সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ জুলাই, ২০২০ ০২:৪০

সেপ্টেম্বরের আগে খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

করোনার ছোবলে আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। ইতোমধ্যে করোনার কারণে বন্ধের ৪ মাস পার হয়েছে।

ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহত থাকায় শিগগিরই খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। আগস্টের বাকি সময়টাও ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে।

এদিকে সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাঠের সিলেবাস পর্যালোচনার কাজ চলছে। শিক্ষার্থীর বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী জ্ঞান অর্জনের বিষয় সামনে রেখে প্রস্তুত করা হচ্ছে সিলেবাস।

তবে সেপ্টেম্বরে খুলতে না পারলে শিক্ষাবর্ষ দুই মাস বাড়ানোর বিকল্প চিন্তাও আছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। হয়তো সেপ্টেম্বরের আগে খুলে দেব না।

সেপ্টেম্বর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সিলেবাস ও কারিকুলাম পর্যালোচনা করছি। প্রয়োজনে কর্মদিবস বিবেচনায় নিয়ে সিলেবাস সংক্ষেপ হচ্ছে। এ নিয়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) কাজ করছে।

আর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা। ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি যখন নিশ্চিত করা যাবে তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তবে ৬ আগস্টের পর ছুটি বাড়ছে কি না, তা ঈদের আগেই জানিয়ে দেয়া হবে। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভুয়া আইডি থেকে ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবকই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে যোগাযোগ করছেন।

এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। অথচ আমাদের নাম দিয়ে জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের নামে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় শিক্ষা বোর্ড নামে কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই।’

ওই বিবৃতিতে তিনি গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়রা হুশিয়ারি দিয়েছেন।

তবে দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, ঈদের পর না হলেও সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। যদি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বেশ নিম্নগামী হয় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীলরা আশ্বস্ত হন তাহলেই প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।

এ কারণে আপাতত দুটি পরিকল্পনা সামনে রেখে প্রস্তুতি চলছে। একটি হচ্ছে, সেপ্টেম্বরে খুলে দেয়া, আরেকটি এরপর যে কোনো সময়ে খুলে দেয়া।

কয়েকদিন আগে এ নিয়ে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উভয় মন্ত্রণালয়ের আলাদা বৈঠক হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বলা হয়েছে, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধরা হলে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে মোট ৫৪টি কর্মদিবস চলে যাবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্লাস নেয়া গেলে ৫৪ দিনের ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে।

সে ক্ষেত্রে কিছু ছুটি কমিয়ে হলেও বিদ্যমান সিলেবাস শেষ করা যাবে। এই যুক্তিতে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা সিলেবাস সংক্ষেপ না করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছেন। ওই বৈঠকে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞ জানান, তারা সিলেবাস সংক্ষেপ না করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছেন।

কেননা, প্রাথমিকের কারিকুলাম হচ্ছে ‘শিখনফল’ভিত্তিক। না পড়ালে শিশুরা শিখবে না।

তিনি জানান, প্রাথমিকের পাঠ্যবই সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করে এরপর ‘রিভিশন’ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সিলেবাস সাজানো আছে। ছুটির কারণে এবার হয়তো রিভিশন দেয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু সিলেবাস একবার শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। আর যদি সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠান না খোলা যায়, সে ক্ষেত্রে সিলেবাসের পাঠ শেষ করতে নতুন বছরের দু-এক মাস লেগে যেতে পারে।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বলা হয়েছে, প্রত্যেক শ্রেণির প্রত্যেক বিষয়ের কিছু লেখাপড়ার সঙ্গে পরেরটির সংযোগ আছে। এমন পাঠ বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার অষ্টম এবং নবম-দশম ও একাদশ শ্রেণির পাঠ সংক্ষেপ করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের সিলেবাস পুরোটাই শেষ করা জরুরি।

এই বিবেচনায় শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সিলেবাস পর্যালোচনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি)। অষ্টম, নবম-দশম এবং একাদশ-শ্রেণির পুরো সিলেবাস শেষ করেই এবারের জেএসসি এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে।

সে ক্ষেত্রে ১ নভেম্বর জেএসসি এবং ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ও ১ এপ্রিল যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। এই তিন পরীক্ষাই পেছাতে পারে। সূত্র জানায়, সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে জেএসসি এবং কমপক্ষে দু’মাস করে পিছিয়ে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে।

আর যদি সেপ্টেম্বরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া না যায়, তাহলে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নেয়া হতে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, আমাদের হাতে একাধিক বিকল্প আছে। আগস্ট মাসে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা গেলে সিলেবাস কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা নির্ধারণ করা আছে।

আবার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-এই দুই মাসের যে কোনো একটিতে শ্রেণিকার্যক্রম শুরু করা গেলে কী করতে হবে, তাও ঠিক করা আছে। কিন্তু করোনার অনিশ্চয়তার কারণে আমরা পরিকল্পনা প্রকাশ করতে পারছি না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য যে সিদ্ধান্ত সবচেয়ে ভালো হবে, সেটাই গ্রহণ করা হবে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, পৃথিবীর যেসব দেশ করোনাকে প্রায় জয় করেছে সেসব দেশ ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। তবে এ জন্য তারা সুরক্ষামূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

স্কুল খুলে দিতে হলে প্রতিষ্ঠানে ঢোকার সময় শিশুদের হাত ধোয়া, ক্লাসে শিক্ষার্থী কমিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। নইলে প্রতিষ্ঠান খুলেও লাভ হবে না। কেননা, অনেক অভিভাবক হয়তো সন্তানকে স্কুলে পাঠাবেন না।

তবে সবচেয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে পরিস্থিতি উত্তরণের পর প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা। প্রতিষ্ঠান খোলার পর কীভাবে লেখাপড়া চলবে এবং কতদিন চলবে সেই পরিকল্পনা এখন চূড়ান্ত করে রাখা প্রয়োজন।
সূত্র: যুগান্তর

আপনার মন্তব্য

আলোচিত