নিউজ ডেস্ক

১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ১৪:৪৯

মানবতাবিরোধী অপরাধ: জামালপুরের আটজনের বিরুদ্ধে দশ অভিযোগ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামালপুরের আটজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন প্রসিকিউশন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি-না সে বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

একটি মামলার আসামি ওই আটজন হচ্ছেন আশরাফ হোসেন (৬৪), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (৭১), মো. আবদুল মান্নান (৬৬), মো. আবদুল বারী (৬২), মো. হারুন (৫৮), মো. আবুল হাশেম (৬৫), শামসুল হক ওরফে বদর ভাই (৭৫) ও এস এম ইউসুফ আলী (৮৩)। 

রোববার (১৯ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বলের নেতৃত্বে প্রসিকিউশন টিম ১০৭ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি দাখিল করেন। পরে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি-না সে বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা দু’জন মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পলাতক বাকি ছয়জন ছিলেন আলবদর বাহিনীর। গ্রেফতারকৃত অ্যাডভোকেট শামসুল আলম জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির এবং এস এম ইউসুফ আলী সাবেক জামায়াত নেতা ও সিংহজানি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক। 

আট আসামির বিরুদ্ধে  আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(১), ৪(১) ও ৪(২) ধারা অনুসারে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট ও লাশ গুমের দশটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় তারা অপরাধগুলো সংঘটিত করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে জামালপুরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন, স্থানীয় সাধনা ঔষধালয় দখল করে আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটির কার্যালয় স্থাপন এবং সিংহজানি হাইস্কুলে আলবদরদের প্রশিক্ষণ প্রদান। এছাড়া পিটিআই হোস্টেল ও আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল দখল করে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে সেগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

ঘটনার ৩৪ জন ও জব্দ তালিকার ৬ জনসহ মোট ৪০ জন সাক্ষী ৮ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন। 

মামলাটির প্রধান আসামি পলাতক আশরাফ হোসেন আলবদর বাহিনীর জামালপুর মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তার মাধ্যমেই মূলত ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা কর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। মামলাটি দায়েরের পর থেকেই তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।  

এছাড়া পলাতক অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক এবং বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।

গত ২৫ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এর আগে ২৪ মার্চ সকাল ১১টায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয় সেফহোমে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক এবং এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

৯২ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনসহ ৫৯৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ, দলিল ও ডকুমেন্টস রয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন। 
 
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ৩ মার্চ আশরাফ হোসেনসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানা জারির পর ওই দিনই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে অভিযান চালিয়ে  জামালপুর শহরের নয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে ও ফুলবাড়িয়ার জাহেদা শফির মহিলা কলেজ গেট প্রাঙ্গণ থেকে ইউসুফ আলীকে  গ্রেফতার পুলিশ।  

বর্তমানে কারাগারে থাকা এ দু’জনকে তদন্তের স্বার্থে গত ৬ মার্চ সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত