ্ন উঠছে শেষ মুহূর্তে যাদের শুনানিতে ডাকা হচ্ছে তাদের নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে শেষ পর্যন্ত?

আসামের গণমাধ্যমগুলোর খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবারও রাজ্যের বহু মানুষকে নোটিসের আদেশ অনুযায়ী শুনানিতে হাজির হতে হয়েছে যাদের আবার বেশিরভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাদের পূর্ব পুরুষের নাগরিকত্ব নিয়ে নানা রকম প্রমাণপত্র দেখতে চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবারও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া জারি থাকবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একেবারে শেষ মুহূর্তে শুনানি নিয়ে এনআরসিতে কারও নাম অন্তর্ভুক্তি বা ছাটাই করা কী করে সম্ভব? কারণ প্রকাশ করার আগে এই তালিকায় কারও নাম চূড়ান্ত করতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু সেই সংশয় রেখেই শুনানি পর্ব এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন আসামের নাগরিকপঞ্জি কর্তৃপক্ষ।

নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের মাত্র একদিন আগে এভাবে শুনানিতে সংখ্যালঘুদের ডেকে এনে জেরা করা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করেছেন অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন 'আমসু'। সংগঠনটির একজন নেতা আজিজুর রহমান আসামের স্থানীয় বাংলা পত্রিকা দৈনিক যুগশঙ্খকে বলেছেন, যেভাবে শেষ মুহূর্তে এসেও শুনানি চালানো হচ্ছে তাতে এনআরসি কতটা শুদ্ধ হবে সেই সংশয় রয়েছে আমাদের।

এব্যাপারে উচ্চ আদালতের ওপর আস্থা থাকার কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিদেশির সংখ্যা বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে কারও নাম কর্তন করা হলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিকপঞ্জি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

অবৈধ অভিবাসীদের ভারত থেকে বের করতে আসাম রাজ্যের নাগরিক তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর একেই মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আসামের অবৈধ অভিবাসীদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে উল্লেখ করেন। আসামের পর ভারতজুড়ে একই প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব কার্ড ইস্যুর নিয়ম চালুর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন অমিত শাহ। এ বছরের জুনে প্রকাশ করা হয় এনআরসির খসড়া তালিকা। বাদ পড়েন প্রায় ৪০ লাখ মুসলমান।

পাঁচ সন্তানসহ নিজের নাম খসড়া তালিকায় না আসায় আত্মহত্যা করেছেন আসামের বান্তিপুরের বাসিন্দা রহিম আলি। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করা রহিম আলী স্ত্রী হালিমুন্নেসা জানান, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় নাম না এলে ‘বন্দি শিবিরে’ থাকতে হবে তাদের।

দুই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানালেন আসামের হিন্দু বাসিন্দা মাঞ্জুরি ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘যদি আমাকে বিদেশি ঘোষণা করা হয়, তাহলে আমার দুই ছেলের কী হবে?’

এনআরসি সমর্থকরা বলছেন, এটা হিন্দু-মুসলমানের বিষয় নয় কিংবা অবৈধ বাংলাদেশিদের তাড়িয়ে দিতেও নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, অবৈধ অভিবাসীদের কারণে তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।

২০১০ সালে যখন এনআরসির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়, তখন থেকেই আন্দোলন শুরু হয় আসামে। বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন কয়েকজন। তালিকায় যাদের নাম আসবে না, তারা ১২০ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। আপিলেও এনআরসিতে নাম না এলে বাতিল হবে নাগরিকত্ব। এরই মধ্যে এক হাজারের বেশি লোককে আসামের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।

যারা নাগরিকত্ব হারাবেন, তাদের বন্দিশিবিরে নেওয়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আইনি সহায়তা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন আসামের সংখ্যালঘু ও মুসলিম জনগোষ্ঠী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত