সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ আগস্ট, ২০২০ ২৩:০৯

ফেসবুকে ব্যক্তিগত ছবি প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন শিপ্রা

ফেসবুকে ব্যক্তিগত ছবি ছাড়িয়ে হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শিপ্রা দেবনাথ। অসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনা ধামাপাচা দিতেই একটি মহল এমনটি করছে বলেও অভিযোগ তার।

সোমবার এক ভিডিও বার্তায় এমনটি বলেন শিপ্রা দেবনাথ।

কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত অসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের ‘ডকুমেন্টারি’ নির্মাণে সম্পৃক্ত শিপ্রা এখন র‌্যাবের নিরাপত্তায় থাকলেও তার ব্যক্তিগত নানা ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পুলিশের কিছু সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে।

এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শিপ্রা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাকে হেনস্তায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ভিডিও বার্তায় শিপ্রা দেবনাথ বলেন, “একজন মানুষ হত্যাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমার টুঁটি চেপে ধরে আমাকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিলে লাখো তরুণ-তরুণী এর প্রতিশোধ নেওয়া থেকে নিশ্চয়ই বিরত থাকবে না।

“আমি একজন ছাত্রী, পড়াশুনার পাশাপশি কাজ করি। একটি স্বাধীন দেশে একজন নারীর কারও অধিকার ক্ষুণ্ন না করে নিজের পছন্দমতো বেঁচে থাকার অধিকার কি নেই?”

শিপ্রা বলেন, “গত কিছু দিন ধরে আমার একান্ত কিছু ছবি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এডিট করে, ট্রেইলার করে অথবা আমার বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রকাশ করা হচ্ছে।”

এজন্য সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়ী করেননি শিপ্রা। তবে পুলিশ বাহিনীর কেউ এই কাজ করছেন বলে সন্দেহ তার।

শিপ্রা বলেন, “মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ আমাদের রিসোর্টে এসে দুটি মনিটর, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, ক্যামেরা, লেন্স, তিনটি হার্ডড্রাইভ এবং আমাদের ফোন ডিভাইস সব নিয়ে যায়, জব্দ তালিকায় যার কোনোটিরই উল্লেখ নেই। আমি জানি না, কীভাবে কার কাছে সেগুলো ফেরত চাইব।

বিজ্ঞাপন



তিনি বলেন, “আমাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে, ডিভাইস থেকে সেই ছবি চুরি করে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের দায়িত্বশীল অফিসাররাই ফেইসবুকে সেই সব শেয়ার করেছেন।”

এই তরুণী বলেন, “আমার ব্যক্তিজীবন যারা অসহনীয় করে তুলেছেন বিভিন্ন ছবি দিয়ে, আমি প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কথা দিলাম।”

নারীর নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রীকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিপ্রা বলেন, “আমি মনে করি, আমার চরিত্রহননের চেষ্টার মাধ্যমে এই দেশে (ঘরের) বাইরে কাজ করা প্রতিটি নারীর জন্য নিগৃহীত ও অপমানজনক আচরণ এটি।”

অপপ্রচারে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সমস্ত পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করছি না, এখানে অনেক সৎ অফিসার রয়েছেন। কিন্তু এইরূপ হত্যাকারী কর্মকর্তা এবং একজন নারীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকৃতভাবে উপস্থাপনকারী অসুস্থ মানসিকতার পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওয়তায় না আনা হলে এই কলঙ্কের দায়ভার সমস্ত বাহিনীর ওপর ন্যস্ত হবে।”

ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্রী শিপ্রা দেবনাথের সঙ্গে সিনহা মো. রাশেদ খানের পরিচয় দেড় বছর আগে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে গিয়ে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তারা।

সেই পরিকল্পনা থেকে ‘জাস্ট গো’ নামে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক পেইজ খুলে ডকুমেন্টারি নির্মাণ শুরু করেন। শুটিং ও এডিটিংয়ে সহায়তার জন্য সহপাঠী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূরকে সঙ্গে নিয়ে চারজনের দল হয়ে জুলাইয়ের শুরুর দিকে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন শিপ্রারা।

সেখানে কাজ চলার মধ্যে গত ৩১ জুলাই টেকনাফের একটি তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে সিনহা রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর শিপ্রা ও সিফাতকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে এই মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ পুলিশের সাত সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে ছাড়া পান তারা।

এরপর সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে তাদের তৈরি করা একটি ডকুমেন্টারি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিও তাদের প্রকাশিত না হওয়ায় নিজেদের ‘স্বপ্নকে’ টিকিয়ে রাখতে ‘জাস্ট গো’-তে ডকুমেন্টারি প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন শিপ্রা। এরপরই শুরু হয় তাকে নিয়ে নানা ধরনের ‘নোংরা’ প্রচারণা।

সিনহা হত্যাকাণ্ডের জন্য ওসি প্রদীপ কুমার এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন শিপ্রা।

ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনী আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। ৩১ জুলাই রাতে এই বাহিনীর কুখ্যাত ওসি প্রদীপ ও তার সহচর ইন্সপেক্টর লিয়াকত ‘ঠাণ্ডা মাথায়’ মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করেন।”

ওই রাতের পরবর্তী ঘটনাবলীর বর্ণনায় শিপ্রা বলেন, “ঘটনার দিন ৩১ জুলাই প্রায় রাত ১২টার দিকে ১০-১২ জন পুলিশ আমাদের রিসোর্টে (নীলিমা রিসোর্ট) প্রবেশ করে। কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট, মহিলা পুলিশ ছাড়াই তারা সেখানে আসেন এবং আমাকে সময় না দিয়ে, মোটামুটি আমার অনুমতি ছাড়াই আমাদের কটেজে তল্লাশি শুরু করেন।

“রাত আনুমানিক আড়াইটার পর সিভিল ড্রেসে কিছু অফিসার আসলে, আমি তাদের প্রশ্নে করি। তখন তারা জানায়, ইয়েস সিনহা ইজ ডেড। এরপর রাত ৪টার দিকে আমাকে ও তাহসিন নূরকে কোনো প্রকার ইঙ্গিত ছাড়াই রামু থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।”

পরদিন কক্সবাজার কারাগারে নেওয়ার পর ‘মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার কথা জানতে পারেন’ বলে জানান শিপ্রা।

ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমি মেজর সিনহা হত্যার বিচার চাই। আমার ও আমার সহকর্মীদের চরিত্র হননের চেষ্টাকারীদের বিচার চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুনজর চাই।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত