নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ জানুয়ারি, ২০২১ ০১:৪৬

বিদায় বিষাদের বছর, স্বাগত ২০২১

জরা, মৃত্যু আর বিষাদের একটি বছর পেরিয়ে গেলো। ২০২০ সত্যিই বিষ নিয়ে হাজির হয়েছিলো মানবজাতির জন্য। করোনা সংক্রমণের কারণে পুরো বিশ্বই ছিলো তটস্থ। পুরো বিশ্বজুড়েই ছিলো মৃত্যুর মিছিল। আর ঘরবন্দি জীবন।

সেই ভয় এখনও কাটেনি। থামেনি মৃত্যুর মিছিলও। তবু বছরের শেষ সময়ে এসে আশা জাগিয়েছে করোনার টিকা উদ্ভাবন। ইতোমধ্যে টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে কিছু দেশে। ধারণা করা হচ্ছে নতুন বছরের শুরুতে টিকা বিশ্বময় পৌঁছে যাবে। এই আশা নিয়েই এলো নতুন বছর। এলো নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে। স্বাগত ২০২১। মৃত্যুর মিছিল তবে থামুক। হোক জীবনের জয়গান।

২০২০ সাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষিকী। উৎসবের আমেজ। ছিলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের প্রস্তুতি। কিন্তু সবকিছু থেমে যায় করেনায়। অর্থনীতি ও জীবিকায় ভয়াবহ ধাক্কা।  সেই সঙ্গে চলে যাওয়া বছর নিয়ে গেছে অনেক প্রাণ। বাংলাদেশও চলে যাওয়া বছর ছিলো বেদনাদায়ক। এই বছরে চলে গেছেন অনেকে। মুক্তিযুদ্ধের পর এক বছরে এত আলোকিত, সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব ও উদ্যোক্তাকে হারায়নি বাংলাদেশ।

বিষাদ, বিচ্ছেতের এই বছর ফুরলো শেষ পর্যন্ত। এলো আরো একটি বছর। শুরু হলো নতুন বছর। স্বাগত খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০২১। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও নানা আয়োজনে উদযাপন হবে।

২০২০ ছিল মহামারি, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ২০২০ সালে এসে একসঙ্গে অনেকগুলো মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। প্রাণঘাতী করোনা কেড়ে নিয়েছে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ দেশের হাজারো মানুষের প্রাণ। ঘটনাবহুল বছরটি মানুষের জীবনাচারে এনেছে আমূল পরিবর্তন। শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যস্ত ছিল পুরো বিশ্ব।

করোনা মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টি, দীর্ঘ সময়ের জন্য সরকারি ছুটি, ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা প্রশংসা পায়। অন্যদিকে টেস্টে অনিয়ম, করোনা সামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম ও সরকারি সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা হয় দেশজুড়ে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, শেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে দৃশ্যমান করা, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রায়, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো, যুবা ক্রিকেট দলের আইসিসির অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় বিদায়ী বছরের বড় প্রাপ্তি।

চীনের উহান থেকে ছড়ানো মহামারি, লেবাননের ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কৃষাঙ্গ হত্যাকাণ্ডের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ, জলঘোলা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়, ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলেইমানি হত্যা, বিভিন্ন আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনসহ নানা ঘটনার সাক্ষী ২০২০।

মহামারিতে পুরো বিশ্ব যখন টালমাটাল তখন করোনা টিকার উদ্ভাবনের খবর দেয় রাশিয়া। এরপর ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক যৌথভাবে করোনা টিকা উদ্ভাবনের কথা জানায়। আমেরিকা, ইউরোপসহ অনেক দেশেই নাগরিকরা নিতে শুরু করেছেন করোনার ভ্যাকসিন।

করোনা ভ্যাকসিনে নজর আছে বাংলাদেশেরও। যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত অক্সফোর্ডের টিকা জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগেই বাংলাদেশে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনাসহ সব বাধা অতিক্রম করে ২০২১ সালে পৃথিবী নতুন প্রাণ পাবে এ প্রত্যাশা সবার।

পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুনকে বরণ করার উৎসবে সারাবিশ্বের একাত্মতা বিশ্ববাসীকে একটু হলেও এক সুতায় গেঁথে রাখে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনকে নিয়ে এগিয়ে চলার আনন্দময় ও উন্নত জীবনের গল্পে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। নতুন বছরের কাছে প্রত্যাশা ভালো থাকার, সুন্দর থাকার। দেশটা হোক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা, নৃশংসতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত। সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ, শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকুক স্বপ্নরা। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত