সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ জানুয়ারি, ২০২১ ০২:১৪

করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করব: মামুনুল

ধর্মীয় আলোচনায় এসে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি, তাদেরকে তুই তুকারি করায় তীব্র সমালোচনার মধ্যে লাইভে এসে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বলেছেন, ‘তার স্লিপ অব টাং’ হয়েছে।

মামুনুল আগের বক্তব্যর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লাইভে এসে ২৩ মিনিট বক্তব্য রাখেন। বলেছেন, তার কথা শুনে যদি কোনো চিকিৎসক মনে করেন তার আগের বক্তব্য ভুল ছিল, তাহলে তিনি করজোড়ে ক্ষমা চাইবেন।

দুটি ভিডিওই মামুনুলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আছে।

মামুনুল সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে উত্তেজক বক্তব্য দিয়ে। তিনি বলেছিলেন ধোলাইপাড়ে এই ভাস্কর্য নির্মাণ হলে ঢাকায় আরেকটি শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।

অবশ্য এই বক্তব্য দিয়ে মামুনুল প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন এবং এখন তিনি বলছেন, সরকারের সঙ্গে যুদ্ধে যাবেন না।

দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে মামুনুল বলেন, ‘চিকিৎসক ভাই ও বোনেরা এবং অধ্যয়নরত ভাই ও বোনেরা তারা যদি আমার এই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বক্তব্য শোনেন, আর সেখানে যদি আমি ভুল কিছু বলি, তাহলে অবশ্যই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। আমি যদি ভুল কিছু বলে থাকি, বা আমার দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন, তবে আমি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং আমি আমার সেই বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার করব।’

সম্প্রতি একটি ধর্মীয় আলোচনায় মামুনুলের অযাচিতভাবে চিকিৎসকদের আক্রমণ করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। হেফাজতের নেতা জানান, ওই ভিডিওটি দুই থেকে তিন বছর আগে করা। আর যেহেতু সেটি ভাইরাল হয়েছে, তাই তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আগের ভিডিওতে দেখা যায় মামুনুল চিকিৎসকদের তুই তুকারি করে বলছেন, কওমি মাদ্রাসার ছেলেরা যদি মানুষের দয়ার টাকায় পড়াশোনা করে, তাহলে চিকিৎসকরা কী? সরকারি মেডিকেল কলেজে তারাও বিনা পয়সায় পড়াশোনা করে ঔদ্ধত্ব দেখায় বলে অভিযোগ তার।

তুই তোকারির প্রসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ না করে মামুনুল তোলেন পাল্টা অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘আমার ভাষা ব্যবহারে তুই তুকারি এসেছে। আমার এই তুই তুকারিকে জেনারেলভাবে সকল ডাক্তারদের প্রতি আরোপ করে ডাক্তারদের একটা সিমপ্যাথি ও আমার বিরুদ্ধে ডাক্তার সমাজকে উসকে দেয়ার একটা অশুভ তৎপরতা পরিচালনা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার জায়গা ক্লিয়ার করছি, আমার বক্তব্য মেডিক্যালের ছাত্রদের নিয়ে ছিল না, শুধু কেমবমাত্র ওই শ্রেণির প্রতি ছিলো যারা জনগণের টাক্সে পড়াশোনা করে আবার কওমি মাদ্রাসার ছেলেদের নিয়ে অবজ্ঞা করবে, আমি তাদের বিরুদ্ধে মূলত তুই তুকারি করেছি।’

হেফাজত নেতার দাবি, তিনি একটি প্রশ্নের জবাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। কওমি মাদ্রাসার ছেলেদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছিল এই বলে যে তারা যাকাত ও ফেতরার অর্থ দিয়ে পড়াশোনা করে। সেখানে অনেকেই বলে থাকে, ‘তোরা যাকাত খাস, ফেতরা খাস’। এই ধরনের কথা গুলোর মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার ছেলেদের উপহাস করা হতো।

মামুনুল বলেন, ‘আলোচনার একটা অংশে এটা বলেছিলাম যে, অন্যের টাকা নিয়ে পড়াশোনা করা কি শুধুমাত্র কওমি মাদ্রাসাতেই সীমাবদ্ধ? শুধুমাত্র তারাই কি অন্যের দানে পড়াশোনা করে? আমার দেশের প্রেক্ষাপটে আরও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা পড়াশোনা করছে তারাও অন্যের অর্থে পড়াশোনা করার প্রচলন রয়েছে।’

হেফাজত নেতা বলেন, তার আলোচনার একটি আলোচলার অংশ ছিল মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে। মেডিক্যালের পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল। প্রাইভেটে কী পরিমাণ খরচ নেয়া হয় তা অজানা নয়। সেখানে পাবলিক মেডিক্যাল কলেজে নামমাত্র খরচ নেয়া হয়।

মামুনুল বলেন, এই খরচ যোগানো হয় সরকারি বরাদ্দ থেকে। আর সেখানে ধনী-গরিব, দিনমজুর, রিক্সাচালক সবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান আছে। কেউ ইনকাম ট্যাক্স দেয়, ট্যাক্স না দিলেও যে ভোগ্যপণ্য বাজার থেকে ক্রয় করে সেখান থেকে নেয়া হয়। সেটা সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমি বলেছিলাম একজন ডাক্তার তৈরি করতে সরকারের ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। এই টাকাটা কে যোগাল? এখানে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ থাকে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও সাক্ষী মানেন হেফাজত নেতা। জাতির পিতার একটি বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, তোমার মাইনে কে যোগায়? তোমার মাইনে যোগায় ওই কৃষক, ওই শ্রমিক। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে তা যোগায়। সেই কথায় আমরা আবার পুনরাবৃত্তি করেছিলাম।’

মামুনুল বলেন, ‘দেশের মানুষের টাকা দিয়ে একটা ছেলে দেশের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় হবে এটা তার কাছে অপমানের কোনো বিষয় না। তাহলে কওমি মাদ্রাসার ছেলেগুলো সরকার থেকে না আল্লাহ কর্তৃক যে ট্যাক্স যাকাত ফেতরার মাধ্যমে পড়াশোনা করে।

‘তাহলে আমার মূল লজিক ছিল, দেশের মানুষের টাকা দিয়ে পড়াশোনা করা যদি অপমানের না হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করলে তা অপমানের বিষয় কেন? আমি ওই আলোচলনায় এটাই বলেছি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত