সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:৫৮

মামলা করায় হুমকি দিচ্ছেন বাবুনগরী : শফীর শ্যালক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফীকে হত্যার মামলা করায় সংগঠনের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগটি এনেছেন মামলার বাদী আল্লামা শফীর শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, হেফাজত আমির যদি দোষী হন, তাহলে তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে।

মঈনের অভিযোগ, আল্লামা শফীকে কেবল হত্যাই করা হয়নি, তার বড় ছেলেকে জানাজার সময় বলতে বাধ্য করা হয়েছে এই মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল।

১০৪ বছর বয়সী শাহ আহমদ শফী নেতা গত ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার দুই দিন আগে তার হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়।

শফীর খাদেম এবং তার এক নাতির লেখা এক পুস্তিকায় অভিযোগ করা হয়েছে, সেদিন শফীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে, তার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছে, হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেয়া হয়নি, পরে অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আর ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি হয়ে গেছে। পরদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এই ঘটনায় হেফাজতে স্পষ্টত বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং গত ১৭ ডিসেম্বর ৩৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয় চট্টগ্রামের একটি আদালতে, যার আসামিদের সিংহভাগ হেফাজতের বর্তমান কমিটির নেতা।

চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম শিবলু কুমার দের আদালতে মামলাটি করেন শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। আসামিদের মধ্যে আছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস নদভী, সহকারী যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আল্লামা শফীকে গৃহবন্দি করে নির্যাতনের মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে থেকে খাবার, ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ আবু হানিফ নিউজবাংলাকে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে।

মামলা করার ছয়দিন পর গত ২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এসে বাবুনগরী বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ এনে যে মামলা করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ এ মামলা।’

এর তিন দিন পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন মঈন উদ্দিন। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘আদালতে মামলা হয়েছে। পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে। তদন্তে দোষীরা চিহ্নিত হবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জুনায়েদ বাবুনগরী গংরা মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে।’

শফীর শ্যালক বলেন, ‘মামলা নিয়ে তাদের এত ভয় কেন যদি তারা নির্দোষ হয়ে থাকেন। আমাদেরকে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি কেন দেওয়া হচ্ছে? আমরা হুমকির প্রতিবাদ জানাচ্ছি পাশাপাশি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে হয়।’

মঈন উদ্দিন বলেন, ‘জুনায়েদ বাবুনগরী যদি নির্দোষ হন তাহলে আমাদের কোনো রাগ অভিমান নেই। কিন্তু তিনি যদি দোষী হন তাহলে তার শাস্তি ও ফাঁসি দাবি করছি।’

শফীর শ্যালক বলেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসা কী ঘটেছে তা সবাই জানে। কওমি ভিশন নামে অনলাইন টিভির মাধ্যমে জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসায় অবস্থান করে সব লাইভ প্রচার করেছেন। সে সময় আহমদ শফীর রুম কীভাবে ভাঙচুর এবং লুট করা হয়েছে সেটি সবাই দেখেছেন।

‘মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর, মীর ইদ্রিস, মাওলানা শহীদুল্লাহ, ইনআমুল হাসান, জুনায়েদ বাবুনগরীর উপস্থিতিতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে আহমদ শফীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল সেদিন।’

মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতির জানাযায় জুনায়েদ বাবুনগরীর হস্তক্ষেপে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির, বিএনপি, হুজি (হরকাতুল জিহাদ), হিজবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতি লক্ষণীয় ছিল। সেদিন আমার ভাগিনা ও আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ জানাজা পড়ালেও জুনায়েদ বাবুনগরীর চাপে মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো জানাযার আগে বলতে পারেনি।’

জুনায়েদ বাবুনগরী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ তার পিতার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছিল বলে বক্তব্য রেখেছেন।

এর জবাবে মঈন উদ্দিন বলেন, ‘এই বক্তব্যটি সত্য। ওইদিন জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার দোসররা আমার ভাগিনাকে জিম্মি করে ওই বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছিল।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত