সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ নভেম্বর, ২০১৫ ২৩:২৯

হরতাল: ৭ দশকে দুই হাজার, নিহত সাড়ে ৬শ’

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গত সাত দশকে দুই হাজার ২২৪ বার হরতাল ডাকা হয়েছে। এসব হরতাল কেড়ে নিয়েছে ৬৫৫ জন মানুষের প্রাণ। এছাড়া হরতালে আহত হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার এবং গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার মানুষ।

শনিবার (৭ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘সাত দশকের হরতাল ও বাংলাদেশের রাজনীতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সংঘটিত হরতাল সম্পর্কে তার নিজস্ব বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন।

অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, সাত দশকে মোট ৬০৫টি জাতীয় হরতাল হয়েছে। স্থানীয় ও আঞ্চলিক হরতাল হয়েছে এক হাজার ৬১৯টি। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় জাতীয় পর্যায়ে পূর্ণদিবস হরতাল ছিল ৭৬টি এবং অর্ধদিবস হরতাল ছিল ১৫টি। একই সময়ে স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে পূর্ণদিবস হরতাল ছিল ৯৬টি এবং অর্ধদিবস হরতাল ছিল ১১৭টি।

এতে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে হরতাল বেড়েছে। ১৯৮২ সালের মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আট বছরে হরতাল হয়েছে ৭২ দিন। তার পরের ১৫ বছরে হরতাল হয়েছে ৪৬৩ দিন।

আর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী স্বাধীকার আন্দোলনের নানা পর্যায় পেরিয়ে এলেও পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরে হরতাল হয়েছিল মাত্র ৪৭ দিন।

হরতাল দেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী ৪৭৩টি হরতালে জড়িত, বিএনপি জড়িত ৪২১টিতে এবং আওয়ামী লীগ করেছে ১৭০টি হরতাল।

অজয় দাশগুপ্ত বলেন, “বাংলাদেশ বা পাকিস্তান আমল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি হরতালে জড়িত দল জামায়াতে ইসলামী।”

একসময় হরতাল গণদাবি আদায়ের প্রধান অস্ত্র হলেও বর্তমান সময়ে এসে সবচেয়ে সহজ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

৭০ বছরে হরতাল ও নানা দিক নিয়ে গবেষণার আলোকে তিনি এ মতে পৌঁছেছেন বলে জানান চার দশকের এই সাংবাদিক।

তিনি বলেন, “গত ৭০ বছরের ইতিহাস দেখে মনে হয়েছে, হরতাল এখন সহজতম রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়েছে।”

তার মতে, জনসভা বা অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলিতে কর্মী বা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে ‘গায়েবি ঘোষণাতেই’ হরতাল হয়ে যাচ্ছে।

অজয় দাশগুপ্ত জানান, ১৫ বছর কাজ করে ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত যেসব হরতাল হয়েছে তার নানা দিক পর্যালোচনা করেছেন।

গবেষণাকর্মটি পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশের পরিকল্পনা জানান তিনি।

১৯১৯ সালে ব্রিটিশ ভারতে মোহনদাশ করমচাঁদ গান্ধীর ডাকা অহিংস আন্দোলন কিভাবে সহিংস হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে এসে তা কিভাবে নাশকতায় পরিণত হয়েছে তাও দেখিয়েছেন অজয় দাশগুপ্ত।

‘ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর দিক থেকেই’ হরতালে সহিংসতা এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্য রাখেন ঢাবি উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাঈদ, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।

সম্পাদক গোলাম সরওয়ার বলেন, হরতালকে না বলতে হবে। এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হতে পারে না।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, হরতাল দিয়েই আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। এটিই বাস্তবতা। আগে হরতাল হলে মানুষ ঘর থেকে বের হতো না। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ হরতালকে উপেক্ষা করে ঘর ছেড়ে কাজে মন দিচ্ছে বেশি।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, “আগে হরতালের সংখ্যা ছিল কম, জনসম্পৃক্ততা ছিল বেশি। এখন হরতাল বেশি, জনসম্পৃক্ততা কম।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত