নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জুলাই, ২০২০ ২১:৩৯

যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি নির্মূল কমিটির

পলাতক যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনুদ্দীন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রিটেনে পলাতক চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দেয়ার ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকে অভিনন্দন জানিয়েছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। পাশাপাশি এই যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

সোমবার (২০ জুলাই) সংগঠনের সভাপতি লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবির এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধকালে ১৮ জন বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রিটেনে পলাতক আলবদর নেতা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল যুদ্ধাপরাধী বলেছেন এবং এর জন্য এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৬০ হাজার পাউন্ডের ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে। গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করার জন্য আমরা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাবার পাশাপাশি আমরা এই যুদ্ধাপরাধীর ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের তীব্র নিন্দা করছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের সময় ’৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে যথারীতি আদালতে সমন করা হয়েছিল এবং অন্যান্য অভিযুক্তের মতো আত্মপক্ষ সমর্থনের সব রকম সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এই ঘৃণিত গণহত্যাকারীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীসহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল, হত্যাকারী ব্রিটেনে অবস্থান করায় ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত দণ্ড কার্যকর করা যায়নি।

তারা বলেন, ‘চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের মতো ’৭১-এর আরেক শীর্ষ গণহত্যাকারী আন্তর্জাতিক অপরাধী ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জল্লাদ আশরাফুজ্জামান দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। ‘পশ্চিমা দেশসমূহের আইন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের মতো গণহত্যাকারীরা সে সব দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে এবং এসব দেশ যেহেতু মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না সেহেতু বিভিন্ন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীরা ইউরোপ ও আমেরিকাকে গণহত্যাকারী ও অন্যান্য ভয়ঙ্কর অপরাধীদের নিরাপদ স্বর্গে পরিণত করতে চাইছে। এসব দেশের সরকার এবং নাগরিক সমাজকে উপলব্ধি করতে হবে গণহত্যার মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে হলে গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির কোনও বিকল্প নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আবারও ব্রিটিশ ও মার্কিন সরকারের নিকট আহ্বান জানাব- ইসলামের দোহাই দিয়ে গণহত্যাকারী এসব ভয়ঙ্কর অপরাধীকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়া হলে তাদের ঘোষিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ তারা কখনও জয়ী হতে পারবে না। কারণ চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের মতো ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরীহ মুসলিম নাগরিকদের ভেতর ইসলামের নামে সন্ত্রাসী জিহাদি উন্মাদনা সৃষ্টির বিভিন্ন জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। এসব দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায়, আইনের শাসন এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে দণ্ডভোগের জন্য বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। আমরা আশা করব বঙ্গবন্ধুর পলাতক হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও কার্যকর কূটনৈতিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত