সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ মে, ২০২১ ১৯:০১

প্রেমে বাধা দেয়ায় হত্যা: মামলায় মিতুর বাবা

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার অভিযোগে করা নতুন মামলায় বলা হয়েছে, এক উন্নয়নকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আর মিতু বাধা দিলে তৈরি হয় অশান্তি। এ কারণেই খুন করা হয় মিতুকে।

হত্যার প্রায় পাঁচ বছর পর এই মামলা করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন, যিনি এর আগে বাবুলের পক্ষে কথা বলেছেন। তার জামাতাকে নির্দোষ আখ্যা দিয়ে ছোট মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করেছেন।

বুধবার সকালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় এই মামলা করা হয়।

২০১৬ সালের ৫ জুন পাঁচলাইশের জিইসি মোড়ে গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। সে সময় এটি জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ বলে ধারণা করা হয়।

তবে পরে এই ঘটনায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে, আর একপর্যায়ে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করার খবর আসে গণমাধ্যমে।

বাবুলের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগের মধ্যে বাবুল ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাাতলে চাকরি নেন। এক পর্যায়ে তুমুল আলোচিত ঘটনাটি ভুলে যায় মানুষ।

হঠাৎ করেই মঙ্গলবার বাবুলকে চট্টগ্রাম ডেকে নেয়ার পর আবার চাঙ্গা হয় বিষয়টি। পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঢাকা থেকে ডেকে নেয়া হয় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনকে, যিনি নিজেও এককালে পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন।

মোশাররফ হোসেন তার করা মামলায় মেয়ে হত্যার বিবরণ দিয়ে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে তারা কেউ সেখানে যেতে পারেননি; আর বাবুল আক্তার নিজেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে মামলা করেন।

এই হত্যায় নেতৃত্ব দেয়া কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ছিলেন বাবুলের বিশ্বস্ত ও পারিবারিকভাবে পরিচিত সোর্স। তাকে শনাক্ত না করে এই হত্যা জঙ্গিদের কাজ বলে বর্ণনা করে সেটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করা হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন মোশাররফ।

বলা হয়, বাবুল আক্তারসহ হত্যায় সক্রিয়দের বিরুদ্ধে প্রমাণ পান তদন্ত কর্মকর্তা।

মামলায় বলা হয়, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে এক এনজিও কর্মকর্তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবুল।

মোশাররফ লেখেন, ‘প্রতিবাদ করায় আমার মেয়ে মিতুকে বিভিন্ন সময়ে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।’

২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাবুল সুদান মিশনে কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি তার মোবাইল ফোনের সিমটি চট্টগ্রামের বাসায় রেখে গেলে সেই নারী বিভিন্ন সময় ২৯টি ম্যাসেজ দেন। এই ম্যাসেজগুলো মিতু একটি খাতায় নিজ হাতে লিখে রাখেন।

হত্যার কয়েক মাস আগে বাবুল আক্তার চীনে প্রশিক্ষণে গেলে মিতু সেই মেয়ের উপহার দেয়া ‘তালিবান ও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট’ নামে দুটি বই খুঁজে পান বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, তৃতীয় পাতায় গায়ত্রীর নিজ হাতে ইংরেজিতে লেখা আছে, ‘‘05/10/13, cox’s Bazer Bangladesh, Hope the memory of me offering you this personal gist, shall eternalize our wonderful bond, love you, gaitree’’

একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা ২৭৬ এর পরের পাতায় বাবুল আক্তারের নিজের হাতে সেই নারীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা লেখা আছে।

বাবুল লেখেন, ‘First meet 11 sep, 2013, First PR in Cox 07 Oct 2013, G Birthday, 10 Oct, First Kissed 05 Oct 2013, First beach walk 8th Oct 2013, 11, 2013, marmaid with family, 12 Oct 2013, Tamlie Ramu, Prayed Together, 13th Oct 2013 Ramu Rubber Garden Chakaraia night beach walk.

বইয়ের প্রথম দিকের দ্বিতীয় পাতায় সেই নারী ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘05-10-2013, with my sincere love’.

মোশাররফ লেখেন, ‘উল্লেখিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চরমে পৌঁছে। ১ নং বিবাদীর এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমার মেয়ে মাহমুদা খানম মিতু প্রতিবাদ করলে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্য়াতন করে।’

এই নির্যাতনের কথা মিতু তার বাবা মাকে জানান। মোশাররফ লেখেন, তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন যে, মিতু হত্যায় বাবুল জড়িত থাকার কথা জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এই অবস্থায় ন্যায়বিচারের জন্য তিনি এই মামলা করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত