সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ মে, ২০২১ ০০:২৩

হেনস্তার পর চুরির মামলা, সাংবাদিক রোজিনা গ্রেপ্তার

শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

পাঁচ ঘন্টা আটকে রেখে হেনস্তার পর দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগ এনে মামলা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সোমবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় বলে নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (রমনা জোন) হারুন-অর-রশীদ।

মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী শাহবাগ থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয় সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এর খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যেসব নথিপত্রের ছবি তুলেছিল, তার মধ্যে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

বলা হয়, ‘এ সকল তথ্য জনসম্মুখে প্রচার চলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

অভিযোগে বলা হয়, বিকেল দুইটা ৫৫ মিনিটে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে ঢুকেন। তখন একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। সে সময় রোজিনা ইসলাম দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানোর পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন বলেও অভিযোগে বলা হয়।

সে সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে রোজিনাকে বাধা দেন। আর নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতে তিনি ওই কক্ষে কী করছেন, তা জানতে চান। এ সময় রোজিনা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।

পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভীন, সিনিয়র সহকারী সচিব শরিমীন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম, অফিস সহায়ক মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অনান্য কর্মকর্তা ও স্টাফগণ ঘটনাস্থলে আসেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে রোজিনার কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র এবং নথির ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।


এদিকে, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা এবং পরে শাহবাগ থানায় হস্তান্তরের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা।

সোমবার রাতে শাহবাগ থানার ভেতরে অবস্থান করে সাংবাদিকেরা বিক্ষোভ করেন। তারা রোজিনা ইসলামকে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

সাংবাদিকেরা এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবকে ধিক্কার জানান। সাংবাদিকেরা মন্ত্রী–সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন।
রাত সাড়ে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে বেলা তিনটার দিকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে একটি কক্ষে আটক করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ রোজিনা ইসলামকে ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসে।

সচিবালয়ে অবস্থারত অবস্থায় সাংবাদিক রোজিনা এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা প্রথমে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ দেখান। এরপর তারা সেখান থেকে শাহবাগ থানার চলে আসেন। সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ-স্লোগান দেন তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত