লন্ডন প্রতিনিধি

২৪ মার্চ, ২০২০ ১১:৫৩

যুক্তরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে এই কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

এর আগে সীমিত আকারে জনসমাগম ও নানারকম বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। স্কুল-কলেজ ছুটি, পাব-রেস্টুরেন্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

কিন্তু আজ মঙ্গলবার থেকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

কেউ প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা অমান্য করলে তাকে ৩০ পাউন্ড থেকে ১০০০ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে।

আপাতত ৩ সপ্তাহের জন্য ঘোষিত জরুরী অবস্থাকালীন একসাথে দুই জনের অধিক লোক কোথাও জড়ো হতে পারবেন না। জরুরী চিকিৎসাসেবা, খাদ্য সংগ্রহ ও শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে নিকটস্থ পার্কে একবার বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে।

সোমবার লন্ডন সময় রাত সাড়ে আটটায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া টিভি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, খাবার ও ওষুধের দোকান ছাড়া সমস্ত দোকান তৎক্ষণাৎ বন্ধ করতে হবে। দিনে মাত্র একবার শরীর চর্চা ছাড়া ঘর থেকে বের হবার অনুমতি দেওয়া হবে না এবং স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরী সেবায় কর্মরত যারা এবং যে সমস্ত কাজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়, শুধুমাত্র তাদের ভ্রমণে কোন বাধা নেই।

করোনার ভয়াবহ বিস্তার রোধে সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া দয়া করে সবাই ঘরে অবস্থান করেন। দিনে একবার শুধু শরীর চর্চার উদ্দেশ্য একা বা পরিবারের কারো সাথে নিকটস্থ পার্ক বা খোলা জায়গায় বের হওয়া যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে মিলেই এ ভাইরাস মোকাবেলা করতে হবে। একই পরিবারের অনেক সদস্য যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হোন সেক্ষেত্রে এনএইচএস কর্মীদের পক্ষে সম্ভব হবে না সকলকে চিকিৎসা দেওয়া। তাই আমাদের সকলের উচিত এনএইচএসকে সহযোগিতা করা ও তাদের উপর চাপ কমিয়ে আনা।

সবাইকে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমারা সবাই মিলে যদি একত্রে কাজ করি তাহলে খুব দ্রুতই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর জরুরি পণ্যসামগ্রী ব্যতীত সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সীমিত সংখ্যক নিকটাত্মীয়ের উপস্থিতিতে শুধুমাত্র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যতীত বিবাহসহ সবধরণের ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

উল্লেখ্য, এই বিশেষ ঘোষণার আগে গত ১৮ মার্চ বুধবার ব্রিটেনের সব স্কুল, কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণাসহ জিসিএসই ও এ লেভেল পরীক্ষা ঘোষণা করা হয়। অতঃপর জিম, পাব ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ ঘোষণা করে ৩৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের বিশেষ সহায়তার ঘোষণা দেয় সরকার।

তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।

বরিস জনসন বলেন, শতাব্দী সবচেয়ে ভয়ংকর ঝুঁকি মোকাবেলা করছে যুক্তরাজ্য। সকলে মিলে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে হবে, এমন একটি সময় আসবে যখন বিশ্বের কোনও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পারবে না, কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে ভেনটিলেট, ইনটেনসিভ বেড, ডাক্তার এবং নার্স নেই। যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত ৩৩৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মারা গেছেন এবং ৬৬৫০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় বিদেশে থাকা সকল ব্রিটিশ নাগরিকদের দ্রুত দেশের ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব।

প্রসঙ্গত, সরকারের দেওয়া নির্দেশনাগুলো এর আগে না মানায় স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো যুক্তরাজ্য সরকার। আর পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আরও অবনতি হলে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ভ্রমণ।

ব্রিটেন এমন সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলো যখন দেশটি ইতালির ভয়াবহতা থেকে মাত্র ২-১ সপ্তাহ পিছিয়ে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত