সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ জুলাই, ২০১৬ ১৭:১৯

ঈদে অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

বর্ষাকালে রোগবালাইয়ের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া এবং গরমে রোগজীবাণুরা খুব সক্রিয় থাকে। আবার পানির সঙ্গে রোগের বিস্তারও হয় খুব সহজে।

সাহিত্যে বাংলার বর্ষা নিয়ে যতই মনোমুগ্ধকর বর্ণনাই থাকুক না কেনো, এ সময় পানি দিয়ে অনেক নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়, বন্যা হয়, অসুখ বিসুখ নতুন পানিতে বিপুল উৎসাহে বেড়ে উঠে।

এই বছরের ঈদ পড়েছে ভরা বর্ষায়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সৃজনী সাহা জানিয়েছেন ভরা বর্ষার এই ঈদে অসুখ বিসুখ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে।

বাংলা মাসের হিসেব অনুযায়ী বর্ষাকাল হলেও গরমের প্রকোপটাই বেশি। এ সময় প্রচুর ঘাম হয়, যার ফলে হতে পারে পানি শূন্যতা। অধিক সূর্যতাপে হিটস্ট্রোকেরও শিকার হওয়ার হারও এই ঋতুতে অধিক থাকে।

এই গরম এই বৃষ্টির কারণে আক্রান্ত হতে পারেন জ্বর, সর্দি, কাশিতে। আবার ঈদের সময় অনিয়ম এবং খাওয়ার বিষয়ে বেহিসাবি হওয়ার কারণে হতে পারে খাদ্যে বিষক্রিয়া বা একিউট গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস। এ ধরনের গ্যাস্ট্রোএন্টারাইসিসে, পেটের ভেতরে জ্বালাপোড়া করে, পেটে ফাঁপা অনুভূতি হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পেট ব্যথা করে।

এ ধরনের সমস্যা থেকে সুস্থ থাকতে করণীয়—

* ঘাম জনিত পানিশূন্যতা দূর করতে হলে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ কমপক্ষে ১২ গ্লাস বা তিন লিটার পানি খেতে হবে। তাই কিছুক্ষণ পরপরই একটু পানি খেয়ে নিতে হবে।

* কোথাও যেতে বা হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। সুতির আরামদায়ক জামা কাপড় পরলে গরম কম লাগে, ফলে ঘামও কম হয়। সঙ্গে পানির বোতল রাখতে পারেন, এতে যখনই পানির অভাব অনুভূত হবে তখনই পানি খেয়ে নিতে হবে।

যদি আশপাশে কেউ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে অতি দ্রুত তাকে ছায়ার তলে নিয়ে যেতে হবে। রোগীর যদি জ্ঞান থাকে তাহলে পানি বা স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আর রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যান তাহলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

* ঋতু পরিবর্তনের কারণে এ সময়টাতে জ্বর, সর্দি হতে পারে। মূলত, ভাইরাসের আক্রমণেই এই জ্বর হয়ে থাকে। যদি তিনদিনের বেশি জ্বর বা সর্দি-কাশি থাকে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর বাড়ে তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ঈদে অনেকেই নিজ শহর ছেড়ে গ্রামে বা অন্য শহরে বেড়াতে যান। ভ্রমণের সময় সঙ্গে রাখতে পারেন প্যারাসিটামল। ঠাণ্ডা ও জ্বরে পূর্ণবয়স্কদের জন্য প্যারাসিটামল ধরনের ওষুধ এবং অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করা যেতে পারে। তবে দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগ থাকলে, সেই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার বিষয়েও বিবেচনায় রাখতে হবে।

* ঈদের সময় বাড়িতে বা বিভিন্ন দাওয়াতে চর্বিযুক্ত খাবার এবং অন্যান্য ভারী খাবার তৈরি করা হয়। যতদূর সম্ভব ঘি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মিষ্টিজাতীয় খাবার ও কোমল পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। তবে যত খুশি মাছ, ফলমূল ও শাকসবজি খেতে বাধা নেই। খাওয়া যেতে পারে হালকা ভাজা বা ঝলসানো মাংস।

বেহিসেবী খাওয়ার কারণে হতে পারে পেট খারাপ বা পেটের পীড়া। যেহেতু ছুটিতে দোকান বন্ধ থাকে, তাই মুখে খাওয়ার স্যালাইন সঙ্গে রাখা উচিৎ। যদি পাতলা পায়খানার সঙ্গে জ্বর ও পেটে ব্যথা থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

*. সুস্থ থাকতে চাইলে রাস্তার পাশের খাবার একদম বাদ দিতে হবে।

* বর্ষার সময়ে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। জ্বরের সঙ্গে মাথা এবং চোখ ব্যথা, শরীর প্রচণ্ড ব্যথা, বমি হওয়া, শরীরে লাল লাল র‍্যাশের মতো দেখা দিলে অবহেলা না করে হাসপাতালে যেতে হবে।

* যারা গ্রামে ঈদ করতে যাবেন তাদের সাপের বিষয়ে সচেতনতা থাকতে হবে। এ সময়টাতে সাপের উপদ্রব বাড়ে। যদি কোনোভাবে সাপে কামড়ায়, তবে ঘাবড়ানো যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যেতে হবে এবং লক্ষ রাখতে হবে চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ বন্ধ হয়ে আসা, মাথা ঘোরানো, ঘাড় ভেঙে আসার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিনা।

সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪

আপনার মন্তব্য

আলোচিত