সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ আগস্ট, ২০২০ ২৩:০০

বড় নদীর পাঁচ-সাত কিলোমিটারের মধ্যে সেতু করা যাবে না

নীতিমালা করছে সরকার

দেশের বড় নদীগুলোর পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোন সেতু না করার নীতিমালা করছে সরকার। এ নিয়ে একটি খসড়া মন্ত্রিসভায় দাখিলের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়।

রোববার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর উপর পিসি গার্ডার সেতু এবং চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুর ডিজাইন সংক্রান্ত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকন উদ-দৌলা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ খান, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোতাহের হোসেন, সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালকসহ কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

নদীর নাব্যতার স্বার্থে বড় বড় নদীগুলোতে ন্যূনতম পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোন সেতু না করার ব্যাপারে কমিটিকে একটি নীতিমালা করে তার খসড়া মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে বলেন সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিস্তা নদীর উপর নির্মিতব্য পিসি গার্ডার সেতু এবং ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিতব্য সেতু নদীর নাব্যতা, পানি প্রবাহ ও নৌ চলাচল ইত্যাদি বিষয় ঠিক আছে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করে এই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করতে বলেন তিনি।

হাইড্রলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল ও নেভিগেশন সমীক্ষায় নদীর বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে নব্যতা বৃদ্ধি করে পানি সরবরাহ, মৎস্য চাষ এবং কৃষি সেচ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন ব্রিজ নির্মাণের সময় নদীর দুই পাশের খাল কোন অবস্থাতেই সংকোচন করা যাবে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ যে সকল সংস্থা ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করছে তাদের সকলকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নেভিগেশন, নদীর নাব্যতা, ড্রেজিং এবং নৌ চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রেখে নির্মাণ করার আহ্বান জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

দেশের গ্রামগঞ্জে নতুন পাকা রাস্তা সেতু-কালভার্ট করতে হলে স্ব স্ব উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যাতে যত্রতত্র রাস্তা, ব্রিজ নির্মাণ করে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না হয় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা যেতে পারে উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে যে প্রতিবেদন দেয়া হবে তা বিবেচনায় নিয়ে রাস্তা এবং ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হবে। এতে যত্রতত্র রাস্তা-ঘাট এবং ব্রিজ নির্মাণ বন্ধ হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে নদীর নাব্যতা, পানি প্রবাহ ঠিক রাখা, নৌ চলাচল, কৃষি সেচ ও মৎস এবং পরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং যেখানে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ না করে অর্থাৎ আইন অনুযায়ী নির্মাণ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ-সহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী এবং জমির উপর অর্থনীতির বড় একটি অংশ নির্ভর করে। তাই নদীর যে বহুমাত্রিক সুবিধা আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জোরদার করতে হবে।

উল্লেখ্য, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাথে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিসহ কুড়িগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকার শহীদ যাতায়াতের দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ৮৮৫ দশমিক ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর উপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অনুমোদন দেয় একনেক।

এছাড়া সভায় চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রকল্পে নদীর নাব্যতা ড্রেজিং পরিবেশ সহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ডিজাইন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।





আপনার মন্তব্য

আলোচিত