সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ২০:৩২

চল্লিশ মানে জীবনের শেষ নয়

চল্লিশ পেরোলে বুড়ো হয়ে যাবেন এখন আর সেই ভাবনার যুগ নেই। মানুষ চল্লিশ মানেই কিছু আগেও ভাবত জীবনের শেষ। কিন্তু এখন চল্লিশ বছর বয়স মানে আপনি অর্ধেক জীবনও পার করেননি। আবার অনেকেই বলেন, চল্লিশে জীবন শুরু।

এদিকে আপনি চল্লিশতম জন্মদিন উদযাপন করে ফেলেছেন, অথচ এখনো নিশ্চিত না যে জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করছেন কি না? তাহলে চল্লিশ পরবর্তী বাকি জীবন একটা সুখী সুন্দর যাপনের জন্য আমরা আপনার জন্য বেশকিছু টিপস নিয়ে এসেছি। ভুলবেন না, চল্লিশ মানে জীবনের শেষ না বরং এটাই নতুন করে শুরু। করার আছে অনেককিছু।

নিজের লক্ষ্য সংশোধন করুন
বয়স চল্লিশ মানেই হয়ত রুটিনের ফাঁদে নিজেকে আটকে ফেলেছেন। কিন্তু তাতে কী আপনার আপনিকে হারিয়ে ফেলেননি? এখন সময় এসেছে নিজের দিকে ফিরে তাকানোর। একটু বিরতি নিন আর ভেবে দেখুন যে আপনার চাকরি, দাম্পত্য, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, জীবনযাপন সব মিলিয়ে আপনি ভালো আছেন কিনা। এখনই সময় নতুন করে বিচার করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

স্বপ্নের গন্তব্যে যাওয়ার এখনই সময়
চল্লিশে পৌঁছে আপনি জীবনে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। এখন আপনি নিজের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতেই পারেন। এখনই সময় সুন্দর সুন্দর অদেখা জায়গা দেখার, নিজেকে সুন্দর দেখানোর, সুখাদ্য দিয়ে নিজেকে আপ্যায়ন করার আর সুন্দর কোন জায়গায় থাকার। এখনো আপনি যথেষ্ট তরুণ, নিজেকে ভঙ্গুর আর ভাঁজপড়া চামড়ার বস্তা ভেবে মনমরা থেকে সময় নষ্ট না করে আজই বেরিয়ে পড়ুন স্বপ্নের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

বয়স অনুযায়ী কাপড় পরুন
এই বয়সে এসে অনেকেই নিজেকে তরুণ দেখাতে তরুণদের মত পোশাক পরেন যা আসলে ঠিক না। তরুণদের পোশাকে যে বয়সের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয় তা বছর চল্লিশের মুখশ্রীর সাথে মানানসই না। এর মানে এই না যে আপনাকে বুড়ো সেজে চলতে হবে। আপনি আপনার পছন্দের কাপড়ই পরুন তবে লক্ষ্য রাখুন ফেব্রিক, কাট আর পোশাকের গুণগত মানে।

ফিটনেস সেন্টারে যাওয়ার এইতো সময়
আপনার বিশ বা তিরিশে কোন জিম, সাঁতার, ইয়োগা বা অন্য কোন ফিটনেস সেন্টারে যাননি। তো কী? এখনই যোগ দিন আপনার সুবিধামত কোন ফিটনেস সেন্টারে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে আপনি হয়ত বুঝতে পারছেন যে আপনার আর আগের মত স্ট্যামিনা নাই। আর ঠিক এই কারনেই আপনার দরকার নিজেকে ফিট রাখা। এখনো যেতে হবে বহুদূর।

বেছে নিন আরামদায়ক জীবনযাপন
সাধারণত মধ্য বিশ থেকেই আমরা কোন না কোন কাজ করতে শুরু করি তাই চল্লিশে এসে নিজের জন্য খরচ করার মত টাকা থেকেই যায় আমাদের হাতে। কোথাও যেতে হলে ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কাটতেই পারেন এখন কিংবা একটু আরামের জন্য এপসভিত্তিক ট্রান্সপোর্ট যেমন উবার ব্যবহার করতেই পারেন। মাঝেমধ্যে পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে দামী রেস্টুরেন্টে খেতেও যেতে পারেন। এতটুকু ব্যয় তো নিজের জন্য করতেই পারেন এখন এসে।

আত্মবিশ্বাসী হোন
এই বয়সে এসে দেখবেন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুণ। নিজের সৌন্দর্য, গায়ের রঙ, শারীরিক গঠন নিয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। অনেকেই মনে করেন, এই বয়সে এসে প্রেম, বন্ধুত্ব, রোমান্স ইত্যাদিতে ভাটা পড়ে যায়। কিন্তু তা একদমই ঠিক না। চল্লিশে পৌঁছে হাসি আনন্দে জীবন উপভোগ করার কোন সুযোগই আপনার ছাড়া উচিৎ না।

কাউকে সাহায্য করুন
অনেক আগে থেকেই হয়ত চাইতেন নিজের সামর্থ্যের মধ্যে থেকে কোন সংগঠন বা কাউকে সাহায্য করতে। অথচ নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এখন এসে সেটা করতেই পারেন। কারণ, অনেকেই আছে যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের সাহায্য করলে দেখবেন নিজের মনে একধরণের প্রশান্তি আসছে। চাইলে সুবিধাবঞ্চিত কোন শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে পারেন। মোটকথা এমন কিছু করুন, যাতে আপনার মৃত্যুর পরেও আপনাকে মানুষ মনে রাখে।

বাবা মা কে সন্তুষ্ট রাখুন
আপনার সাথে সাথে আপনার বাবা মায়েরও বয়স বাড়ছে। তাই তাদের জন্য সময় বের করুন। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান, রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যান কিংবা তাদের পছন্দের শপিং এ নিয়ে যান। বাবা মায়ের জন্য কিছু করলে মানসিকভাবে এতটাই শান্তি পাবেন যার তুলনাই নেই কোন। একইসাথে এতদিন কাজ আর দায়িত্বের চাপে যেসব আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি তাদের সাথেও যোগাযোগ করুন, ভালো লাগবে।

শখের কাজ করুন
আপনার হয়ত শখ ছিল গান গাইবেন, নাচ শিখবেন, গিটার বাজাবেন, কিংবা ছবি আঁকবেন। নান ব্যস্ততায় কখনো পূরণ হয়নি। এখনই সময় নিজের শখের কাজে মনোনিবেশ করার। শিখতে পারেন সাইক্লিং, স্কেটিং অথবা নতুন কোন ভাষা।

রোমান্সকে গুরুত্ব দিন
নানা দায়দায়িত্ব আর কাজের চাপে জীবনে রোমান্স কমে যাচ্ছে? ভাবছেন, এখন কী আর ওসবের সময় আছে নাকি! ভুলটা এখানেই করছেন। এই বয়সে এসেই আপনার উচিৎ হবে দাম্পত্য সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া। সঙ্গীকে নিয়ে যেতে পারেন দারুণ কোন রোমান্টিক ডেটে, ক্যান্ডেললাইট ডিনারে কিংবা কোথাও গিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন একান্ত কিছু সময়। দেখতে পারেন চমৎকার কোন মুভি কিংবা পূরণ করতে পারেন অপূর্ণ সব আশা। এসবের সাথে সঙ্গীর সাথে যৌনজীবনকে উপভোগ করুন পুরোপুরি, নিজেকে বুড়ো ভাবার কোন কারণই নাই।

নিয়মিত চিকিৎসক দেখান
রোগব্যাধি হলেই যে শুধু ডাক্তারের চেম্বারে যাবেন তাই নয়, এখনই সময় নিয়মিত বিরতিতে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর। চোখ, দাঁত, রক্তের সুগার লেভেল কিংবা কোলেস্টেরল ইত্যাদি নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে আগেভাগে ধরা পড়লে বড়ধরণের ঝুঁকি এড়ানো যাবে। সেই সাথে স্বাস্থ্য কিংবা জীবন বীমা করা না থাকলে এখনই করে ফেলুন।

নতুন নতুন বন্ধু বানান
দেখা যায় তরুণ বয়সেই আমরা আজীবনের জন্য বন্ধু বানিয়ে ফেলি। এমন না যে আপনাকে শুধুই নিজের পরিবার, পরিজন, সন্তান ইত্যাদি নিয়েই কাটাতে হবে। এই বয়সে এসেও আপনি নতুন বন্ধু বানাতেই পারেন। এতে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
সাধারণত ৩৫ এর পরে প্রত্যেক দশকে অন্তত পাঁচ পাউন্ড করে ওজন বাড়ে। তাই চল্লিশে এসে নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি খাবারেও নিয়ন্ত্রণ আনুন। ভবিষ্যতে নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে ব্যায়ামের মাধ্যমে মাসল বিল্ড আপের ব্যাপারে এখনই নজর রাখা উচিৎ।

সন্তানের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন
আপনার যদি সন্তান থাকে তাহলে তার ভবিষ্যৎ পড়াশোনার জন্য টাকাপয়সা জমানো শুরু করা উচিৎ।

সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় হন
আপনার বয়স বাড়লেও তথ্যপ্রযুক্তি কিন্তু দিন দিন আরো এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত একটিভ থাকবেন নিজেকে আরও বেশি আপ টু ডেট আর তরুণ মনে হবে। এতে করে নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা বুঝতে সুবিধা হবে।

অবসরজীবনের পরিকল্পনা করুন
অবসর মানে এই না যে আপনাকে টাকা পয়সা নিয়েই ভাবতে হবে। আমরা বলছি অবসরের পরে কী করবেন সেটা নিয়ে ভাবতে। আরও ৪০ বছর হয়ত বাঁচবেন কিংবা আরও বেশি। অবসর জীবনে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা যেন না থাকে সেটা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজেকে সুস্থ আর কর্মক্ষম রাখার ব্যপারেও আপনাকে এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। দারুণ একটা অবসরজীবন কাটাতে এখন থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা জরুরি। ভবিষ্যতের জন্য কোন বাড়ি যদি না করে থাকেন, এখনই তা শুরু করুন বা প্রস্তুতি নিন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত